দেশেই তৈরি হচ্ছে ৯০ ভাগ মোটরবাইক: বিপ্লব কুমার রায়, টিভিএস সিইও (ভিডিও)
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৫৪ পিএম, ১ অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৯:১৩ পিএম, ১ অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার
বাংলাদেশেই এখন মোটরবাইক তৈরি করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এগিয়ে যাচ্ছে এ শিল্প। এতে বাইকের আমদানি নির্ভরতা কমেছে। ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে বাইক সরবরাহ করতে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। মানসম্মত বাইক পাওয়ায় ক্রেতারাও স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন, জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে বাইক তৈরি প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে বেশ কয়েকটি প্রতিবন্ধকতারও সম্মুখীন হতে হচ্ছে এ শিল্পকে। একই সঙ্গে এ শিল্পের সম্ভাবনাও রয়েছে অনেক। এ প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এমন প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনার বিষয় নিয়ে একুশে টেলিভিশনের সঙ্গে বিশদ কথা বলেছেন মোটরবাইক তৈরি প্রতিষ্ঠান টিভিএস’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিপ্লব কুমার রায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশনের প্রতিবেদক মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ।
একুশে টেলিভিশন: আমাদের দেশে মোটরবাইক তৈরির বিষয়ে জানতে চাচ্ছি।
বিপ্লব কুমার: আমাদের দেশে প্রায় ১০ থেকে ১২টি প্রতিষ্ঠান মোটরবাইক তৈরি করছে। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বছরে এসব প্রতিষ্ঠান ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ মোটরবাইক তৈরি করছে। যদিও এ প্রতিষ্ঠানগুলোর সবকটিই বিদেশি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এর উৎপাদন দেশেই হচ্ছে। স্থানীয় জনশক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। এতে শক্তিশালী ও কর্মক্ষম হচ্ছে জনগোষ্ঠীর বিশাল একটি অংশ।
একুশে টেলিভিশন: সীমান্ত থেকে চোরাই পথে মোটরবাইক আসছে। দেশে তৈরি হলেও এমনটি হওয়ার কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
বিপ্লব কুমার: সীমান্ত থেকে চোরাই পথে এক সময় অনেক বাইক আসত। কিন্তু এ অবস্থা এখন আর নেই। কেননা চোরা পথে আসা বাইক ক্রেতাকে কিন্তু মোটা অংকের টাকা দিয়েই ক্রয় করতে হতো। এ পরিমাণ টাকা দিয়েই সে তার চাহিদা অনুযায়ী বাইক পাচ্ছে। এখন যে বাইকগুলো ঐ পথে আসে তা আমাদের দেশে তৈরি হয় না। কিছু কিছু বাইক রয়েছে যার সক্ষমতা কিছুটা বেশি এবং ভিন্ন মডেলের বলে এমনটি হচ্ছে। তা কিন্তু নেহাত কমই বলা যায়। আমি বলব, আমরা ক্রেতাকে তার চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছি বলে চোরাই পথে বাইক আসার বিষয়টি প্রায় পুরোটাই কমেছে।
একুশে টেলিভিশন: মোটরবাইক শিল্প বিকাশে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলে মনে করেন?
বিপ্লব কুমার: এ শিল্পের ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমি মোটা দাগে তিনটি প্রতিবন্ধকতা বুঝি। প্রথমত হলো, অদক্ষ লোকবল, পেছনের শৃঙ্খল সার্ভিসের অভাব, খুচরা ব্যাংকিং সুবিধার অভাব।
এগুলো কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। যেমন- শিল্প মন্ত্রণালয় এ প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কয়েকটি কারিগরি প্রতিষ্ঠান দক্ষ লোকবল তৈরিতে প্রশিক্ষণ চালু করেছে। এ প্রশিক্ষণগুলোর মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি করা যাবে। একই সঙ্গে কিছু কিছু ব্যাংক কয়েকটি ব্যাংকের জন্য কিছু পাইলট প্রজেক্টও হাতে নিয়েছে। ক্রেতাদের জন্য সহজলভ্য করতে এগুলো বেশ কাজে আসছে।
একুশে টেলিভিশন: কোন পর্যায়ে এমন অদক্ষ লোকবল আছে বলে মনে করেন?
বিপ্লব কুমার: এ অদক্ষ লোকবল বিভিন্ন পর্যায়ে। বিশেষ করে কারিগরি দিকে বেশি। তবে আশার কথা হচ্ছে এ শিল্প যতই সময় নেবে ততই দক্ষ লোকবল তৈরি করবে অর্থাৎ একটু অপেক্ষা করতে হবে।
একুশে টেলিভিশন: দক্ষ লোকবল না পাওয়ায় বিদেশ থেকে লোকবল আমদানি করছেন কিনা?
