ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

দখলবাজ ইউনুছের অত্যাচারে আতঙ্কে গ্রামবাসী 

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ০৬:৪৪ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার

কুড়িগ্রাম সদরের কাঠালবাড়ী এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ইলিয়াস আলী খন্দকারের ২৫ শতক জমির ফলদ ও বনজ আড়াই শতাধিক বৃক্ষ জোরপূর্বক কেটে নেয় প্রভাবশালী ইউনুছ আলী। নিধনকৃত বৃক্ষের বর্তমান বাজার মূল্য ১০ লক্ষাধিক টাকা। তিনদিন ধরে এ গাছ কর্তনের পর থানা পুলিশকে অবহিত করা হলেও মেলেনি কোন প্রতিকার। 

এ অন্যায় ও অধর্মকে প্রতিহত করতে সালিশ বৈঠক করেন গ্রামবাসী। বৈঠকে অভিযুক্ত ইউনুছ জোরপূর্বক গাছকর্তন, বিবাদীর উপর জুলুম ও মারপিটের কথা স্বীকার করলেও আপোষ-মিমাংসা মানতে অস্বীকার করেন। উল্টো গ্রামের মাতব্বরদেরকে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে দেয়ার হুমকী দেন। 

এদিকে, কুড়িগ্রাম জজ কোর্টের সেরেস্তাদার হওয়ায় পুলিশও ইউনুছকে ভয় পায়। ফলে ঘটনার প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও কোন মামলা রেকর্ড করেনি পুলিশ। নেয়নি কোন আইনি পদক্ষেপ। এখন নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাড়িছাড়া ব্যাংকার ইলিয়াস আলী। আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে গ্রামবাসীও। ২০/২৫ জনের করাতি এবং সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে 

রোববার দুপুরে নিজের জীবনের নিরাপত্তা, জমি উদ্ধার, কর্তনকৃত ১০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের গাছের ক্ষতিপূরণ এবং দখলবাজ, বৃক্ষ খেকো ও সন্ত্রাসী ইউনুছ আলীর বিচারের দাবিতে কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন নির্যাতিত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ইলিয়াস আলী খন্দকার। 

লিখিত অভিযোগে জানান, তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক সদরঘাট শাখা ঢাকায় উপ-পরিচালক হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। তার বড় ভাই ইউনুছ আলী খন্দকার কুড়িগ্রামের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের সেরেস্তাদার হিসাবে কর্মরত। ইউনুছ আলী বিজ্ঞ আদালত ও বিচারকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অনধিকার প্রবেশ করে আমার জমি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। সেই সঙ্গে এ জমিতে থাকা কাঁঠাল, নিম, মেহগনি, গামার, আম ও শিসব জাতের বড় বড় আড়াই শতাধিক গাছ কেটে নেয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা। 

গত ৩১ আগস্ট প্রথম দফা এবং পরবর্তীতে ১২ সেপ্টেম্বর ও ২০ সেপ্টেম্বর তিন দফায় সন্ত্রাসী কায়দায় গাছগুলো কেটে নেয়। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে আসলেও ইউনুছের ভয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। আমি বিষয়গুলো লিখিতভাবে বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ এবং পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি। থানায় এজাহার দিয়েছি। কিন্তু কোন প্রতিকার মেলেনি এখন পর্যন্ত। আমি এখন জীবনের ঝুঁকিতে রয়েছি। নিরাপত্তাহীনতায় এখন আমি বাড়ি ছাড়া। গ্রামবাসী অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাদেরকেও ভয়ভিতি দেখাচ্ছেন ইউনুছ। 

এসময় তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ব্যাংকার ইলিয়াস আলী আরও জানান, পিতা সৈয়দ আলী খন্দকার মারা গেলে পৈত্রিক সূত্রে দুই ভাই ৫ একর জমির মালিক হন। এরমধ্যে ইলিয়াস আলীর ভাগে পড়ে আড়াই একর জমি। ২০১১ সালে ইউনুছ আলীর ৯৫ শতক জমি ইলিয়াস আলী সাব-কবলায় ক্রয় করেন। কিন্তু সম্প্রতি ইউনুছ আলী এই দলিল বাতিল চেয়ে আদালতে মামলা করেন। (মামলা নম্বর ‘অন্য মোকদ্দমা’ নং-৩৪/১৯)। যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

শিবরাম ফকিরপাড়া এলাকার মহত এবং সালিশ বৈঠকের সভাপতি প্রাক্তন শিক্ষক আহম্মদ আলী জানান, ইউনুছ আলীর বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ সত্য। আমাদের সামনে ইউনুছ আলী তার অপরাধের কথা স্বীকার করে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হন। ৭ সেপ্টেম্বর এ সালিশের ঘটনা ঘটে। কিন্তু সালিশের একদিন পর ইউনুছ আলী তার মত পাল্টিয়ে বলেন ‘আমি গাছ তলার বিচার মানি না। আমি বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করি, জজ, ম্যাজিস্ট্রেটগণ আমার কথামত চলে...’। উল্টো সালিশে অংশগ্রহনকারী গ্রামের মহতদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেল খাটানোর হুমকি দেয়। 

প্রতিবেশী আব্দুল হক ব্যাপারী, আরিফুর রহমান, আউয়াল প্রামাণিক জানান, ইউনুছ আলী আগে থেকেই বেপরোয়া টাইপের। ক্ষমতার দাপট নিয়ে চলে। অসহায় ও নিরীহদের অত্যাচার, নির্যাতন এবং নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। ইলিয়াছ আলীর জমির মূল্যবান গাছ জোরপূর্বক কেটে আত্মসাৎ করেছে সে। এটা একবারেই অধর্ম কাজ।  

এদিকে অভিযুক্ত ইউনুছ আলী তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ। এ ব্যাপারে আদালতে মামলা চলছে। আমার ৯৫ শতক জমি সে রেজিস্ট্রি করে নিলেও মূল্য পরিশোধ করেনি। তাই দলিল বাতিলের মামলা করেছি। আর আমার জমির গাছ আমি কেটেছি।

কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজার রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পুলিশ কয়েক দফা ওই এলাকা পরিদর্শণ করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। ইউনুছ আলী আদালতে চাকুরি করায় তাকে সতর্ক করে দেয়া হয়। আর বিজ্ঞ বিচারক বিষয়টি দু’ভাইয়ের মধ্যে মিমাংসা করে দেয়ার কথা বলায় পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ঘটনাস্থল থেকে গাছ কর্তনকালে আব্দুল বাতেনসহ ৪ জন করাতিকে আটক করা হলেও পরে মুছলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

এনএস/