ভোলায় সংঘর্ষ: মুসলিম ঐক্য পরিষদের আলটিমেটাম
ভোলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪:০২ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০১৯ সোমবার
ভোলার বোরহানউদ্দিনে পুলিশের সঙ্গে মুসল্লীদের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত ও পুলিশসহ দেড় শতাধিক আহতের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে দুইটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশের ওপর হামলার মামলায় অজ্ঞাত ৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। ফেসবুকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিপ্লব চন্দ্র শুভ, ঈমন এবং শাকিকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদ। ভোলার পুলিশ সুপার ও বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহারসহ ৬দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেওয়া হয়।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে ভোলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এসকল দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভোলা জেলার যুগ্ম সদস্য সচিব মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আল্লাহ এবং নবী রাসুলদের নিয়ে কটূক্তিকারীর বিরুদ্ধে যদি দেশে কঠিন শাস্তির আইন থাকতো তাহলে রোববার বোরহানউদ্দিনে পুলিশের গুলিতে ৪ মুসলিমকে প্রাণ হারাতে হতো না। আমরা এ ঘটনায় হতাহতের জন্য পুলিশকেই দায়ী করছি।’
তাদের দাবিগুলো হলো- ১.মহানবী (স.) ও মহান আল্লাহ তায়ালা এবং ইসলামের ব্যঙ্গ ও কটূক্তিকারীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আইন করতে হবে। ২. বিপ্লব চন্দ্র শুভ’র সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করতে হবে। ৩. সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৪. আহতদেরকে সরকারি খরচে চিকিৎসা দিতে হবে। ৫. এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদেরকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। ৬. আমরা সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
উপরোক্ত দাবিগুলো উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের সকল দাবি পূরণের সার্বিক ব্যবস্থা ও সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ঘোষণা দেয়া না হলে সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদ বৃহত্তর কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
এ সময় সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মাওলানা বশির উদ্দিন বলেন, ‘পরিস্থিতি শান্ত রাখার স্বার্থে সরকারি স্কুল মাঠে আজকে যে সমাবেশ করার কথা ছিল তা স্থগিত করা হয়েছে। তবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। মঙ্গলবার বিকালে ভোলার প্রতিটি উপজেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি, বুধবার বেলা ১১টায় জেলা শহরে মানববন্ধন এবং বৃহস্পতিবার বিকালে নিহতদের জন্য দোয়া মোনাজাতের কর্মসূচি পালন করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ইয়াকুব আলী চৌধুরী, মাওলানা মো. ইউসুফ, মাওলানা আতাহার আলী, মাওলানা তৈয়বুর রহমান, মাওলানা মহিউদ্দিন, মাওলানা মাহাবুবুর রহমান, সংগঠনের সদস্য সচিব মাওলানা তাজুদ্দিন ফারুকী প্রমূখ।
অন্যদিকে রোববারের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের উপ পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শফিকুল ইসলাম। সোমবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ সময় তিনি জানান, রোববার পুলিশের উপর হামলা, কর্তব্য কাজে বাঁধা এবং ৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় রাতেই বোরহানউদ্দিন থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আবিদ হোসেন বাদি হয়ে এ একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত ৪ থেকে ৫ হাজার বিক্ষোভকারীকে আসামী করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ফেসবুকে হযরত মুহাম্মদ (স)কে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিপ্লব চন্দ্র শুভ, ঈমন এবং শাকিল নামের ৩ জনের বিরুদ্ধে বোরহানউদ্দিন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুপুরের দিকে ভোলায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য শহরে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।
এমএস/