কী হবে রাশেদ খান মেননের
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:৪৫ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০১৯ রবিবার | আপডেট: ০৫:৪৮ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০১৯ রবিবার
ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু হলে বের হয়ে আসে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননের নাম। সাবেক এ মন্ত্রী ক্যাসিনোর ব্যবসা থেকে ৫ শতাংশ নিতেন বলেও কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার বরিশালের এক অনুষ্ঠানে গত জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি দাবি করেন মেনন। মেননের অবস্থান ও মন্তব্য বেশ আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক যোগাযোগ এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘মন্ত্রী হলে কি তিনি (মেনন) এ কথা বলতেন?’ আজ রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
রাশেদে খান মেননের এ বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এতদিন পরে কেন? এই সময় কেন? নির্বাচন তো অনেকদিন আগে হয়েছে। মন্ত্রী হলে কি তিনি এ কথা বলতেন।’
গতকাল শনিবার বরিশালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমিও নির্বাচিত হয়েছি। তারপরও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এমনকি পরবর্তীতে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ।’
ক্যাসিনোর ঘটনায় এরই মধ্যে গ্রেপ্তার যুবলীগের দুই নেতা ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তারা মেননের কথা জানান। রিমান্ডে খালেদ জানিয়েছেন, ক্যাসিনো কারবার থেকে প্রতি মাসে মেনন চার লাখ টাকা নিতেন। এ ছাড়া সম্রাটের কাছ থেকেও অর্থ নিতেন তিনি। তবে প্রতি মাসে প্রাপ্ত টাকার অঙ্ক বাড়াতে মেনন একাধিকবার ডেকে চাপও দিয়েছেন বলে দাবি করেন খালেদ। স্থানীয় এমপি হিসেবে মেননকে অবগত করেই মতিঝিল ও আরামবাগের বিভিন্ন ক্লাবে ক্যাসিনো খোলা হয়। ফকিরাপুলে ক্যাসিনো চালানো ইয়ংমেনস ক্লাবের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ছিলেন রাশেদ খান মেনন। ওই ক্লাবের সভাপতি ছিলেন খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাশেদ খান মেনন। ইয়ংমেনস ক্লাবে র্যাবের অভিযানের সময় দেখা যায় সেখানে একটি কক্ষে রাশেদ খান মেননের ছবি ঝোলানো রয়েছে। একটি ক্রেস্ট প্রদান বা গ্রহণ করছেন- এমন আরেকটি ছবিও ঝুলছিল।
ক্যাসিনো থেকে প্রতি মাসে নিয়মিত মাসোহারা না পেলে অকথ্য ভাষায় যুবলীগের নেতাদের গালিগালাজ করতেন সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের। জুয়ার টাকায় তিনি ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণসহ বিলাসী জীবনযাপন শুরু করেন বর্ষীয়ান এই বামপন্থী নেতা। ইয়ংমেনস ক্লাব থেকে র্যাবের উদ্ধার করা চাঁদাবাজির খাতায় মেননের নাম রয়েছে ৫নং সিরিয়ালে। যিনি প্রতি মাসে সম্রাটের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নিতেন। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ওরফে ক্যাসিনো সম্রাট এসব তথ্য দিয়েছেন।
এছাড়া রাজনৈতিক নেতা নামধারী অনেকেই সম্রাটের দফতরে হাজির হতেন জুয়ার টাকার ভাগ নিতে। প্রতি মাসে ব্যাগভর্তি করে জুয়ার টাকা নিয়ে তারা বেরিয়ে যেতেন। সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজেও এর প্রমাণ রয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন নেতা ছাড়াও টাকার ভাগ পেতেন পল্টন, মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকার প্রভাবশালীরা।
এদিকে ইয়ংমেনস ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিবসহ সংশ্নিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর এ নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।
২০১৬ সালের ১৯ জুন ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের ৩১ সদস্যের নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এতে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে সভাপতি ও হাজি মো. সাব্বির হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ফকিরাপুলের এই ক্লাবটির প্যাভিলিয়নে কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় ওই নতুন কমিটি অনুমোদনের পাশাপাশি তৎকালীন বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে ক্লাবের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। যুবলীগ নেতা খালেদের সঙ্গে ওই ক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে ফিতা কাটতে তাকে দেখা গেছে।
মেননের আশ্রয় পেয়ে রাজধানীর বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন খালেদ ও স্বেচ্ছসেবকলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আরিফুর রহমান টিটু। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন কাজ ও শিক্ষার্থী ভর্তিতে বিপুল অংকের টাকা লেনদেন হয়। খালেদের মাধ্যমে এই টাকার একটি বড় অংশ চলে যেত রাশেদ খান মেননের পকেটে।
তবে এমন অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘এ সব বিষয় সত্য নয়। মিডিয়ায় এ সব বিষয় সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে মাত্র।’ গত জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে রাশেদ খান মেননের মন্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এ কথা শুধু কাদের সাহেব কেন। অনেকেই বলছেন। আমি নাকি মন্ত্রীত্ব পাইনি বলে এমন মন্তব্য করছি। আমি তো মিথ্যা বলিনি।’
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত ৭ সেপ্টেম্বর দলের যৌথ সভায় দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেন।
এমএস/এসি