আবরার হত্যা: অমিত-তোহা ৫ দিনের রিমান্ডে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৫৭ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৪:১২ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০১৯ শুক্রবার
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত হোসেন মোহাম্মদ তোহা ও আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহাকে পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন সিএমএম আদালত। শুক্রবার সকালে আদালতে হাজির করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে এর পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে এই রায় দেয় আদালত।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে অমিত সাহা ও বিকাল ৩টার দিকে গাজীপুরের মাওনা থেকে তোহাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। অমিত বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৬তম ব্যাচের ছাত্র। এমই বিভাগের ১৭ তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থী এজাহারনামীয় আসামি তোহা। আবরার হত্যাকাণ্ডের পর তিনি পলাতক ছিলেন।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েট ক্যাম্পাসে আলোচনার শীর্ষে আছেন অমিত সাহা। সব ছাত্রছাত্রীর মুখে তার নাম। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক তিনি। তার কক্ষেই ডেকে নিয়ে প্রথমে পেটানো হয়।
আবরার হত্যাকাণ্ডে অমিত সাহা যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, সেই অভিযোগ দুদিন ধরেই করে আসছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, আবরার ফাহাদ হলে আছেন কিনা সে বিষয়ে প্রথম খোঁজ নিয়েছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের উপআইনবিষয়ক সম্পাদক অমিত সাহা। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় অমিত সাহা আবরারের এক বন্ধুকে ইংরেজি অক্ষরে আবরার ফাহাদ হলে আছে কিনা' মেসেজ দেন।
মেসেজের এক ঘণ্টার মধ্যেই শেরেবাংলা হলের ছাত্রলীগ নেতারা আবরারকে ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায়। ২০১১ নম্বর কক্ষে এনে তাকে লাঠি, চাপাতি ও স্টাম্প দিয়ে পেটায়।
সূত্র বলছে, ৬ আগস্ট রাতে অমিত সাহার রুমে প্রথম দফায় মারধরের নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল। তার সঙ্গে মারধর শুরু করেন বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ও উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল। পরে যোগ দেন অনিক, জিয়ন, মনির ও মোজাহিদুলসহ অন্যরা। প্রথম দফায় মারধর চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। এর পর রাতের খাবার খাওয়ানো হয় আবরারকে। খাওয়ানো হয় ব্যথানাশক ট্যাবলেটও। দেয়া হয় মলম। দ্বিতীয় দফা মারধর শুরুর সময় অনিক ছিলেন সবচেয়ে মারমুখী।
আবরার এ সময় বারবার বমি করছিলেন। একপর্যায়ে তাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় মুন্নার কক্ষে। সেখানে আবরারের শরীরের ওপর অনিক ক্রিকেট স্টাম্প ভাঙেন। পরে আরেকটি স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। তৃতীয় দফার মারধর শুরু হয় মুন্নার কক্ষে। তখন মধ্যরাত।
নির্মম পিটুনিতে আবরার লুটিয়ে পড়েন। এর পর নিথর দেহ টেনেহিঁচড়ে নিচে নামানোর চেষ্টা করেন ঘাতকরা। মাঝ সিঁড়িতে যেতেই তারা বুঝতে পারেন আবরার মারা গেছেন। সিঁড়িতেই মরদেহটি রেখে তখন ওই স্থান ত্যাগ করেন তারা।
প্রসঙ্গত, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার জের ধরে আবরার ফাহাদকে রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দুইতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরদিন সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৬ জন ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
এদিকে, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের ১১ নেতাকর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি। অভিযোগের সত্যতা উদ্ঘাটনে গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে বলে জানিয়েছে।
টিআর/