বুয়েটছাত্র আবরার হত্যা; ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৪৫ পিএম, ৭ অক্টোবর ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৭:২২ পিএম, ৭ অক্টোবর ২০১৯ সোমবার
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে (২১) পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরই বিরুদ্ধে। নিজ ফেসবুক প্রোফাইলে চলমান ভারত-বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ায় তাকে শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শের-ই-বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর সারা দেশজুড়ে উঠেছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। যার প্রবাহ গিয়ে পড়েছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মধ্যমে। ফেসবুকে এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোড়ন। সমালোচনার তীব্র বান ছুটে আসছে একেক জনের ফেসবুক ওয়াল থেকে। কেউবা শাস্তি দাবি করেন, কেউবা জানান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। যারমধ্যে কয়েকটা তুলে ধরা হলো একুশে টিভি অনলাইনের পাঠকের জন্য-
বিশিষ্ট সাংবাদিক আনিস আলমগীর তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘সমাজে অসহিষ্ণুতা, অপরের মত গ্রহণের ক্ষমতা কী পর্যায়ে নামলে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা কতটা ভীতিকর পর্যায়ে গেলে.... ফেইসবুক স্ট্যাটাসের জন্য কাউকে পিটিয়ে হত্যা করা যায়, ভাবতে পারছি না।
এসময় আবরার ফাহাদের দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে বুয়েট ছাত্রের এই স্ট্যাটাসে!!
গাজী টিভি ও সারাবাংলা ডট নেট-এর এডিটর ইন চিফ সাইয়েদ ইশতিয়াক রেজা তার ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছেন, একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস... পছন্দ হয়নি .. তাই পিটিয়ে মেরে ফেলল বুয়েট ছাত্র ফাহাদকে !!!! আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না এই সমাজে....
সাংবাদিক শরিফুল হাসান লিখেছেন, বুয়েট ছাত্র আবরারের অপরাধটা কী? আমি তো বলবো আরেকটা বিশ্বজিতের ঘটনা ঘটলো। পার্থক্য হলো, বিশ্বজিতকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, আর আবরারকে বুয়েটের হলে। এ ছাড়া তো আমি কোন পার্থক্য দেখি না। দুজনকেই শিবির সন্দেহে বর্বরভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হলো। দুজনই সাধারণ গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা। আচ্ছা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে পিটিয়ে ছাত্র হত্যার অধিকার তো কেউ কাউকে দেয়নি। কারও অপরাধ থাকলে পুলিশ, প্রশাসন আছে কেন? আমি বিশ্বজিতের মতো আবরার হত্যারও বিচার চাই। কারা এই হামলাকারী খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দেয়া হোক।
Justice for Abrar পোস্ট দিয়ে সাংবাদিক মাহফুজ সাদি লিখেছেন, মধ্যযুগীয় কায়দায় আবরারকে যারা হত্যা করলো বিনা অপরাধে, এই রাষ্ট্র সেই অপরাধীদের কী শাস্তি হবে?
হত্যাকারীদের শাস্তি চেয়ে সাংবাদিক মনির জারিফ লিখেছেন, আবরার ফাহাদ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক জাহিদ রহমান বিজয় তার ফেসবুকে লিখেছেন, মা! ওদের জিজ্ঞেস করো, ওরা আর কত প্রাণ চায়? ক্ষমা করো আবরার, ক্ষমা করো ১৭ কোটি কাপুরুষকে, প্রিয় বাংলাদেশ।
তরুণ সাংবাদিক নিলয় মামুন লিখেছেন, সাপকেও মানুষ এভাবে পিটিয়ে মারেনা৷ আর তোমরা ছেলেটাকে এভাবে পিটিয়ে মেরে ফেললে! শিক্ষিত হয়েছো হয়তো। কিন্তু জানোয়ারই রয়ে গেলা, মানুষ হওনি। আমাদের ক্ষমা কর আবরার।
মুহিব বিন হাবিব নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, শিবির সন্দেহে পিটুনিতে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে তাকে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে দেখা যায়নি।
(অথচ আইন হাতে তুলে শিবির বলে নৃশংসভাবে মারলো????! এদেশে যখন যাকে খুশি শিবির বা ছেলেধরা সন্দেহে মারার অধিকার রাখে। এটাই কি স্বাধীনতা ?)
আসাদুজ্জামান পাপ্পু নামে নোয়াখালী সরকারি কলেজের এক ছাত্র লিখেছেন, ছেলেটা ভারতীয়দের বিপক্ষে কথা বলেছিলো আজ সে লাশ। আহা আমার মাতৃভূমি তোমার কোলে লুকোতেও আজ আমার ভয় লাগে, কারণ তোমার কোলে আজ অস্ত্রের ঝনঝনানি। তোমার কোলই আজ আমার জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ জায়গা।
আয়েশা আক্তার আশা নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, সত্য বলা যাবে না..চুপ করে থাকুন... অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যাবেনা... চুপ করে থাকুন, দেশের জন্য দশের জন্য ভাবা যাবে না..নিজেকে নিয়েই ভাবুন..তবেই আপনি এই দেশে বাস করার অধিকার পাবেন.. নয়তো আবরার ফাহাদ এর মতো জীবন দিতে প্রস্তুত থাকুন? আল্লাহ এই ভাইয়া টাকে বেহেশত দান করুক (আমিন)।
ইয়াসিন আরাফাত নামে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্র লিখেছে, Abrar Fahad ভাইয়া তোর এইভাবে চলে যাওয়ার প্রতিবাদ করার ক্ষমতা আমাদের নাই রে... দোয়া করবো তোর জন্য। ইহকালে তো হলো না আল্লাহ যেন তোকে পরকালে ভালো রাখে।
রবিউল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, আগের দিন বিকাল ৫টা ৩২ মিনিটে ফেসবুকে পোস্ট, পরদিন সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ, মধ্যরাতে হলের সিঁড়িতে বুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ! প্রতিবাদ করলেই মৃত্যু? আহা বাংলাদেশ!
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ফাহাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্তকালে তার দেহে অসংখ্য জখমের চিহ্ন পেয়েছেন চিকিৎসকরা। বেশ কয়েকটা আঘাতে ও রক্তক্ষরণে ফাহাদের মৃত্যু হয়েছে বলেই জানিয়েছেন তারা।
সোমবার বেলা পৌনে ২টার সময় ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত করেন ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরে অনেক জখমের চিহ্ন রয়েছে।’
এদিকে আবরারকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িত সন্দেহে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাব হোসেন।
আটককৃতরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার এবং ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন। আর ওপর দুজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। এদের মধ্যে রাসেল ও ফুয়াদকে সোমবার সকালে এবং অনিক ও জিয়নকে দুপুরে আটক করা হয়।
প্রসঙ্গত, বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ১০১১নং কক্ষ থেকে রোববার রাত ৮টায় আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে যায় হলেরই কয়েজন শিক্ষার্থী। পরে সোমবার রাত আড়াইটার দিকে হলের সিড়ির নিচে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার রাত ৮টার দিকে আবরার ফাহাদসহ দ্বিতীয় বর্ষের ৭-৮ জন শিক্ষার্থীকে শের-ই-বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে পাঠান তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৭/৮ জন নেতা।
তারা আবরার ফাহাদের মুঠোফোন ঘেটে শিবির-সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ খোঁজেন। এক পর্যায়ে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে তাকে পেটাতে শুরু করেন ছাত্রলীগের নেতারা। পরে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী ওই কক্ষে গিয়ে আবরারকে আরেক দফায় পেটান।
এনএস/