নিষিদ্ধ মৌসুমেও ইলিশ ধরার ধুম, কঠোর হুঁশিয়ারি ডিসির
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৭:৪০ পিএম, ৮ অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার
৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও যমুনায় মাছের প্রাচুর্য্যতার কারণে বসে নেই সিরাজগঞ্জের ৫টি উপজেলাসহ চৌহালী-এনায়েতপুরের লোভী জেলেরা। রুপালী ইলিশের এই এলাকাটি উত্তরবঙ্গের প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র হওয়ায় অন্যান্য বছরের চেয়ে রেকর্ড পরিমাণ নতুন জাল ও নৌকা তৈরী করে মাছ ধরার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে অসাধু জেলেরা।
আর এজন্য জেলেদের কৌশলে সুবিধা দেয়ার নামে ফায়দা লুটতে থানা পুলিশ ও মৎস্য অফিসের অসাধু কর্মচারীরা তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে, চৌহালী ও এনায়েতপুর থানা পুলিশের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তাসহ উপজেলা মৎস্য অফিসের দুর্নীতগ্রস্ত কর্মচারীরা নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরতে সহযোগীতা বাবদ জেলেদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে।
তবে প্রজননের এ মৌসুমে কোনওভাবেই অতীতের মত কাউকে ইলিশ শিকার করতে দেয়া হবেনা জানিয়ে অসৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহমেদ।
সিরাজগঞ্জের ৯টি উপেজলার মধ্যে কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলা হচ্ছে যমুনা নদী বিধৌত। এসব উপজেলার চর ও নদী পাড়ের মানুষগুলোর কৃষির পরেই মাছ আহরণ অন্যতম পেশা হওয়ায় ৪ হাজার ৩৮৭ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। তবে অনিবন্ধিতও রয়েছেন কয়েক গুণ।
বিশেষ করে যমুনার চরাঞ্চল ঘেরা দুর্গম জনপদ চৌহালী উপজেলার অধিকাংশ অভাবী মানুষের কৃষির পরেই প্রধান পেশা মাছ শিকার। এখানে নিবন্ধিত ১ হাজার ৪৫২ জন জেলেসহ ৪ সহস্রাধিক জেলে এ কাজে জড়িত। ইলিশ, ঘাইড়া, আইড়সহ নদীর অন্যান্য সুস্বাদু মাছ ধরতে তাদের ঘের জাল ও নিষিদ্ধ কারেন্ট জালই হচ্ছে প্রধান উপকরণ।
উমরপুর, বাঘুটিয়া, খাসকাউলিয়া, ঘোরজান, স্থল, সদিয়াচাঁদপুর, খাসপুকুরিয়া ইউনিয়নের এসব জেলে তাদের ছোট-বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে দিন-রাত চালিয়ে আসছেন মাছ আহরণের কাজ। নিবন্ধিত জেলেসহ ৪ সহস্রাধিক জেলের যমুনায় সুস্বাদু মাছ ধরতে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালই হচ্ছে অন্যতম উপকরণ। তাদের ছোট-ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে দিন-রাত চলে মাছ আহরণ।
প্রতিবারের ন্যায় ইলিশের বংশ বিস্তারে ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। তবে এ মৌসুমে জেলার অন্য এলাকার চেয়ে চৌহালী-এনায়েতপুরে ব্যাপকভাবে এই মাছের বিস্তার হওয়ায় গত কয়েক বছর নিষেধাজ্ঞার মৌসুমে জেলেরা কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে ব্যাপকভাবে অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে ইলিশ নিধন করছে।
এক্ষেত্রে থানা পুলিশ ও মৎস্য অফিসের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগ-সাজোশে অর্থের বিনিময়ে হচ্ছে ডিমওয়ালা মাছ নিধন। এবারও এর ব্যতিক্রম নেই। অন্যান্য বছরের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে কৌশলে দ্বিগুণ কারেন্ট জাল ও নৌকা তৈরী করেছে চৌহালী, এনায়েতপুর যমুনা পাড়ের জেলেরা।
সরজমিনে চাঁদপুর, আষাননগর, নওহাটা, চালুহারা, চৌহালীর চর, চর সলিমাবাদ ভুতের মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, নতুন জাল ও নৌকা তৈরী করে ইলিশ ধরতে পুরোপুরী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, নিজেদের পেটের কথা চিন্তা করে পুলিশের ভয়-ডর উপেক্ষা করে আমরা মাছ ধরছি। কোনও কোনও সময় মৎস্য কর্মচারী ও পুলিশের নিয়োগ করা দালালের মাধ্যমে যোগাযোগ করে মাছ ধরে আসছি।
এদিকে চৌহালী উপজেলা মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি রমজান আলী জানান, চৌহালীতে ১৪৫২ জন নিবন্ধিত জেলের মধ্যে নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে মাত্র ৩৫৭ জন জেলেকে সরকারিভাবে চাল দেয়া হবে। যা তাদের সংসার চালাতে একেবারেই অপ্রতুল। আর বাকিরাতো পাচ্ছেই না। এ অবস্থায় আমাদের জেলেরা কি করবে। কিভাবে চলবে।
এ ব্যাপারে চৌহালী থানার ওসি রাশেদুল ইসলাম বিশ্বাস জানান, প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরতে দেয়া হবেনা। আমরা সকলকে সচেতন করার পাশাপাশি নদীতে টহল ব্যবস্থা জোরদার করবো।
এদিকে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহমেদ জানান, উত্তরবঙ্গের ইলিশের প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র সিরাজগঞ্জের কোথাও মা ইলিশ ধরতে দেয়া হবেনা। যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবেন তাদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হবে। এছাড়া যদি কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এনএস/