ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ১১ ১৪৩১

দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে দিলেন স্ত্রী 

সাভার সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ০৭:২৩ পিএম, ২ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৭:২৪ পিএম, ২ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার

দ্বিতীয় বিয়ে করায় এবং জমি লিখে না দেয়ায় নিজ স্বামীকে মিথ্যা মাদকসেবী সাজিয়ে কয়েক দফায় মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করে রাখেন প্রথম স্ত্রী। এমনকি দু’বার দ্বিতীয় স্ত্রীকে জোরপূর্বক তালাক দেওয়ানোরও অভিযোগ রয়েছে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের লোকজন এবং প্রথম স্ত্রীর বিরুদ্ধে। 

অনিচ্ছাকৃতভাবে দু’বার তালাক দিলেও মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে সেই নারীকেই পুনঃরায় বিয়ে করেন মহসীন মোহর নামের ওই ব্যক্তি। তাকে দীর্ঘ চারমাস রাজধানীর একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আটকে রাখার পর সেখান থেকে বেরিয়েই নিজের নিরাপত্তা চেয়ে গত ৩১ জুলাই আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-২৩৫০) করেন মহসীন। 

জানা যায়, আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে মহসীন মোহরের প্রথম স্ত্রী রিনা বেগমের ঘরে রয়েছে তিনটি কন্যা সন্তান। পরে তিনি পুত্র সন্তানের আশায় ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সানজিদা আক্তার নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। আর এই বিয়েই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, আমার প্রথম স্ত্রী রিনা বেগম তার বোন জামাই লেহাজ উদ্দিনের সহায়তায় 'আমি মাদক সেবন করি' মর্মে মিথ্যা বদনাম দিয়ে আমাকে গত ২৫ মার্চ ২০১৯ইং তারিখে রাজধানীর উত্তরা রাজলক্ষী ৪নং বাড়িতে রেইনবো রিহ্যাব সেন্টার নামের একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আমাকে আটকে রাখেন। 

রিহ্যাব সেন্টার থেকে আসার পর দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা আক্তারের সঙ্গে বসবাস করতে থাকায় বিবাদীগণ পুনঃরায় আমাকে রিহ্যাব সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করেন। এমনকি আমার সব সম্পত্তি বিবাদী প্রথম স্ত্রী রিনা বেগম তার নামে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগসহ আমাকে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করেন। আমার জায়গা-জমি তার নামে লিখে না দিলে আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না মর্মে হুমকিও প্রদান করেন।

ভুক্তভোগী মহসিন মোহর তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আশুলিয়া থানায় জিডিটি দায়েরের ২২ দিন পর তার নিজ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে পুনঃরায় তাকে মাদকাসক্ত বলে কৌশলে রাজধানীর খানটেক পাকুরিয়া বাজার পরিত্রাণ মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যায় তার প্রথম স্ত্রী। 

এদিকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা আক্তার তার স্বামীকে অনেক খোঁজাখুজি করে কোথাও না পেয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থানায় স্বামীর সন্ধান চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ৪৮) দায়ের করেন। 

পরে মহসীন মোহরের দায়ের করা সাধারণ ডায়েরির তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাহিদ হাসানের নিকট গেলে তিনি সানজিদা আক্তারকে জানান, তার স্বামীকে প্রথম স্ত্রী এবং বোন জামাই মিলে পরিত্রাণ মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করে রেখেছেন। 

সম্প্রতি এ বিষয়ে সানজিদা আক্তারের দায়ের করা জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শ্রী রামকৃষ্ণ দাস ও সানজিদা আক্তার ওই মাদক নিরাময় কেন্দ্রে গেলে তাদের সঙ্গে কথা হয় ভুক্তভোগী মহসীন মোহরের। 

এসময় তিনি পুলিশকে বলেন, পুত্র সন্তানের আশায় সানজিদা আক্তারকে বিয়ে করায় প্রথম স্ত্রী রিনা বেগম দ্বিতীয় স্ত্রীকে কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছে না। দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিতে প্রথম স্ত্রী রিনা বেগম এবং বোনের জামাইসহ ৫/৬ জন মিলে তাকে নানানভাবে নির্যাতন করছে। তাদের কথা মতো জমি লিখে না দেয়ায় রেইনবো নামক মাদক নিরাময় কেন্দ্রে তাকে ভর্তি করে দেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে চারমাস পর বেরিয়ে এলে পুনঃরায় এই (পরিত্রান) মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের লোকজন আমাকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে আসে। 

তিনি আরও বলেন, আমি কোনওদিন মাদকে আসক্ত ছিলাম না। এমনকি কখনও মাদকদ্রব্য সেবনও করিনি। আমার দোষ, দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদাকে কেনও ছেড়ে দিচ্ছি না এবং প্রথম স্ত্রী রিনা বেগমকে কেনও সম্পত্তি লিখে দেই না! দ্বিতীয় স্ত্রীকে ছেড়ে না দেয়া পর্যন্ত আমার প্রথম স্ত্রী ও তার সহযোগীরা আমাকে এখান থেকে বের করে নিবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। 

এসময় কান্নাজড়িত কন্ঠে মহসীন বলেন, আমি কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছি। এছাড়াও আমার মা বার্ধক্যজনিত কারণে এবং আমার জন্য দুশ্চিন্তা করে করে এখন মৃত্যুর পথযাত্রী। আমার বাবা বেঁচে না থাকায় তাকে দেখার মতো কেউ নেই। আমাকে আপনারা এখান থেকে বের করে নিয়ে যান। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত রিনা বেগমের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে সংযোগটি বন্ধ থাকায় কোনও কথা বলা যায়নি। 

এদিকে মহসীন মোহরের দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা আক্তার বলেন, তার স্বামীর প্রথম স্ত্রী রিনা বেগম এবং তার লোকজন তাকে তালাক দিতে এবং জমি লিখে দিতে তার স্বামীর উপর নির্মম নির্যাতন চালায়। তাতেও কাজ না হলে মাদক সেবনের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আটকে রেখেছেন। 

সানজিদা আক্তার আরও বলেন, আমি থানায় জিডি করে বিবাদীদের নোটিশের মাধ্যমে পুলিশ দিয়ে একাধিকবার ডাকালেও তারা উপস্থিত হয়নি। এ বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আমাকে হত্যা করে লাশ গুম করাসহ আমার পরিবার এবং আমার স্বামীর জান মালের বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করবে বলে হুমকি অব্যাহত রেখেছে। 

এসময় সানজিদা আক্তার তার স্বামীকে ছাড়িয়ে আনতে এবং জীবনের নিরাপত্তার লক্ষে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এনএস/