দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনার তাগিদ বিশ্লেষকদের
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:২৯ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৯:৩৪ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার
বরিশাল বিভাগসহ দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে সুনির্দৃষ্ট ও সমন্বিত পরিকল্পনার তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ঘিরে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও সেখানে অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন হচ্ছে। জমির দাম আকাশছোঁয়া, ফলে সেখানে বিনিয়োগে মানুষের আগ্রহ কম। তাছাড়া জমি কেনাবেচায় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিও রয়েছে। এসব ঠেকানো না গেলে কুয়াকাটাকে ঘিরে যে স্বপ্ন ও সম্ভাবনা, তা কাগজে-কলমেই থেকে যাবে।
৩০ সেপ্টেম্বর (সোমবার) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে বরিশাল বিভাগের সাংবাদিকদের সংগঠন বরিশাল ডিভিশনাল জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (বিডিজেএ)-এর সেমিনারে এসব কথা বলেছেন বিশিষ্টজনরা।
বক্তারা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন চর ও দ্বীপকে কেন্দ্র করে মালদ্বীপের মতো পর্যটনের বিশাল জগত তৈরি করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন রাজধানীর সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ। পদ্মা সেতু চালু হলে সেই সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যাবে। তবে যেকোনো উন্নয়নে পরিবেশ-প্রকৃতির সুরক্ষা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগেরও দাবি জানান তারা। বলেন, পদ্মা সেতু ও পায়রাবন্দরের মতো বৃহৎ প্রকল্পের কারণে নদী-খাল ও সবুজ বনানী পরিবেষ্টিত বরিশাল অঞ্চলের পরিবেশ ও প্রতিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জমি অধিগ্রহণের প্রচলিত পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসারও আহ্বান জানানো হয় সেমিনারে।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহ আলম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইসমাঈল, পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দীন আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য, সাংবাদিক নেতা মামুনুর রশিদ প্রমুখ।
‘পদ্মা সেতু ও পায়রাবন্দর : দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষক তৌহিদুল আলম। জমি অধিগ্রহণে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক দেশেই সরকার জমি অধিগ্রহণ করলেও সেটি একবারে মালিকের কাছ থেকে কিনে না নিয়ে বরং বার্ষিক ভাড়াভিত্তিতে নিয়ে থাকে। এতে একদিকে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প যেমন বাস্তবায়িতে হবে, তেমনি কেউ চিরদিনের মতো জমির মালিকানা হারাবেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সড়কনির্ভর উন্নয়নের প্রথম বলি হয় খাল,নদী ও জলাশয়। সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক ছোট ছোট নদী ও খালের মৃত্যু হয়েছে এ কথা সবার জানা। আবার সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে ছোট নদীর ভিতরেও অনেক পিলার দেয়ায় নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয়, যা ধীরে ধীরে নদীকে মেরে ফেলে। পক্ষান্তরে এটিও ঠিক যে, সহজ ও দ্রুত যোগাযোগের জন্য সড়ক ও রেলপথই বেশি জনপ্রিয়। সুতরাং সড়ক, রেলপথ , সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করতে গিয়ে যাতে নদী-খাল ও জলাশয়ের মৃত্যু না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি বলে আলোচনারা উল্লেখ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন,দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়ন হলে কিছু সমস্যাও হয়ত তৈরী হবে। কিন্তু পদ্মা সেতু ও পায়রা বন্দর হলে তার প্রভাব পুরো দেশের সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। তবে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে কাজের গুনগত মান। দুর্নীতি রোধ করতে হবে।
কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল বলেন, পদ্মা সেতু হলে শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, পুরো দেশের উন্নয়ন হবে। আর পায়রা বন্দর চালু হলে ওই এলাকার চিত্র বদলে যাবে। কিন্তু দুর্নীতি ও পরিকল্পনায় ঘাটতি থাকলে উন্নয়ন সম্ভব নয়।এটিতে নজর দিতে হবে।
বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহ আলম বলেন,২০২১ সালের দিকে পদ্মা সেতু চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে এমন প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, এই সেতু চালু হলে কুয়াকাটায় পর্যটকদের যাতায়াত বেড়ে যাবে। ওই এলাকায় বুলেট ট্রেন চালু হবে। সেক্ষেত্রে কুয়াকাটা ও আশপাশে বেশ কিছু দ্বীপ আছে সেগুলোর সঙ্গে ভালো ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তাহলে পর্যটকরা আকৃষ্ট হবে।
পটুয়াখালীর পৌরসভার মেয়র ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন,অনেক দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান পটুয়াখালী ও এর আশপাশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এখানে প্রচুর খালি জমি থাকলেও কেনার পরই মামলার কবলে পড়তে হয়।এজন্য বিদেশিরা আগ্রহ হারাচ্ছেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দক্ষিণাঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এক টেবিলে বসার তাগিদ দেন। তিনি বলেন, ভুটান ছোট দেশ। কিন্তু তারা পরিবেশের দিক দিয়ে সফল। তারা যদি পারে, আমরা কেন পারব না? আমাদের মূল সমস্যা হলো, আমরা চিন্তা করি, জবাবদিহি শুধু রাজনীতিবিদরাই করবেন। অন্য কেউ করবেন না।
অনুষ্ঠানে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য, সাংবাদিক নেতা শেখ মামুনুর রশীদ,নুরুল ইসলাম হাসিবসহ বরিশাল বিভাগের বিশিষ্টজনরা। সভা সঞ্চালন করেন সংগঠনের সভাপতি আমীন আল রশীদ। সার্বিক ব্যবস্থাপনায়। ছিলেন বিডিজেএ এর সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব সৈকত।
টিআই/