ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

তুরস্কের অর্থনীতি গুঁড়িয়ে দেয়ার হুমকি ট্রাম্পের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪৫ পিএম, ৮ অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার

উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় অভিযানের নামে ‘সীমার বাইরে’ কিছু করলে তুরস্কের অর্থনীতি পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার একের পর এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প সিরিয়ার ওই এলাকা থেকে মার্কিন সৈন্য সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন। খবর বিবিসির।

সম্প্রতি সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। আর এ ঘোষণার পরই পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের হলে আঙ্কারার সাঁড়াশি আক্রমণের শিকার হতে পারেন উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার কুর্দি যোদ্ধারা।

কারণ, সিরিয়ার কুর্দি ওয়াইপিজি গেরিলাদেরকে তুরস্ক দেশটিতে নিষিদ্ধ বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সহযোগী মনে করে। এমনকি ওই এলাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সিরীয় সীমান্তে ‘অভিযানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে’ বলে টুইটারে জানায়।

আর এরপরই ট্রাম্প টুইটারে সতর্ক করে বলেন, ‘সীমার বাইরে’ কিছু করলে তিনি তুরস্কের অর্থনীতি ‘পুরোপুরি ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন’ করে দেবেন।

সোমবার পেন্টাগনের মুখপাত্র জনাথন হফম্যানও সিরিয়ায় অভিযানের ব্যাপারে আঙ্কারাকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, “উত্তর সিরিয়ায় তুর্কি অভিযানকে যে আমরা সমর্থন করছি না, প্রেসিডেন্টের মতো মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও তা সুস্পষ্ট ভাষায় জানাতে চায়।” 

সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোগানও বলেছেন, কুর্দি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তার অভিযানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সীমান্তে ২০ লাখ সিরীয় শরণার্থীর জন্য একটি ‘নিরাপদ এলাকা’ প্রতিষ্ঠা করা। আট বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়া থেকে পালিয়ে যাওয়া ৩৬ লাখেরও বেশি শরণার্থী এখন তুরস্কে অবস্থান করছে বলে ধারণা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার।

এদিকে, সিরিয়ায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটবিরোধী লড়াইয়ের মিত্র কুর্দিদের পাশ থেকে সরে এসে এভাবে তাদের ওপর আক্রমণের পথ করে দেয়ায় প্রভাবশালী রিপাবলিকানদেরও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সিদ্ধান্ত বদলাতেও অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের নেতা মিচ ম্যাককনেলও উত্তরপূর্ব সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কড়া সমালোচনা করেছেন। এভাবে সৈন্য সরিয়ে নেয়ার ফলে রাশিয়া, ইরান ও আসাদের লাভ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সৈন্য সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত প্রভাবশালী রিপাবলিকান লিন্ডসে গ্রাহামও। ট্রাম্পকে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য করতে সিনেটে প্রস্তাব আনবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি কুর্দিদেরকে এভাবে ‘মৃত্যুর মুখে ছেড়ে আসাকে ভুল’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি প্রেসিডেন্টকে তার এই ‘বিপদজনক সিদ্ধান্ত’ বদলাতে অনুরোধ করেছেন।

অন্যদিকে, কুর্দি নেতৃত্বাধীন একটি গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের এই সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে ‘পেছন থেকে ছুরি মারা’ বলে অভিহিত করেছে।

বৈশ্বিক সামরিক জোট ন্যাটো'র সদস্য এই দুই দেশ একসময় একে অপরের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশ দুটির মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে টানাপোড়েন দেখা দেয়। কূটনৈতিক ওই টানাপোড়েনের সূত্র ধরেই গত বছর তুরস্কের বেশ কিছু পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছিল দেশটির বেশকিছু কর্মকর্তার ওপর।

এনএস/