বরগুনায় একদিনেই ৮৭ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি
জয়দেব রায়, বরগুনা প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত : ১১:৩৭ পিএম, ৩ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার
ইলিশের জেলা বরগুনায় বর্নাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে হয়েছে ইলিশ উৎসব। অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছিলো এ উৎসবে। একদিনেই ৮৭ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি হয়েছে।
মাছের রাজা ইলিশ। আকার আকৃতি, বর্ণ ও স্বাদে অতুলনীয় এই ইলিশ বাঙালির রন্ধনশিল্পে এক আভিজাত্যপূর্ণ অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। এই ইলিশকে ঘিরে বুধবার বরগুনার সার্কিট হাউজ মাঠে হয়েছে দেশের বৃহত্তম ইলিশ উৎসব। বরগুনা জেলা প্রশাসন ও জেলা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম এ উৎসবের আয়োজন করেছিলো। সকাল সাড়ে ৯টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
শোভাযাত্রায় দেখা যায় ইলিশের নানা রকম প্লাকার্ড ও দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। অংশ নেয় নারী ও কিশোর-কিশোরীসহ সহস্রারাধিক জনতা। শোভাযাত্রা শেষে বেলুন উড়িয়ে ও উদ্বোধনী নৃত্যের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ইলিশ উৎসব। উদ্বোধনী নৃত্যে উঠে আসে আবহমান বাংলার জল-জাল ও জেলেদের জীবন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, মৎস্য ও প্রাণিস¤পদ মন্ত্রণালয় স¤পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এমপি। সভাপতিত্ব করেন, বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।
বক্তব্য রাখেন, বরগুনার পৌর মেয়র মো. শাহাদাত হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. জাহাঙ্গীর কবীর, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ¦ আবদুর রশিদ মিয়া, জেলা এনজিও ফোরামের সভাপতি আবদুল মোতালেব মৃধা, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী ও জেলা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মনির হোসেন কামাল। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাহাবুব আলম। এ উৎসবে সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠিত হয় ইলিশ বিষয়ক নাটক, আলোচনা সভা, কুইজ প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসবে জেলার ছয়টি উপজেলা থেকে ২৫টিরও বেশি স্টল শোভা পায়। স্টলগুলোতে রান্না ইলিশের শতেক রকমের বাহারি খাবার প্রদর্শিত হয়। স্বল্পমূল্যে বিক্রি হয় পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীসহ বঙ্গোপসাগরের সুস্বাদু তাজা ইলিশ।
মৎস্য ও প্রাণিস¤পদ মন্ত্রণালয় স¤পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এমপি বলেন, এ অনুষ্ঠানের প্রস্তাবনা সাংবাদিক বন্ধুদের মধ্যে থেকে এসেছিল। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এ ইলিশ উৎসব শুরু হয়। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের যত ইলিশই থাকুক না কেন বরগুনার পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর ইলিশের মতো সুস্বাদু ইলিশ আর কোথাও নেই। তাই বরগুনায় মৎস্য মন্ত্রণালয় থেকে এখানে একটি ইলিশ গবেষণাকেন্দ্র ও দ্বিতীয় আরেকটি ইলিশ অবতরণকেন্দ্র স্থাপনের প্রচেষ্টা রয়েছে।
বরগুনার পাথরঘাটায় রয়েছে দেশের বৃহত্তম মৎস্য পাইকারি ও বাজারকেন্দ্র বিএফডিসি। বরগুনার প্রধান তিনটি নদী পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর ও বঙ্গোপসাগর থেকে প্রতিবছর ইলিশ আহরিত হয়ে থাকে প্রায় এক লাখ মেট্রিকটন। তাই উপকূলীয় জেলা বরগুনায় একটি ইলিশ গবেষণাকেন্দ্র ও ইলিশ মিউজিয়াম স্থাপনের দাবি উত্থাপন, মৎস্যজীবীদের সাথে সর্বস্তরের জনগনের মেলবন্ধন, মাছ ধরার নৌকাসমূহকে আধুনিকায়ন, ইলিশ অবতরণের ঘাটসমূহকে আরো আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সংযোজন এসব লক্ষ্যকে সামনে রেখে বরগুনায় আয়োজন করা হয়েছে ব্যতিক্রমী এ ইলিশ উৎসব।
বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বরগুনা জেলার প্রায় এক লাখ মানুষ সরাসরি ইলিশ শিকারের সাথে স¤পৃক্ত। বঙ্গোপসাগর, বিষখালী, পায়রা ও বলেশ্বর নদীর ইলিশ দেশের অন্য যেকোনো জেলার ইলিশের চেয়ে সুস্বাদু। তাই প্রথমবারের মতো বরগুনা জেলায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের বৃহত্তম ইলিশ উৎসব।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, বরগুনার ইলিশকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি করে তুলতে ও ইলিশের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত বরগুনায় দেশি-বিদেশি পর্যটককে ইকোট্যুরিজমে আকৃষ্ট করার পাশাপাশি মৎস্য খাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ সংরক্ষণে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিলো। তিনি আরও জানিয়েছেন, বুধবার রাত ১০টা ইলিশ বিক্রি হয়েছে। ছয়টি উপজেলার স্টল থেকে ৩১৭ মন, অর্থাৎ ১২ হাজার ৬৮০ কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে। ইলিশের গড় মুল্য ছিলো ৬৮৬ টাকা। সে হিসেবে এ উৎসবে ৮৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৮০ টাকার ইলিশ বিক্রি হয়েছে।
আরকে//