পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি আতঙ্ক
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:০৬ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার
গত ৩১ আগস্ট আসামে ১৯ লাখের বেশি মানুষ তাদের নাগরিকত্ব হারিয়েছেন। যাদের প্রায় ১২ লাখই হিন্দু জনগোষ্ঠী। আসামের এসব মানুষ যখন নিজেদের নাগরিকত্ব ও ভূখণ্ড হারানোর ভয়ে মূহ্যমান প্রায়, ঠিক তার সপ্তাহ খানেকের মাথায় ভারতের ক্ষমতাসীন মোদি সরকার পশ্চিমবঙ্গে এনআরসির (জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা) ঘোষণা দেয়।
এরপর থেকেই রাজ্যটির লাখ লাখ মানুষ নাগরিকত্ব হারানোর আতঙ্কে ভুগতে থাকেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি পার্টির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতাদের এনআরসি নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য। কেউবা ঘোষণা দিচ্ছেন এনআরসিতে আসামে ১৯ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব হারিয়েছে, এ রাজ্যে হারাবে ২ কোটি। যাদের অধিকাংশই নাকি বাংলাদেশি।
আবার অনেকে ঘোষণা দিচ্ছেন, এনআরসির প্রাথমিক ধাপে বাদ পড়াদের তালিকায় হিন্দুদের নাম এলেও, তারা নাগরিকত্ব ফিরে পাবেন। আর মুসলিমরা হবেন দেশ ছাড়া। ফলে, পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা ভারতজুড়ে এখন এনআরসি আতঙ্ক বিরাজ করছে, রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে চরম ভয়।
নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণে একেকজন ছুটছেন রাজ্যের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত। নতুন করে নথিপত্র সংগ্রহ ও যা আছে তা বৈধ কিনা তা খতিয়ে দেখছেন অনেকেই। শুরুতে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যে আতঙ্ক শুরু হয়েছিল, তা এখন কোলকাতা শহরে এসে পৌঁছেছে।
চলতি মাসেই এ পর্যন্ত নাগরিকত্ব হারানোর আতঙ্কে রাজ্যটিতে অন্তত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সময় যত গড়াচ্ছে সে ভয় আরো বেশি দানা বাঁধছে সবার মনে। এমন পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়তে হয়নি ভারতীয়দের।
এদিকে, রাজ্যে এনআরসি নিয়ে ক্ষমসীন বিজেপি ও তৃণমূলের মাঝে চলছে তুমুল বাকবিতণ্ডা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিজেপির এমন বাগযুদ্ধের মধ্যেই মানুষ চাইছেন নিজের নথিপত্র ঠিক করে রাখতে। আর যাদের সেইভাবে নাগরিকত্ব বিষয়ে বৈধ নথিপত্র এখনও নেই, তারা চাইছেন তা সংগ্রহ করতে।
ফলে নতুন নথিপত্র সংগ্রহ করতে বা পুরানোগুলির ভুল সংশোধন করতে কোলকাতা পৌর কর্পোরেশনে ছুটে আসছেন অসংখ্য মানুষ। মুন্সি মুসারাফ হোসেন ও তার স্ত্রী রেশমা বেগম মুর্শিদাবাদ জেলার সালার থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরত্ব পেরিয়ে কলকাতা পৌর কর্পোরেশনে ছুটে গিয়েছিলেন। তাদের কলেজে-পড়ুয়া দুই সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ সংস্কার করতে। কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করা, দুজনেরই এখনও পর্যন্ত জন্মের প্রমাণপত্র হিসেবে হাসপাতালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেটই ব্যবহার করা হচ্ছিল। এনআরসির আতঙ্কে নতুন করে জন্ম নিবন্ধন সংস্কার করতে চাইছেন তারা।
একইভাবে এনআরসি ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে আরো অনেককেই। দুই জননী সাবাহত পারভীন নিজের বাচ্চাদের নতুন করে জন্মের সনদ পেতে কোলকাতা পৌর কর্পোরেশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। এনআরসি আতঙ্কে তিনি তার বাচ্চাদের আগের জন্ম সনদপত্র খুঁজে না পাওয়ায়, নতুন করে জন্ম সনদ পেতে হাজির হন পৌর কর্পোরেশনে।
এদিকে, এনআরসির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই কঠোর অবস্থানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি নেতাদের একেক হুমকি মোকাবেলায় নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে নেমেছেন নিজেই। সাক্ষাৎ করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে। যিনি এনআরসি নিয়ে সবচেয়ে খড়গ রয়েছেন।
রাজ্যের লোকদের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, আপনাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই, জীবন থাকতে আমি বাংলায় (পশ্চিমবঙ্গ) এনআরসি হতে দেব না।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ওই আশ্বাসের ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘বাংলায় একশো শতাংশ এনআরসি চালু হবে। বিজেপি এখানে ক্ষমতায় আসার পরে অনুপ্রবেশকারীদের এ দেশে থাকতে দেওয়া হবে না। তবে হ্যাঁ, হিন্দুরা দেশেই থাকবেন। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল খুব তাড়াতাড়ি আসবে বলেও জানান বিজেপি নেতা।’
রাজ্যের রাজনীতিকদের এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে বেশ বিপাকেই পড়েছেন রাজ্যটির সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে মুসলিমরা। ফলে, সময় যত গড়াচ্ছে সে আতঙ্ক আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যের অন্যান্য জেলায়।
আনন্দবাজার ও এনডিটিভি অবলম্বনে
আই/