ফসল সংগ্রহে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম কমাবে ‘কৃষক অ্যাপস’
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:২৭ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০১৯ শুক্রবার
ধান, চাল ও গম সংগ্রহ অভিযানে ‘কৃষক অ্যাপস’ চালু করতে যাচ্ছে খাদ্য অধিদফতর। তালিকাভুক্ত যে কোনো কৃষক এই অ্যাপসে প্রবেশ করে জমির পরিমাণ, ফসলের নাম ও কী পরিমাণ বিক্রি করতে চান তা জানাতে পারবেন। এটি কার্যকর হলে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য দিতে মধ্যস্বত্বভোগী, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের পিছে পিছে ঘুরতে হবে না কৃষকদের।
এ অ্যাপসের মাধ্যমে কী পরিমাণ শস্য কেনা হবে তা মনোনীত কৃষককে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। জমির পরিমাণের তুলনায় বেশি ধান বিক্রি করলে প্রতারণা হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য দুর্নীতির মামলার মুখোমুখি হতে হবে সংশ্লিষ্ট কৃষককে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। বুধবার নিজ দফতরে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাব মন্ত্রণালয় অনুমোদন করলে কৃষকের কাছ থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ধান, গম এবং মিলারদের কাছ থেকে চাল কেনা হবে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এ সংক্রান্ত অ্যাপস তৈরি করেছে। প্রাথমিকভাবে আট বিভাগের ১৬টি উপজেলায় এটি শুরু হচ্ছে। পরে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে কার্যকর হবে।
জানা গেছে, যে কোনো কৃষক অ্যাপসটি ডাউনলোড করে নিতে পারে বা ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রেও এ সেবা পাওয়া যাবে। অ্যাপসে প্রবেশ করে প্রথমে কৃষক নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে নাম নিবন্ধনের আবেদন করবেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালিকা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত কৃষক হলে তার নিবন্ধন করে নেবেন। সংগ্রহ অভিযান শুরু হলে নিবন্ধিত কৃষক অ্যাপসে প্রবেশ করে ধানের নাম, জমির পরিমাণ, কী পরিমাণ ধান বিক্রি করতে চান তা জানিয়ে আবেদন করবেন। এসব আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বাধীন ধান-চাল সংগ্রহ সংক্রান্ত উপজেলা কমিটির কাছে যাবে। সংগ্রহের টার্গেট, আবেদনকারীর সংখ্যা ও ধানের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। প্রয়োজনে লটারির মাধ্যমে কৃষক মনোনীত করা হবে। মনোনীত কৃষকদের এসএমএসের মাধ্যমে কবে, কোথায়, কী পরিমাণ ধান দিতে হবে তা জানিয়ে দেয়া হবে। এই এসএমএস বা প্রিন্ট কপি দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট খাদ্যগুদামে ধান ও গম সরবরাহ করতে পারবেন কৃষক। প্রয়োজনে এলাকায় সংশ্লিষ্ট কৃষকদের নাম উল্লেখ করে মাইকিং করা হবে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এ সংক্রান্ত তথ্য ব্যাংকে পাঠালে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কৃষকের অ্যাকাউন্ডে প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করবে। একই প্রক্রিয়ায় চাল কেনা হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার চালকল মালিকদের কাছ থেকে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে শিগগিরই প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে খাদ্য অধিদফতর।
সূত্র জানায়, প্রতিটি উপজেলা কৃষি অফিসে প্রকৃত কৃষকদের তালিকা রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রকৃত কৃষকদের তালিকা ধান/গম রোপণের প্রথম ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে অনলাইনের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে তালিকা জমা দেবেন। এরপর ১০ দিন পর্যন্ত এই তালিকা উন্মুক্ত ও সংশোধনের সুযোগ থাকবে। সংশোধনের পর পুনরায় তালিকা অনলাইনে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। কৃষকের সংখ্যা বেশি হলে সফট্ওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লটারি করবেন। লটারি বিজয়ী চূড়ান্ত কৃষকদের তালিকা (যারা ধান/গম বিক্রি করতে পারবেন) প্রকাশ করবেন এবং মোবাইলে কৃষকদের কাছে এসএমএস যাবে। গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রকৃত কৃষকদের তালিকা থেকে ধান/গম ক্রয় করবেন এবং ধান/গম ক্রয় সম্পন্ন হলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অনলাইনে পুনরায় এন্ট্রি দিয়ে সাবমিট করবেন। যেসব কৃষক ধান/গম বিক্রি করতে পেরেছেন তাদের নামের তালিকা চূড়ান্তভাবে অনলাইনে প্রকাশ করবেন। সবাই জানতে পারবেন কোনো কৃষক কী পরিমাণে ধান বিক্রি করেছেন। কোনো কৃষক জমির পরিমাণের তুলনায় বেশি ধান বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আদায়ের জন্য দুর্নীতির মামলা করা হবে। অর্থাৎ যদি কেউ প্রতারণার মাধ্যমে ধান বিক্রি করে, সেটা সহজেই এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জানা যাবে এবং ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
আরকে//