বুড়ির বাঁধে মাছ শিকারের মহোৎসব, মানুষের ঢল
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৭:৩১ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০১৯ শনিবার
কারও হাতে পলো, কারও হাতে ছাবিজাল, খেয়াজাল, টানাজাল বা ছেঁকাজাল। কেউবা ছোট নৌকায়, কেউবা কলা গাছের ভেলায় চড়ে ছুড়ে দিচ্ছেন পানিতে। যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম ছিলনা, বসে ছিলেন না তারাও। খালি হাত দিয়েই ব্যস্ত ছিলেন কাঁদার মাঝে মাছ খোঁজার কাজে।আর এসব দৃশ্য দেখে আনন্দে মাতোয়ারা হচ্ছিলেন নদীর তীরে ভীড় জমানো নানান বয়সের হাজার হাজার মানুষ। তাদের অনেকেই আবার মাঝে মাঝে একসাথে চিৎকার দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছেলেন মাছ শিকারিদের।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) ভোররাত থেকে দিনব্যাপী এমনই আনন্দঘন পরিবেশে মাছ ধরার মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ও চিলারং ইউনিয়নের শুক নদীতে নির্মিত বুড়ির বাঁধ এলাকায়।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ভোররাতে বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় শুরু হয় এ মাছ ধরার মহোৎসব। যাতে যোগ দিতে শুধু আশেপাশের গ্রামের নয়, আসেন জেলার বিভিন্ন এলাকার এমনকি পার্শ্ববর্তী জেলার হাজার হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে মাছ ধরতে দিনব্যাপী ব্যস্ত ছিলেন নানান বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশু। বাদ যাননি বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও।
তাদের পাশাপাশি পেশাদার জেলেরাও মাছ শিকার করে বাঁধ এলাকাতেই বসিয়েছিলেন টাটকা মাছ বিক্রির পসরা সাজিয়ে। অনেকে সেখানে গিয়েছিলেন অল্প দামে সেই মাছ কেনার আশায়। শুধু মাছের দোকান নয়, সেখানে বসেছিল নানান স্বাদের, নানান রঙের খাবারের দোকানও। সবার ভিড়ে ও ব্যস্ততায় পুরো এলাকা উৎসবে পরিণত হয়। আর এত মানুষের ভীড়ের সুযোগ নিয়ে অনেক বিক্রেতা মাছের দাম হাঁকিয়েছেন ইচ্ছেমত।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে ১৯৫১ সালে নদীটিতে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে ১৯৫৭ সালে দিকে শেষ হলেও বাঁধটি কারও কোন কাজে আসেনি। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালের দিকে এলাকার জমিতে সেচ সুবিধার লক্ষ্যে একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। দুটি ক্যানেলের মাধ্যমে কৃষকের ২ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া হয়।
বর্ষা মৌসুমে এই জলকপাটের ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে উজানে ধরে রাখা পানিতে অভয়াশ্রম বানিয়ে প্রতিবছর জেলা মৎস্য অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা অবমুক্ত করে থাকেন। আর এ পোনাগুলো যাতে কেউ শিকার করতে না পারে তা দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ।
এরপর থেকেই প্রতিবছর শীতের শুরুতে পানির প্রয়োজন শেষ হলে বাঁধের জলকপাট খুলে দিয়ে এসব মাছ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবেই বছরের পর বছর বুড়ির বাঁধ এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে মাছ ধরার উৎসব।
এদিন মাছ ধরতে আসা সোহেল রানা জানান, রাতেই এখানে এসেছি। শুনেছিলাম এখানে মাছ ধরার উৎসব হয়। প্রতিবার নাকি এই উৎসবটা হয়। তাই এবারও এসেছি। পুটি মাছ, দেশীয় গুড়া মাছ, রুই মাছসহ বিভিন্ন প্রকারের মাছ জালে আটকা পড়েছে। আমার মতো আরও অনেকে রাতেই এসেছেন এখানে।
এমএস/