বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যা: বিনা আয়োজনে শোকের বিছানা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৪৯ পিএম, ৭ অক্টোবর ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৪:০০ পিএম, ৭ অক্টোবর ২০১৯ সোমবার
মায়ের কোল থেকে ঢাকায় ফিরেছেন মাত্র কয়েক ঘণ্টা হলো। কয়েকদিন ছুটি কাটাতে মায়ের আঁচলে ফিরেছিলেন তিনি। ছুটি শেষ হওয়ার আগেই পড়াশুনার জন্য ফিরে এলেন নিজের প্রিয় বিদ্যাপীঠে। তিনি এই বিদ্যাপীঠ থেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন, এক সময় দেশ ও বিশ্বের মানবজাতির কল্যাণে কাজ করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন করতে পারলেন না। থেমে গেল তার জীবন প্রদীপ।
তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। সন্তানহারা মায়ের আহাজারিতে আকাশে বাতাসে ভারী হয়ে উঠেছে। তার সন্তান যে আর কোন দিন ফিরবেন না, মানতে পারছেন না তিনি।
আবরার ফাহাদ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়’র (বুয়েট) ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাকে সোমবার গভীর রাতে হলের কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলে অভিযোগ উঠেছে।
ফাহাদের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সদস্যরা যেন শোকের বাঁধভাঙ্গা ঢলে বিলিন হয়ে যাচ্ছেন। মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বিনা আয়োজনে যেন আকাশ বাতাস শোকের বিছানা সাজিয়ে রেখেছে। এত শান্ত ছেলেটিকে তারা হত্যা করল, এটাই যেন বুঝে উঠতে পারছেন না তারা।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ফাহাদের কোনো শত্রু ছিল না। তাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক। তাদের সন্তানকে কেন এভাবে জীবন দিতে হলো, বুঝে উঠতে পারছেন না।
ফাহাদের বাবার নাম বরকতুল্লাহ। তিনি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের নিরীক্ষক কর্মকর্তা ছিলেন। মা রোকেয়া খাতুন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক। দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার ফাহাদ বড়। ছোট ভাই আবরার ফায়াজ ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেও ঢাকা কলেজের হোস্টেলে থাকে। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের কাছেই তার হোস্টেল।
কুষ্টিয়ার পিটিআই সড়কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের বাসার পাশেই তাদের বাড়ি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ১০ দিন আগে ছুটিতে দুই ভাই বাড়িতে এসেছিলেন। ২০ তারিখ পর্যন্ত বাড়িতে থাকতে চেয়েছিলেন আবরার। তবে সামনে পরীক্ষা, পড়া হচ্ছে না বলে গতকাল ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
উল্লেখ্য, সোমবার রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলা থেকে ফাহাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ ও তার পরিবার বলছে, ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার গায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। শরীরের পেছনে, বাম হাতে ও কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত আঘাতের কালো দাগ ছিল। ফাহাদ হত্যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুয়েটের শেরেবাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল ও সহসভাপতি ফুয়াদকে আটক করেছ পুলিশ।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার রাত আটটার দিকে আবরার ফাহাদসহ দ্বিতীয় বর্ষের ৭-৮ জন শিক্ষার্থীকে শের-ই-বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে পাঠান তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৭/৮ জন নেতা। তারা আবরার ফাহাদের মুঠোফোন ঘেটে শিবির-সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ খোঁজেন। এক পর্যায়ে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে তাকে পেটাতে শুরু করেন ছাত্রলীগের নেতারা। পরে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী ওই কক্ষে গিয়ে আবরারকে আরেক দফায় পেটান।
নিজ ফেইসবুকে প্রোফাইলে চলমান ভারত-বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ায় তাকে শিশির আখ্যা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
এমএস/