ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ১১ ১৪৩১

চা উৎপাদনে বাংলাদেশের রেকর্ড

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:০৬ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৯:০৮ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং চা শিল্পে সরকারের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধনের ফলে গত বছরের চেয়ে এবার দেশে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে রেকর্ড পরিমানে। শুধু দেশে নয় বিগত জুলাই মাস পর্যন্ত বিশ্বের চা উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে সবার উপরে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড.কে এম রফিকুল হক জানান,গত বছরের চেয়ে চলমান বছরের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে ২৮.৫৪% বেশি চা উৎপাদন হয়েছে।আর নিকটতম অবস্থানে রয়েছে ভারত ৫.৭৬% আর এ উৎপাদনের ধারা অভ্যাহত থাকলে এবছরের লক্ষমাত্রা ৯০ মিলিয়ন কেজি ছাড়িয়ে যাবে বলে তাঁর ধারণা।

তিনি জানান, এবছর বাংলাদেশের এই রেকর্ড উৎপাদন বিশ্বের চা উৎপাদনকারী দেশগুলোকে তাক লাগিয়েছে।এবছর এই সময়ে আনুপাতিক হারে বিশ্বের অনান্য রাষ্ট্রে চায়ের উৎপাদন কমেছে।কিন্তু বাংলাদেশে এর উৎপাদন আশার সঞ্চার জাগিয়েছে। অধিক চা উৎপাদনকারী দেশ শ্রীলংকা জুলাই পর্যন্ত গত বছরের তুলনায় বেড়েছে মাত্র ০.৯৫%, কেনিয়া  কমেছে ৮.৩৮%।

সিলেটে বিভাগের চা ব্যবসায়ী এম আর খান, কেরামত নগর ও নন্দ রাণী চা বাগানের মালিক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, মৌসুমের শুরু থেকে চায়ের উপযোগী বৃষ্টিপাত, প্রয়োজনীয় সূর্যের আলো এবং অনুকূলে আবহাওয়া ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের ফলে চা এর উৎপাদন বেড়েছে।এ বছর উৎপাদনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। 

বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট অঞ্চলের ব্রান্স চেয়ারম্যান জি এম শিবলী জানান, এসব চায়ের দুই তৃতীয়াংশ উৎপাদন হয় মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে অনুকুল আবহাওয়া না থাকাসহ নানা জঠিলতায় বিগত দুই বছর ধরে চায়ের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিলো।পুরণ হয়নি লক্ষমাত্রাও।পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও চা বোর্ডের নানামুখি পদক্ষেপের কারণে চলমান বছরে উৎপাদন বাড়তে থাকে।অনুকুল আবহাওয়া বজায় থাকলে গত বছরের উৎপাদন ৮২.১৩ মিলিয়ন কেজি ছাড়িয়ে এ বছর ডিসেম্বরে ৯০ মিলিয়ন কেজির লক্ষমাত্রাও ক্রস করবে।

চা বোর্ডের শ্রীমঙ্গলস্থ প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. কে এম রফিকুল হক জানান, গতবছরের  তুলনায় আগষ্ট পর্যন্ত ২৩ ভাগ চা বেশি উৎপাদন হয়েছে। তবে সেপ্টেম্বর এর পর তা কমে আসবে।   ইতিমধ্যে সারা বিশ্বের চায়ের জন্য সুখ্যাত দেশগুলোকে পিছনে ফেলে এবছর জুলাই পর্যন্ত গত বছরের চেয়ে ২৮.৫৪% বেশি উৎপাদন হয়েছে।যার ধারে কাছেও নেই বিশ্বের চায়ের উৎপাদন।যার ধারাবাহিকতা অভ্যাহত থাকলে এ বছর রেকর্ড পরিমান উৎপাদন হবে যা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পুরণ করে রফতানি ও করা যাবে।তবে এবছর উৎপাদনের ধারা অভ্যাহত থাকার পেছনে অনুকুল আবহাওয়ার পাশাপাশি প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট কর্তৃক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, প্রত্যেক চা বাগানের পরিত্যাক্ত জমিকে চা চাষের আওয়াতায় আনয়ন, সমতলে পঞ্চগড় ও লালমনিরহাটে ক্ষুদ্রায়তন চা চাষ বাড়ানো, চা গবেষনা কেন্দ্র কৃর্তক চায়ের রোগবালাই পোকামাকড় দমনে সঠিক পরামশ্য প্রদানসহ প্রভৃতি কর্মকান্ড মূল ভুমিকা পালন করেছে।
এ ব্যপারে বাংলাদেশ চা গবেষনা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোহাম্মদ  আলী জানান, শুধু উৎপাদন বৃদ্ধি নয় এবছর চায়ের গুনগত মানও ভালো হচ্ছে। চলতি বছরের আগষ্ট পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ৫৩ মিলিয়ন কেজি আর গত বছর এই সময়ে ছিলো ৪২ মিলিয়ন কেজি।

বাংলাদেশ টি টেডাস এন্ড প্লান্টারস অ্যাসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক জহর তরফদার জানান, উৎপাদিত এ চায়ের নিলাম এখণ সরাসরি শ্রীমঙ্গলে হওয়াতে চায়ের গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে না। আর গুনগত মান ঠিক রেখে উন্নয়নে ধারা অভ্যাহত রাখা গেলে ভবিষতে বাংলাদেশে চায়ে আসবে স্বর্ণযুগ।

এদিকে চায়ের উৎপাদন ভালো হওয়ায় খুশি চা শ্রমিকরাও। শ্রমিকরা জানান, তাদের নিরিখ/ হাজরি ২৪ কেজি। কিন্তু তারা পাতা তুলছেন ৩৫ থেকে ৭০/৮০ কেজি পর্যন্ত। এতে তারা অতিরিক্ত আয় করছেন।

কেআই/