বিপ্লব কুমার: আমার প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে কোনো লোকবল আমদানি করছে না। যতদূর জানি অন্য প্রতিষ্ঠানও আমদানি করছে না। উচ্চ পর্যায়ের কয়েকটা পদে মাত্র বিদেশী নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। এটা স্বাভাবিকভাবেই যা হয় এর বাইরে তেমন কিছু নয়। আমরা চাই স্থানীয় জনগোষ্ঠীই দক্ষতা লাভ করুক। এতে আমরা যেমন লাভবান হবো; দেশও লাভবান হবে। আমরা একটা দক্ষ জনগোষ্ঠি পাব। যা বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠানের উপকারে আসবে।
একুশে টেলিভিশন: আমদানির পরিবর্তে উৎপাদনে ক্রেতা কি কি সুবিধা পাচ্ছে?
বিপ্লব কুমার: আমাদানির ক্ষেত্রে ক্রেতা বেশ ভালোই সুবিধা পাচ্ছেন। যা আমদানিকৃত বাইকে পাওয়া যায় না। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের লভাংশের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড়ে বাজারে বাইক সরবরাহ করছে। দেশের তৈরী তাই বলে মান কিন্তু খারাপ হচ্ছে না। আমদানিকৃত বাইকের চেয়ে এ বাইকের মান কম কিন্তু নয়।
একুশে টেলিভিশন: বাংলাদেশের বাজারে কতটি কোম্পানি বাইক উৎপাদন করছে এবং টিভিএস’র অবস্থান কত তম?
বিপ্লব কুমার: বিক্রয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের বাজারে ২য় অবস্থানে রয়েছে টিভিএস বাইক। বাজারে ১০ থেকে ১২টি প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরি বাইক সরবরাহ করছে।
একুশে টেলিভিশন: কোন প্রতিষ্ঠান বিক্রয়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে?
বিপ্লব কুমার: টিভিএস’র চেয়ে বিক্রয়ের দিক দিয়ে বাজাজ এগিয়ে রয়েছে। এর অবশ্য কিছু কারণও রয়েছে। বাজাজ বাজারে এসেছে ৩৮ বছর আগে আর আমাদের বাইক বাজারে এসেছে মাত্র ১৩ বছর হয়েছে।
একুশে টেলিভিশন: বাংলাদেশের বাজারে মোটরবাইকের চাহিদা কেমন?
বিপ্লব কুমার: বাংলাদেশের বাজারে মোটরবাইকের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এখন বছরে দেশে ৫ লাখের উপর বাইক বিক্রয় হয়। দেশের গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহরাঞ্চলের সব স্থানেই মোটরবাইক সমানে চলতে পারে। দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্তরাই বাইকের মূল ক্রেতা। তাই এদিকে খেয়াল রেখেই আমরা উৎপাদনের কাজ করছি। বাইকের কোন যন্ত্রাংশ কিন্তু দেশে তৈরি হচ্ছে না। এটা পুরোপুরিভাবে আমদানি করে আমাদের বাইক তৈরি করতে হয়। এখন চাহিদার ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই মোটরবাইক দেশেই উৎপাদন করা হচ্ছে।
একুশে টেলিভিশন: সরকারের আরোপিত কর বৃদ্ধির কারণে এ শিল্পের বিকাশে কোন বাধা রয়েছে কিনা?
বিপ্লব কুমার: সরকার এ শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। সরকার চাচ্ছে দেশ প্রযুক্তি ও কারিগরিতে এগিয়ে যাক। তবে সরকার যে বিভিন্ন কর আরোপ করছে এবং প্রতি বাজেটেই কিছু না কিছু বাড়ানো হচ্ছে এতে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হয়। কেননা আমরা ক্রেতাকে তার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে দিতে পারি না একই সঙ্গে উৎপাদনকৃত বাইকের মানও কিন্তু কমাতে পারছি না।
একুশে টেলিভিশন: বাইক রপ্তানি করছেন কিনা?
বিপ্লব কুমার: রপ্তানি তো আমরা তখনই করতে পারব যখন দেখবো আমরা আমাদের চাহিদা পূরণ করতে পারছি। আর এর জন্য কিছু সময় অবশ্যই দরকার। সবে মাত্র এ শিল্প বিকাশ হতে শুরু করেছে এখনও তেমন একটা অবস্থান কিন্তু তৈরি হয়নি। রপ্তানি করতে গেলে সেই অবস্থানটা প্রয়োজন। আর অন্য দিকে নিজেদের চাহিদাপূরণ হলেই রপ্তানির কথা আসবে।
একুশে টেলিভিশন: আগামী দশ বছরে এ শিল্প কোন পর্যায়ে যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
বিপ্লব কুমার: আগামী দশ বছরে এ শিল্প অনেক স্থায়ীত্বের রূপ নেবে। প্রায় ১০ গুন উন্নতি লাভ করবে। এতে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে আমরা আমাদের চাহিদা পূরণ করে খুব শীঘ্রই রপ্তানি করতে পারব। সেটি ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যেই হয়ে যাবে। একই সঙ্গে সময়ের পরিবর্তনে যে কয়েকটি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তাও কেটে যাবে।
এমএস/এসি