ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

নিখিলের আনন্দধারা

অ্যাডভোকেট নিলুফার আনজুম

প্রকাশিত : ০২:৫০ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০১৯ শনিবার

আকাশ জুড়ে সাদা মেঘের ভেলা, ঝলমলে রোদেলা দিন আর শিশির ভেজা শিউলি জানান দেয় এসেছে শরৎকাল। শরতের প্রকৃতিকে আরও মোহনীয় করে শারদীয় দুর্গোৎসব।

শরতলগ্নেই মহামায়া দুর্গা স্বামীর বাড়ি থেকে বেড়াতে আসেন পিতৃনিবাসে। এক বছর পর, পুত্র-কন্যাদের নিয়ে মুখে মিষ্টি হাসি আর চোখে স্বজনদের দেখার আকুলতা নিয়ে তিনি আসেন। উমাকে বরণে ঢাক-ঢোল,কাসি,করতাল, কাসার ছন্দে মুখরিত হয় জনপদ। সাথে মঙ্গল শাঁখ আর উলুধ্বনি তো আছেই। ধনী- গরীবের ভেদাভেদ ভুলে মন্ডপে মন্ডপে চলে আনন্দময়ীর আগমনী সুর। 

এক অসাম্প্রদায়িক পরিবারের মুক্ত পরিবেশে আমার বেড়ে ওঠা। দুর্গাপূজার আনন্দ আয়োজনে অংশ নিয়েছি। জাতি,ধর্ম নির্বিশেষে দুর্গা পূজাকে বলা হয় সার্বজনীন শারদীয়া দুর্গোৎসব। আর দুর্গোৎসব মানেই বাঙালির প্রাণের উৎসব। 

মন্ডপে কাঠের ফ্রেম নির্মানের পর খড় কুটো দিয়ে প্রতিমার আকৃতি তৈরির সাথে সাথে আমাদের মনেও আনন্দ খেলে যেতো। বসে বসে দেখতাম মৃৎ শিল্পীদের মাটির প্রলেপ দেওয়ার কাজ। প্রতিমা শুকানোর পর রং দেয়া ও সাজসজ্জা ও অলংকরনের কাজের মাধ্যমে নির্মান প্রক্রিয়া শেষ হতো। আমাদের চোখে ততদিনে পূজার রং, হৃদয়ে দোলা।  

ষষ্ঠিতে বোধন এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় পূজার। শাস্ত্রমতে, দেবীর বোধন হয় বিল্ববৃক্ষ বা বিল্বশাখায়। ভোরবেলা পিতৃতর্পনের মাধ্যমে দেবীপক্ষকে আহ্বান জানান ভক্তরা। শোক, দুঃখ, অমঙ্গল কাটিয়ে শুভ, মঙ্গলের দিশারী দূর্গতিনাশীনিকে হিমালয় থেকে মর্ত্যে বরণ করা হয়।
 
গীত, বাদ্য আর আলোয় উৎসব আনন্দ ছড়িয়ে যায় সবখানে। নারীদের পরনে এক প্যাঁচে গারদের শাড়ি। ধূতি- সাদা পাঞ্জাবি পুরুষদের। মন্ডপে মন্ডপে মৌসুমী ফলের ভোগ। সাথে খিঁচুড়ি, মিষ্টান্ন। শেষপাতে মন্ডা- মিঠাই। প্রথা অনুযায়ী ষষ্ঠী থেকে নবমী এ চারদিন চলবে নিরামিষ। 

শেষে বিজয়া দশমির বিসর্জন এর মাধ্যমে দেবী দুর্গা আবার কৈলাশে ফিরে যান। আসছে বছর আবার আসার প্রতিশ্রতি দিয়ে পেছনে ফেলে যাবেন ভক্তদের শ্রদ্ধা আর বেদনাশ্রু। শোভাযাত্রা সহকারে দেবী প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয় উৎসবের। 
সব ধর্মের মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সবার সম্মিলিত ত্যাগ এবং রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। 

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সবার সমান অধিকার হোক। সকল ধর্মের মানুষের সম্প্রীতি বজায় রাখার পাশাপাশি সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত হোক। সকল ধর্ম,বর্ণ,জাতি গোষ্ঠীর মানুষ বাংলাদেশে সহাবস্থান করুক সুখ, শান্তি, নির্ভয়ে ও নিরাপদে। 

লেখক: আইনজীবী ও রাজনৈতিক কর্মী