নারীশিক্ষা দিতে গিয়ে ধর্মান্ধদের হামলায় ঘরছাড়া নূরজাহান
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৩৪ পিএম, ২ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ১১:০২ পিএম, ৭ অক্টোবর ২০১৯ সোমবার
সোনারগাঁয়ের নূরজাহান-যেন অন্য এক মালালা। স্বামী পরিত্যক্তা এই নারী এখন বহু নারীর আলোরদিশারী। হাতের কাজ শেখান। তাঁতের শাড়ি বুনে স্বাবলম্বী করেছেন নিজ গ্রাম বাতপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা। কিন্তু অন্যের ঘর আলোকিত করতে গিয়ে নূরজাহানের নিজের ঘরে নেমে এসেছে চরম অমানিশা।
এলাকার মোল্লা সম্প্রদায় ইতোমধ্যে গ্রামছাড়া করেছে তাঁকে। নিরুপায় নূরের গন্তব্য কোথায় তা জানেন না তিনি। এলাকা ছেড়ে আপাতত ঠাঁই মিলেছে তাঁর ভাগ্নের বাসায়।
নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বাতপাড়া গ্রামের নূরজাহানের গল্পটা একটু অন্যরকম। বিয়ে হয়েছিল দরিদ্রঘরের মো. দুলালের সঙ্গে। একসন্তান হওয়ার পর দুলাল যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। দিন যায় আর মারধোরও বাড়তে থাকে টাকার জন্য। পরে নূরজাহানের ভাগিনা মো. মুরাদ হোসেন তাঁকে তার বাবার বাড়িতে নিয়ে আসে। এই সময়ের মধ্যে স্বামী মো. দুলাল তাঁকে তালাক দেয়।
শুরু হয় নূরের নতুন পথচলা। খেয়ে না খেয়ে দিন অতিবাহিত হতে থাকে। দারিদ্রের কষাঘাতে ধাক্কা খেতে খেতে একসময় ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন। শুরু হয় তাঁত বোনার প্রশিক্ষণ। সেই থেকে নারীদের স্বাবলম্বী করার নানামুখী উদ্যোগ নেন তিনি।
কিছুদিন যেতেই বাড়তে থাকে নূরজাহানের সুখ্যাতি। ইতোমধ্যে জুটে যায় আরও অনেক স্বামী পরিত্যক্তা, অসহায় কিংবা বিধবা। সবাইকে তিনি দিতে থাকেন স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ। ক্রমশ: এক থেকে বহু নারীর জীবন পাল্টাতে থাকে। এক সময়ের অসহায়েরা নতুন স্বপ্নে হন উজ্জীবিত। আর এতেই ক্ষুব্ধ হন গ্রামের একটি বিশেষ শ্রেণি। কারণ নূরজাহান নারীদের শিক্ষা দিতে থাকেন পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য।
কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা দূর করে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে আহ্বান জানান তাঁর গ্রামের অসহায় নারীদের। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে সোনারগাঁর কিছু মোল্লা-মোড়লেরা। একাধিক ইমামের মাধ্যমে নূরজাহানের কর্মকাণ্ডের উপর ফতোয়া দেয়া হয়। নতুন করে আবারও সমস্যায় পড়েন নূর। নূরজাহান একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাতকার দিয়ে বলেন, কেউ অশিক্ষিত মোল্লা হয়ে জন্মায় না। সমাজের নানান অসঙ্গতি তাকে মোল্লা বানিয়ে ফেলে। কারণ সে যদি শিশুকালে এটি বুঝতে পারতো তাহলে মোল্লা হতো না। শৈশবের খেলাধুলো, গান-বাজনার অভাব, খাদ্য সঙ্কট বাচ্চাদের এই পথে নিয়ে যায়।
এই বক্তব্যের পর দ্বিতীয়বারের মতো গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয় নূরজাহান ও তাঁর মেয়ে। ঢাকার একটি বাড়িতে আশ্রয় মিললেও সেখানেও তাঁর স্বামী ও কতিপয় ধর্মান্ধ দুর্বৃত্তরা হামলার পরিকল্পনা করে। থানায় গেলেও মামলা নেয় না পুলিশ।
স্থানীয় সাংবাদিকেরা তাঁর সম্পর্কে জানতে গেলে নূরজাহান বলেন, এখন আমার সাক্ষাতকার নিবেন না। তাতে আমি আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবো। হয়তো কোন একদিন এই চক্রের ঘুম ভাঙবে। অথচ নূরজাহান এলাকা ছাড়া হওয়ায় উদ্বেগ-আতঙ্কে আছেন নারীরা। কারণে-অকারণে তাদেরকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাঁত বুননের কাজ ছাড়তে চাপ দেয়া হচ্ছে।
এসি