আমি পদত্যাগ করবো না : জাবি উপাচার্য
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:১৮ পিএম, ১ অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য যে দায়-দায়িত্ব দিয়েছে সেটি অযৌক্তিক। আমি এটি চাইতেও পারিনা, করতেও পারিনা। এটা সরকার বা বিচার বিভাগ চিন্তা করবে। আমাকে চাপ সৃষ্টি করার অর্থই হচ্ছে, একটা অযৌক্তিক দাবি দিয়ে আমাকে সেচ্ছায় পদত্যাগের আহবান জানানো। যেহেতু উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ কেলেঙ্কারীর অভিযোগের ভিত্তি নেই, তাই পদত্যাগের ইচ্ছা আমি প্রকাশ করছি না।
মঙ্গলবার দুপুর ২টায় প্রশাসনিক ভবনে আন্দোলনকারীদের পূর্ব ঘোষিত উপাচার্যের পদত্যাগের আল্টিমেটামের শেষদিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমিত বিচারিক প্রক্রিয়াতে যেতে পারিনা। আমি ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়কে অবহিত করেছি এবং এই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছি।তারা যদি মনে করে তদন্ত করা উচিত, সেক্ষেত্রে আমার যতটুকু সহযোগিতা করার তা করবো।
উপাচার্যের কাছ থেকে শাখা ছাত্রলীগের নেতারা ঈদ সালামি পেয়েছে এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ওরা বলুক। আমি এটা মানছি না।নিজেই কখনও পাঁচ হাজার টাকার ওপর সালামি পাইনি। কে কে আমার মানহানি করেছে, কোন কোন পত্রিকা টিভি চ্যানেল করেছে কখনও পরিস্থিতি এলে আমি এ নিয়ে কথা বলবো।
এদিকে নৈতিক স্থলন ও অর্থ কেলেঙ্কারীর দায়ে উপাচার্যকে পদত্যাগের পূর্ব ঘোষিত আল্টিমেটামের শেষ দিনে লাল কার্ড দেখিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।এছাড়া সেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে আজকে থেকে সর্বাত্মক ধর্মঘটের ঘোষণা দেন তারা।
মঙ্গলবার দুপুর একটায় ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
কর্মসূচিতে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, কমিশন কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত উপাচার্য ও তার পরিবারকে আমরা লালকার্ড দেখিয়েছি। আমাদের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থী নিপীড়নকারী, দুর্নীতিবাজ উপাচার্যকে আমরা লালকার্ড দেখাচ্ছি।
এসময় তিনি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে আগামীকাল বুধবার ও বৃহস্পতিবার সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দেন। ধর্মঘট চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম ও ক্লাস বন্ধ থাকবে।তবে পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষা এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে বলে জানান তিনি।
কর্মসূচিতে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভুইয়া, অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সোহেল রানা, সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের আহবায়ক অধ্যাপক আব্দুল জব্বার হাওলাদার, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দীন, অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক, অধ্যাপক খবির উদ্দিন, ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. ইুরুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট, ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখার নেতৃবৃন্দ এতে অংশ নেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা কর্মসূচী ঘোষণা করেছে উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’। মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগকারী চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও জনসংযোগ কর্মসূচীর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, শিক্ষার্থীদের এক অংশের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রশাসন দুটি দাবি মেনে নিয়ে সমস্যার সমাধনের পথ সহজ করে।কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী শিক্ষক গোষ্ঠী নিজেদের এজেন্ডা (উপাচার্যকে গদিচ্যুত করা)বাস্তবায়নে একটি ছাত্র সংগঠনের কয়েকজন নেতাকে ব্যবহার করে ষড়যন্ত্রমূলক ফোনালাপের সংলাপ তৈরি করা হয়।যাতে উপাচার্য ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা যায়।এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে তারা পুনরায় জাহাঙ্গীরনগরকে অস্থিতিশীল করে নিজেদের ফায়দা হাসিল করতে চায়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়,বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের কৃতকর্মের শাস্তির দাবিতে বুধবার সকাল ১১টায় শহীদ মিনারের সামনে সড়কে মানববন্ধন এবং বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী জনসংযোগ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত,বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অপরিকল্পনার অভিযোগ এনে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন চলা অবস্থায় গত ১২ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে দুটি দাবি মেনে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।তবে দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিটি অমীমাংসিত রেখেই শেষ হয় সেদিনের আলোচনা সভা।পরবর্তীতে ১৮ সেপ্টেম্বরে ফের আলোচনায় বসলেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারায় উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও ১ অক্টোবরের মধ্যে পদত্যাগের দাবি জানান আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
কেআই/