আবরার হত্যা : অমিত সাহার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:২১ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:৫৫ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ঘটনাস্থলে হয়তো অমিত সাহ উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে আবরার হত্যায় প্রত্যক্ষভাবে না থাকলেও পরোক্ষভাবে তার দায়দায়িত্ব রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ,পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তা উঠে এসেছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া স্ট্যাটাস বা শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে কিনা। এর জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি অনেকগুলো ঘটনার কারণের মধ্যে একটি কারণ হতে পারে। এটিই একমাত্র কারণ কিনা, তা এখনই বলা যাবে না। আরও কারণ থাকতে পারে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, এজাহার দায়েরের আগেই পুলিশ সদস্যরা তৎপরতা শুরু করেন। এ কারণে মামলার এজাহার দায়েরের আগে আমরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১০ জনকে আটক করতে সক্ষম হই। এজাহার দায়েরের পরে আমরা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। খুবই দ্রুততার সঙ্গে আরও ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি জানান, এজাহারে নাম নেই, কিন্তু পরে তদন্তকালে অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আরও ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজও (বৃহস্পতিবার) ডিবির একাধিক টিম দুজনকে গ্রেফতার করেছে।
এজহারবহির্ভূত গ্রেফতার ৩ জন হলো অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ও শামসুল আরেফীন রাফা।
অমিত সাহার ব্যাপারে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, একজন মানুষ ঘটনাস্থলে থেকেও ঘটনা সংগঠিত করতে পারে, আবার দেখা যায় ঘটনাস্থলে না থেকেও করতে পারে। প্রাথমিক তদন্তে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, অমিত সাহা ঘটনাস্থলে ছিল না। তবে এই ঘটনায় তার দায়-দায়িত্ব রয়েছে। প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ দায়-দায়িত্ব রয়েছে, সে কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। অমিত বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৬তম ব্যাচের ছাত্র।
শুরু থেকেই অমিত সাহার নাম আলোচনার শীর্ষে ছিল। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লিখেন, অমিত সাহার বিরুদ্ধে আবরার ফাহাদকে হত্যার অভিযোগ থাকলেও মামলা থেকে কেন তার নাম বাদ দেওয়া হলো।
এর আগে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে অমিত সাহা প্রত্যক্ষ্যভাবে জড়িত।
এ বিষয় পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ-ডিবির (ঢাকা দক্ষিণ) এডিসি রাজীব আল মাসুদ বলেছিলেন, ‘বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক ও পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র অমিত সাহাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়নি। তদন্ত সাপেক্ষে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সোহরাব হোসেন বলেন, 'ভিডিও ফুটেজ দেখে যাদের শনাক্ত করা হয়েছে, কেবল তাদের নামেই মামলা হয়েছে। এর পরও তদন্ত হবে। তদন্তে যদি অমিতের সংশ্নিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়, অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।'
গত মঙ্গলবার বুয়েট ক্যাম্পাসের সামনে ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহিম বলেন, ‘২০১১ নম্বর কক্ষটি অমিত সাহার। ঘটনার সময় তার নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কর্মীরা আবরারকে বেদম মারধর করেন। পরে তিনিসহ অন্যরা বেরিয়ে যান।’
প্রসঙ্গত, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার জের ধরে আবরার ফাহাদকে রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দুইতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরদিন সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
এদিকে, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের ১১ নেতাকর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি। অভিযোগের সত্যতা উদ্ঘাটনে গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি আজ তাদের সংশ্লিষ্টতার পেয়েছে বলে জানিয়েছে।