ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

আবরার হত্যা: হতবাক জড়িতদের পরিবার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:১৮ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০১:২০ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যায় ফুঁসে উঠেছে সারাদেশ। বিচার দাবিতে উত্তাল দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন সংগঠনের একটাই দাবি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যার বিচার করা।

দেশের আপামর জনসাধারণ যখন এই হত্যার বিচারের দাবিতে একমত তখন এই হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বাবা-মায়েরা হতবাক। তারাও মনে করছেন, একজন মেধাবী ছাত্রকে কিভাবে মেধাবীছাত্ররা পিটিয়ে হত্যা করতে পারে। নিজেরাই নিজেদের কাছে প্রশ্ন করছেন বারবার। এটা কিভাবে সম্ভব। নিজেদের মধ্যে অনুশোচনা হচ্ছে বারবার। এ কাজ আমার ছেলে করতে পারে না।

আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার রাজশাহীর মোহনপুরের অনিক সরকার এবং পবার মেহেদী হাসান রবিনের পরিবারের সদস্যরা মুষড়ে পড়েছেন। হতবাক হয়েছেন উভয়ের বাবা-মা। 

বৃহস্পতিবার দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 

প্রতিবেদনে পরিবারের বরাত দিয়ে বলা হয়, অসত্ চক্রের সঙ্গে জড়িত হয়েই অনিক সরকার ও মেহেদী হাসান রবিন এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তারাও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

জানা গেছে, অনিক সরকারের বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বড়ইকুড়ি গ্রামে। অনিক ঐ গ্রামের বাসিন্দা ও কাপড় ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি উপজেলার কৃষ্ণপুরে। কিন্তু ব্যবসার প্রয়োজনে পুরো পরিবার মোহনপুর উপজেলা সদরের বড়ইকুড়ি গ্রামে বসবাস করেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে অনিক ছোট। এছাড়া তাদের পেট্রোল পাম্প এবং সারের ডিলারশীপের ব্যবসা রয়েছে। ছোটো ছেলে অনিক সরকারকে নিয়েই পরিবারের বড়ো স্বপ্ন ছিল। কিন্তু আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের স্বপ্ন এখন ফিকে হয়ে এসেছে। এছাড়া আনোয়ার হোসেনের পরিবারে নেমে এসেছে গভীর হতাশা। মুষড়ে পড়েছেন অনিকের বাবা-মা।

অনিকের সম্পর্কে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই ছেলেকে নিয়ে ছিল আমার অনেক আশা-ভরসা। আজ সব মাটি হতে চলেছে। আমি ভাবতেও পারি না এমন মেধাবী একটা ছেলে আরেকজন মেধাবীকে হত্যা করবে। তার তো কোনো অভাব ছিল না। আমি তাকে কোনো অভাব বুঝতে দেইনি। কিন্তু কেন সে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লো? আবার কেনই বা আরেকজনকে হত্যা করতে গেল? হয়তো সঙ্গদোষে এমন কাণ্ডে জড়িত হতে পারে। কাজেই ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে আমি বিচার করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ 

তিনি বলেন, ‘অনিক মোহনপুর সরকারি স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে ঢাকার নটর ডেম কলেজে ভর্তি হয়। সেখান থেকে এইচএসসি পাশের পর বুয়েটে ভর্তি হয়। কোন সাবজেক্টে পড়ে বলতে পারবেন না। সে রাজনীতি করত এটাও জানতেন না। তবে মাস দুয়েক আগে শুনেছিলেন ছেলে ক্যাপ্টেন হয়েছে। কিন্তু কীসের ক্যাপ্টেন বলতে পারবেন না। ঐ কথা শোনার পরই তাকে বকাঝকা করেছিলেন। পড়তে গেছিস পড়বি। অন্য কিছুতে জড়াতে পারবি না।’

অন্যদিকে রবিনের বাড়ি জেলার পবার কাটাখালি পৌর এলাকার কাপাশিয়া পূর্বপাড়ায়। রবিনের বাবা মাকসুদ আলী পুঠিয়ার ভড়ুয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। তার একমাত্র সন্তান রবিন। রবিন বাবার স্কুল থেকেই এসএসসি পাশ করে রাজশাহী সরকারি নিউ গভার্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। 

এরপর বুয়েটে ভর্তি হয়। আর মাত্র সাত মাস পরেই রবিন পাশ করে বের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার খবরে রবিনের পরিবারেও নেমে এসেছে হতাশার ছাপ। এ ঘটনায় রবিনের মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। 

তারা বলেন, ‘আমরা তো ছেলেকে পড়তে পাঠিয়েছি। কিন্তু সে হত্যাকাণ্ডে জড়াবে কেন? 

এছাড়া দৈনিক সমকালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নির্যাতনকারীদের মধ্যে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার একাই অন্তত দেড়শ' বার আবরারকে আঘাত করেন। অনিক মারধরের সময় নিজের ভূমিকার বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিয়েছেন। 

তিনি বলেছেন, আবরার একেক সময়ে একেক তথ্য দিচ্ছিলেন। এজন্য তার মাথা গরম হয়ে যায়। ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি তাকে বারবার মারছিলেন। বর্বরোচিত নির্যাতনের একপর্যায়ে আবরার যখন নিস্তেজ হয়ে পড়ছিলেন, তারা বলছিল- ‘ও ঢং ধরেছে।’ হামলাকারীদের নানা পরামর্শ দেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল। আবরার হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃতরা রিমান্ডে এ ঘটনায় তাদের প্রত্যেকের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। কয়েকজন ‘অনুতপ্ত’ হয়ে গোয়েন্দাদের এও বলেন, ‘ক্রসফায়ার নইলে ফাঁসি দিয়ে দেন। ওই হত্যার দায় নিয়ে বাঁচতে চাই না।’

প্রসঙ্গত, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার জের ধরে আবরার ফাহাদকে রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দুইতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পরদিন সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯ জন ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। 

নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।