ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

ভাড়ার টাকা থেকে ঘুষের পরিমাণই বেশি!

নাজমুল হক রাইয়ান

প্রকাশিত : ১০:৪২ এএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১০:৪৪ এএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বুধবার

ঢাকার বিভিন্ন মোড়ে বিশেষ করে সিগনালে, রাস্তার পাশে, কিছু ভাইটাল পয়েন্টে দেখা যায় রিকশাচালকদের সঙ্গে ট্রাফিক বা আনসারের সঙ্গে হট্টগোল। দেখা যায়, রিকশা আছে কিন্তু সিট নেই অথবা রাস্তার উপর চিৎ করে ফেলে রাখা হয়েছে জীবিকার একমাত্র সম্বল দুই প্যাডেলের রিকশাটি।

তেমনই এক পরিস্থিতির শিকার জসিম মিয়া। একজন রিকশাচালক। ঢাকায় রিকশা চালান তিনি। রংপুরের অজপাড়াগাঁ থেকে জীবিকার তাগিদেই ঢাকায় ছুটে আসেন তিনি। থাকেন রায়েরবাজারের এক বস্তিতে। 

বাড়িতে তার রুগ্ন মা ও স্ত্রীসহ দুই মেয়ে এক ছেলে রয়েছে। মায়ের ওষুধের টাকা ও ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। 

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগনাল মোড়ে এক বুক হতাশা নিয়ে বসে আছেন জসিম মিয়া। পাশেই সিট বিহীন চিৎ করে রাখা তার রিকশা। চোখে মুখে কান্না কান্না ভাব। কথা হয় তার সঙ্গে। 

জসিম মিয়া বলেন, ‘মাঝেমধ্যে ভাড়ার টাকা থেকে ঘুষের টাকার পরিমাণ বেশি হয়ে যায়’। 

কেন তার রিকশাটির এমন অবস্থা জানতে চাইলে জসিম মিয়া জানান, এখানে আসার পরই তার রিকশার সিট নিয়ে যায়। কিন্তু এখানে তো আরও রিকশা রয়েছে৷ তাদেরটা নেয় না। আমারটাসহ আরও কয়েকজনেরটা নিয়েছে। 

তিনি বলেন, এখন যদি কিছু টাকা মুঠে ধরিয়ে দেই তাহলেই ছেড়ে দেবে। 

কি পরিমাণ টাকা দিতে হয় জানতে চাইলে জসিম মিয়া বলেন, মাঝেমধ্যে যা ভাড়া পায় তাই দেয়া লাগে। না হয় এক বেলা বসে থাকা লাগে এভাবেই। দশ টাকা দিলে পরে রাস্তা পার হতে দেয় আর না দিলে দেয় না। এভাবেই প্রতিটা মোড়ে মোড়ে দশ টাকা পাঁচ টাকা এমন কি দুই টাকাও ঘুষ খায় বলে অভিযোগ করেন জসিম মিয়া। 

তিনি আক্ষেপ নিয়ে আরও বলেন, দিন শেষে রিকশার জমা দেওয়ার পরে কিছুই থাকে না আর পকেটে।

এমন দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায় সাইন্সল্যাব, ল্যাবএইডের পেছনে, ধানমণ্ডি ৩২ নাম্বার, পান্থপথ সিগনালসহ আরও বিভিন্ন স্থানে। 

সরেজমিনে ঘুরে আনসারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রিকশাচালকরা রাস্তা ব্লক করে রাখে বলেই তাদের এই শাস্তি দেন কর্মরত সার্জেন্ট। ঘুষ নেয়ার বিষয়টি পুরোপুরিভাবে অস্বীকার করেছেন তারা। 

এ বিষয়ে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব রিকশা খুব বেশি হলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট আটকে রাখা হয়। কারণ রাস্তার মোড় অথবা গলির সামনে রিকশা দাঁড়িয়ে থাকলে অন্য গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তাই এই ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।  এতে করে অন্য রিকশা চালকরা ভয়ে আর রাস্তা ব্লক করে রাখে না।