ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

কে হচ্ছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:২৫ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০১৯ শনিবার

চলমান শুদ্ধি অভিযানের মধ্যদিয়েই আগামী ২৩ নভেম্বর হতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংঠন যুবলীগের সপ্তম সম্মেলন। এমন সময় সংগঠনটির নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে যখন ক্যাসিনো, দুর্নীতি, টেন্ডারবাণিজ্য ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন। এর ফলে নতুন নেতৃত্ব কেমন হবে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। 

সবশেষ ২০১২ সালে যুবলীগের তিন বছর মেয়াদি কমিটি ঘোষণা করা হয়। যা শেষ হয়েছে চার বছর আগে। ফলে দীর্ঘদিন নেতৃত্বের পালা বদল থেকে দূরে রয়েছে সংগঠনটি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠনটির শীর্ষ কয়েকজন নেতার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটি সমালোচনার মুখে পড়ে। অবৈধ ক্যাসিনো ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে আটক আছেন কয়েকজন নেতা। ফলে নতুন নেতৃত্বে কাকে আনা যায়, তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে সরকারের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত।

১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণির হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় যুবলীগ। এরপর শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানকের মত নেতারা সংগঠটির দায়িত্ব পালন করেন। সেসময় দলকে অত্যন্ত সুসংগঠিত করতে পারলেও বর্তমান সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী নেতৃত্বের পর থেকে সারাদেশে সংগঠনটির বিভিন্ন স্থরের নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে থাকে। যার সবশেষ মাদক সম্রাট ক্যাসিনো, জিকে শামীমের মত গডফাদাররা। 

প্রশ্ন ওঠে বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুককে নিয়েই। এছাড়া, এ তালিকায় কয়েকজন সাংসদের নামও আছে বলে জানা গেছে। 
এমন অবস্থায় দলটির হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে। যেখানে চেয়ারম্যানের পাশাপাশি আসতে পারে সাধারণ সম্পাদকের পরিবর্তন। তবে, নতুন কমিটিতে থাকছেন না বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। এতকিছুর পর সংগঠনটির তরুণ নেতাকর্মীদের দাবি-ছাত্র ও যুব রাজনীতির অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ কর্মীবান্ধব এমন কেউ নেতৃত্বে আসুক। আর সাবেকরা চান- তরুণ, যুববান্ধব ও সৎ নেতৃত্ব। 

এদিকে, ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সপ্তম কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতে দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়েছে। আলোচনায় এসেছে অনেকের নাম। যেখানে বাদ যায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পর্যন্ত। যা রীতিমত আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। 

চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় রয়েছেন- যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ ও তার ছোট ভাই ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, বর্তমান কমিটির সদস্য শেখ ফজলে ফাহিম (শেখ সেলিমের ছেলে), যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য- শহীদ সেরনিয়াবাত, ফারুক হোসেন, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন ও ডা. মোখলেছুর রহমান হিরু।

আর সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন- বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হাসান তুহিন, অর্থ সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হালদার, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু, সহসম্পাদক তাজউদ্দীন আহমেদ।

জানতে চাইলে প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোখলেছুর রহমান হিরু গণমাধ্যমকে বলেন, সারা জীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করেছি। নেত্রী যদি দায়িত্ব দেন তাহলে আগামীতে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করবো। 

আর মুজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, সকলের চাওয়া যোগ্য ও পরিচ্ছন্ন কেউ নেতৃত্বে আসুক। সেক্ষেত্রে নবীন ও অভিজ্ঞদের সমন্বয় থাকলে সংগঠন সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া সহজ হবে।
 
বর্তমান যুবলীগের কর্মকাণ্ডে সবচেয়ে হতাশ হয়েছে তৃণমুল নেতাকর্মীরা। তাই তাদের দাবি নতুন নেতৃত্ব এমন কাউকে দেয়া হোক, যিনি যুবলীগের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে বদ্ধ পরিকর। 

এদিকে, দলের নেতৃত্বের পরিবর্তনের পাশাপাশি আলোচনায় যুক্ত হয়েছে বয়সসীমা নিয়েও। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ ফজলুর হক মণি ৩৩ বছর বয়সে যুবলীগের নেতৃত্বে আসেন। পরবর্তীতে সংগঠনটির কাঠামো থেকে বয়সের ব্যাপারটি বাদ দিলে সময়ের ব্যবধানে নেতৃত্বে বয়সের ভারটা একটু বেশি পড়েছে। যা বর্তমান চেয়ারম্যান পর্যন্ত পৌঁছেছে। সংগঠনটির বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বয়স ৭১ বছর।
 
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী রোববার যুবলীগ নেতাদের নিয়ে গণভবনে বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
 
এছাড়া, বর্তমান কমিটির বড় একটা অংশের বয়স পঞ্চাশোর্ধ্ব। ফলে নতুন কমিটিতে যদি ৫০-৬০ বছর বয়স্কদের জায়গা দেয়া হয়, তাহলে বর্তমান কমিটির অনেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাবেন। আর যদি পঞ্চাশের নিচে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়, তাহলে ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করেছেন এমন অনেক অভিজ্ঞরা সুযোগ পাবেন। যেখানে তরুণ নেতৃত্ব দেখবে ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটি।

আই/আরকে