ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

আদনান সামির অবাক করা জীবন!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:২০ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০৬:২৫ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার

পিয়ানোতে তুলেছেন সন্তুরের সুর, কিবোর্ডে হয়েছেন দ্রুততম, অসংখ্য জনপ্রিয় সঙ্গীতের জন্য যাঁকে বলা হয় সঙ্গীতের সুলতান। সেই আদনান সামির কথা বললে প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে আসে বিশাল বপুর দেহখানি। এখন কিন্তু সে স্বাভাবিক দেহের অধিকারী। তাঁর এই জীবনে ওজন কমিয়েছেন ১৬৭ কেজি এবং চার চার বার বসেছেন বিয়ের পিঁড়িতে।

জনপ্রিয় শিল্পী আদনান সামির জীবনের খুঁটিনাটি পাঠকদের কাছে তুলে ধরতেই এই প্রতিবেদন। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট আদনানের জন্ম লন্ডনে। বাবা আরশাদ সামি পাকিস্তানি এয়ারফোর্সের পাইলট এবং মা নৌরিন জম্মু কাশ্মীরের মেয়ে। আদনানের বড় হওয়া এবং পড়াশোনা ইংল্যান্ডে। 
বাবা আরশাদ সামি খান এয়ারফোর্সের চাকরি ছাড়ার পর কূটনীতিক হন। চোদ্দটি দেশে তিনি পাকিস্তানের দূত হয়ে কাজ করেছেন। আরশাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন আফগানিস্তানের রাজ বংশীয়। আরশাদ খানের দাদা আগা মেহফুজকে হত্যা করা হয় আফগানিস্তানে। তারপর তাঁদের পরিবার পাড়ি দেয় অবিভক্ত ভারতের পেশোয়ারে।

আদনান সামি ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের রাগবি স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন চলে যান লন্ডনের কিংস কলেজে। এরপর লিঙ্কনস ইন থেকে আইনজীবী হিসেবে উত্তীর্ণ হন তিনি। পাঁচ বছর বয়স থেকেই পিয়ানো বাজাতেন। ছুটিতে ভারতে এলে তিনি পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার কাছে সন্তুর বাজানো শিখতেন।

১৯৮৬ সালে আদনান সামির প্রথম গান ‘রান ফর হুজ লাইফ’ইংরেজিতে মুক্তি পায়। মধ্যপ্রাচ্যে তুমুল জনপ্রিয় হয় ওঠে তাঁর গান। ১৯৯৫ সালে তাঁর জীবনের একমাত্র সিনেমা ‘সরগম’। এই ছবিতে তিনি ছিলেন সঙ্গীত পরিচালক এবং অভিনেতা। পাকিস্তানে বেস্ট সেলিং অ্যালবামের মধ্যে অন্যতম ‘সরগম’।

২০০০ সালে আশা ভোঁসলের সঙ্গে আদনান সামির বিখ্যাত অ্যালবাম ‘কভি তো নজর মিলাও’। আদনানে সুরে এই ভিডিও ছিল অত্যন্ত সফল ও জনপ্রিয়। অ্যালবামের সবথেকে বেশি হিট হয়েছিল ‘কভি তো নজর মিলাও’ এবং ‘লিফট করা দে’।

এরপর বলিউডে গান ও অভিনয়- দু’দিকেই সমান সুযোগ আসতে থাকে আদনান সামির কাছে। ‘আজনবি’,‘চোর মচায়ে শোর’, ‘আওয়ারা পাগল দিওয়ানা’, ‘সাথিয়া’, ‘কোই মিল গয়া’, ‘জগার্স পার্ক’, ‘পেজ থ্রি’, ‘গরম মশালা’, ‘খোলসা কা ঘোসলা’, ‘ডার্লিং’, ‘ধামাল’-এর মতো সিনেমায় আদনান সামির গান শ্রোতাদের মনে দাগ কাটে। বলিউডে এখন পর্যন্ত তাঁর শেষ কাজ ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ ছবিতে ২০১৫ সালে।

আদনান সামি পাকিস্তানি অভিনেত্রী জেবা বখতিয়ারকে ১৯৯৩ সালে জীবন সঙ্গী করে নেন। তাঁদের একমাত্র ছেলের নাম আজান সামি খান। এই বিয়ের টিকে ছিল মাত্র তিন বছর। ২০০১ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন দুবাইয়ের ব্যবসায়ী সাবাহ গালাদরিকে। তাঁদের দু’জনেরই এটা দ্বিতীয় বিয়ে। দেড় বছরের মাথায় ভেঙে যায় আদনানের দ্বিতীয় বিয়েও।

২০০৬ সালে এসে তাঁর দেহের ওজন বেড়ে যায় মাত্রাতিরিক্ত। এ বছরের জুন মাসে আদনান সামির ওজন ছিল ২৩০ কেজি। এ সময় চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, এভাবে চলতে থাকলে তাঁর আয়ুষ্কাল হবে মাত্র ৬ মাস। এরপর কঠোর ডায়েটিং ও শরীরচর্চায় তিনি ১৬ মাসে ১৬৭ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলেন! এরপর এই ওজন আর বাড়তে দেননি আদনান সামি।

২০০১ সালে থেকে তিনি ভিজিটর ভিসা নিয়ে ভারতে বসবাস করতে থাকেন। দ্বিতীয় স্ত্রী সাবাহ ২০০৮ সালে মুম্বাই এসে আদনান সামিকে আবার বিয়ে করেন। কিন্তু এবারও দাম্পত্য জীবন দীর্ঘস্থায়ী করতে পারলেন না। এক বছরের মাথায় ভেঙ্গে যায় তাঁদের সম্পর্ক। আট বছর পর ২০১০ সালে চতুর্থ বারের জন্য বিয়ের মঞ্চে বসেন আদনান সামি। এবার তাঁর বিয়ের পাত্রী হলেন রোয়া সামি খান। এই দম্পতির রয়েছে একমাত্র মেয়ে মেদিনা সামি খান।

ভিজিটর ভিসা ছেড়ে ২০১৫ সালে নাগরিকত্বের আবেদন করেন ভারত সরকারের কাছে। তাঁর এই আবেদন মঞ্জুর হয় ২০১৬ সালে। তারপর থেকে নাগরিকত্ব নিয়েই ভারতে বসবাস করে আসছেন আদনান সামি।

এএইচ/