ঘোষিত রোয়েদাদ সংশোধনের দাবি সাংবাদিকদের
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৫৮ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শুক্রবার
সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণা করা হলেও তা সাংবাদিক ও কর্মচারিদের স্বার্থের অনুকুলে নয় বলে ক্ষোভ জানিয়ে অবিলম্বে তা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সাংবাদিক স্বার্থ সুরক্ষা পরিষদ আয়োজিত 'গণমাধ্যমের বিদ্যমান সংকট : সাংবাদিকদের স্বার্থ সুরক্ষা' বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা সরকারের কাছে এ দাবি জানান। বক্তারা আরও বলেছেন, নতুন ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদে সংবাদমাধ্যম মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের পাশাপশি তাদেরকে চাকুরিচ্যুতির প্রতি উস্কানি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদের সভাপতিত্বে এই গোল টেবিল আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজান উল আলম, বিএফইউজে মহাসচিব শাবান মাহমুদ, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ওমর ফারুক, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভুঁইয়া, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, বিটিভির উপ মহাপরিচালক (বার্তা) অনুপ খাস্তগীর, বিএফইউজের নির্বাহী কমিটির সদস্য খায়রুজ্জামান কামাল, ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কাজী রফিক, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)-এর ট্রাস্টি রাশেদ আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত, সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাকারিয়া কাজল, ডিআরইউর সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, লেবার রাইটস সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি কাজী আবদুল হান্নান, বাংলাদেশ সাংবাদিক অধিকার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক আমান উদ দ্দৌলা, বিএফইউজের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব পুলক ঘটক, গণমাধ্যম গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক খায়রুল আলম প্রমুখ।
আলোচনায় বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকরা কি চাইছেন, তা ইউনিয়নের নেতাদের উপলব্দি করতে হবে। সাধারণ সদস্যদের প্রত্যাশা সংরক্ষণ না করা গেলে জবাবদিহি করতে হবে। ইউনিয়ন এসব আলোচনা সভার আয়োজন না করলেও উদ্যোগ কিন্তু বসে নেই। অনেক ক্ষোভের কথা এসেছে আলোচনায়। তিনি মনে করেন, ওয়েজ বোর্ডের বিদ্যমান অসঙ্গতি দুর করতে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত গণমাধ্যম কর্মী আইনে ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে স্বীকৃত দেওয়া হবে এবং সাংবাদিকদের স্বার্থ সংরক্ষণেও একটি আইনী কাঠামো হবে। সাংবাদিক কল্যান ট্রাস্টকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে হবে। সত্যিকার সাংবাদিকরা যেন সাহায্য পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সামনের দিনগুলোতে অনেক আন্দোলন সংগ্রামের প্রয়োজন আছে এবং সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। সাংবাদিকদের ও কর্মীদের বাদ দিয়ে সংবাদপত্র বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিকাশ সম্ভব নয়। অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে অসন্তোষ সৃষ্টি হবে এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অসন্তোষের ছাপ পড়বে। এ শিল্পে মালিকরা যেন বেতনভাতা দিতে পারেন সরকারকেও সেরকম সরকারি প্রনোদণার ব্যবস্থা করতে হবে। টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের অনেক লাইসেন্স দেওয়া যেমন আনন্দের বিষয়, তেমনি বেতন-ভাতা নিয়ে সংবাদ কর্মিদের মধ্যে যদি হতাশার সৃষ্টি হয় তাহলে শিল্পে অস্থিরতা বিরাজ করবে।
সাংবাদিক নেতা আব্দুল জলিল ভূইয়া বলেন, বর্তমানে যে সংকট এ ধরণের সংকট আর দেখি নাই। সাংবাদিকতায় যে ধার ছিল সেই ধার আর নেই। নতজানু সাংবাদিকতা হচ্ছে। সব টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমগুলোর এই অবস্থা। জলিল ভূইয়া বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজেকে সাংবাদিক দাবি করার পরে নতুন ওয়েজবোর্ড দিয়ে সাংবাদিকদের যে অধিকার হরণ করলেন, এ বিষয়ে ইউনিয়নের প্রতিবাদ করা উচিত ছিল।
বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, নতুন মজুরী কাঠামোর সুপারিশে গ্র্যাচুইটি দুইটির পরিবের্তে একটি করার মাধ্যমে চাকরিচ্যুতি আরও সহজ করা হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড ঘোষিত রোয়েদাদ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের এবং আয়কর প্রদানের অনুচ্ছেদ বাতিলের দাবি জানান।
বাংলাদেশ সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্র (বিজেসি) ট্রাস্টি রাশেদ আহমেদ বলেন, টেলিভিশনগুলোর জন্য একটি নিয়ম থাকা প্রয়োজন। অনেক টেলিভিশনে বেতন হয় না, অন্যায়ভাবে চাকুরিচ্যুত করা হচ্ছে। টেলিভিশনের জন্য একটি ওয়েজবোর্ড করার দাবি জানাই, এখনও পর্যন্ত এর ভিত্তি তৈরি হয়নি।
সাংবাদিক অনুপ কুমার খস্তগীর বলেন, বর্তমান সাংবাদিক ইউনিয়ন অথর্ব, যতদিন পর্যন্ত সঠিক নেতৃত্ব না আসবে, ততদিন অধিকার আদায় হবে না। সাংবাদিকদের ইউনিয়নের অধিকার নিয়ে কোন ডিবেট হয় না, পলিসি মেকারদের সাথে আলোচনা হয় না। মাথা উচু করা সাংবাদিকতা না থাকলে দেশ রসাতলে যাবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কাজি রফিক বলেন, তোয়াজ তোষামোদির সীমা ইউনিয়ন নেতারা লংঘন করেছে । তাদের আরো সোচ্চার হতে হবে, নাহলে আপনারা নেতৃত্ব ছেড়ে দেন।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ বলেন, এ আন্দোলনে পূর্ন সমর্থন আছে। নোয়াবরা সাংবাদিকদের স্বার্থ ধ্বংস করতে যে অবস্থান নিয়েছে, তার জোরালো প্রতিবাদ করতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যমের বিদ্যমান সংকটে পুরো সাংবাদিক কমিউনিটি জড়িত। নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষিত রোয়েদাদ সাংঘাতিক রকমের বাজে হয়েছে, সাংবাদিকতা সংকুচিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাষ্ট্র।
আরকে/