অনিশ্চিত টাইগারদের ভারত সফর!
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৩৬ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৬:১৯ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০১৯ সোমবার
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব ও অন্যান্য ক্রিকেটাররা।
পারিশ্রমিক, ম্যাচ-ফি, যাতায়াত সুবিধা বাড়ানোসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন জাতীয় দলসহ দেশের বিভিন্নস্তরের ক্রিকেটাররা। এসব দাবি না মানা পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট খেলা বর্জনের ঘোষণাও দিয়েছেন ক্রিকেটারদের মুখপাত্র সাকিব আল হাসান। সাকিবদের এ ঘোষণার ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের আসন্ন ভারত সফর।
সোমবার সকাল থেকেই গুঞ্জন ছিল মিরপুরে। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত আসতে পারে ক্রিকেটারদের কাছ থেকে। হয়েছেও তাই। ১১ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ক্রিকেটাররা।
এর মধ্যে জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটও অন্তর্ভুক্ত। অবশ্য বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট এর আওতায় আসেনি এখনও। আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি হয়ে সাকিব জানিয়েছেন ‘জাতীয় দল থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারসহ সবাই এই ধর্মঘটের অন্তর্ভুক্ত। তা আজ থেকেই কার্যকর। এখানে জাতীয় দলের প্রস্তুতি বলেন আর আন্তর্জাতিক বলেন, সবগুলোই অন্তর্গত।’
সংবাদ সম্মেলনে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, রুবেল হোসেন, নাঈম ইসলাম, এনামুল হক বিজয়, নুরুল হাসান সোহান, নাজমুল ইসলাম অপুসহ সিনিয়র ক্রিকেটারা উপস্থিত ছিলেন। সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটাররাও। ক্রিকেটারদের এ আন্দোলনের ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের আসন্ন ভারত সফর।
ভারতের বিপক্ষে আসন্ন এ সফরে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। যে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি আগামী ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। পরে ৭ এবং ১০ নভেম্বর বাকি দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে রাজকোট এবং নাগপুরে। ম্যাচগুলো শুরু হওয়ার কথা বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৬টায়। আর এ উপলক্ষ্যে গত (১৭ অক্টোবর) সাকিব আল হাসানকে অধিনায়ক করে দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
এদিকে, টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে দুই টেস্টের এক সিরিজে মুখোমুখি হওয়ার কথা দু'দলের। তবে এই সময়ের মধ্যে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ডের সমঝোতা না হলে ঝুলে যাবে টাইগারদের ভারত সফর। একইসঙ্গে শঙ্কায় পড়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)ও।
আসলে বিপিএলই উস্কে দিয়েছে ক্রিকেটারদের এই আন্দোলনকে। গত মাসে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক মডেল থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয় বিসিবি। নিজেদের আয়োজনে সব কিছু করবে এমন সিদ্ধান্ত আসায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ক্রিকেটাররা। কমে যেতে পারে উপার্জন। এমনকি এই মাসে শুরু হওয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের ম্যাচ ফি না বাড়ানোয় বিসিবির ওপর আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছেন তারা।
এর আগে বাড়ানোর আশ্বাস দেয় বিসিবি। কিন্তু চলতি জাতীয় লিগের তিন ম্যাচ পার হয়ে গেলেও বাড়ানো হয়নি এই ম্যাচ ফি। আগের মতোই প্রথম স্তরের ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি ৩৫ হাজার ও দ্বিতীয় স্তরের ম্যাচ ফি রাখা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। এ নিয়ে বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার এর আগেও অসন্তোষের কথা জানিয়েছিলেন। এছাড়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দল বদল চেয়েছিলেন ক্রিকেটাররা।
বেশ কয়েকমাস ধরেই এমন উদ্বিগ্নের বিষয়টি জানিয়ে আসছিলেন পেশাদার ক্রিকেটাররা। সর্বশেষ সাকিব আল হাসান নিজেই একটি গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে দমনমূলক নীতিতে চলা হচ্ছে। তাদের আরও ভালোভাবে দেখভাল করা উচিত। এমনকি, বাংলাদেশের ক্রিকেটে দীর্ঘমেয়াদী কোনও পরিকল্পনা নেই বলেও মন্তব্য করেন বিশ্বসেরা এই অলরাউণ্ডার।
যা নিয়ে উপরে উপরে সব ঠিকঠাক মনে হলেও ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে ক্রিকেটারদের মাঝে। বিসিবির সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্তের কারণেই এই ক্ষোভ। তাদের মতে, দেশের ক্রিকেট ঠিকভাবে চলছে না।
সম্প্রতি বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রথা বিলুপ্ত করেছে বিসিবি। গত মাসে দেশীয় টি-টোয়েন্টি লিগ বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিই তুলে দেওয়ার কথা জানান বিসিবি সভাপতি। এবারের আসরটি নাকি বিসিবিই আয়োজন করবে। এতে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে লেগ স্পিনার খেলানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাছাড়া ক্রিকেটারদের সম্মানী কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় লিগেও চলছে নানা অনিয়ম। এসব নিয়েই এবার সোচ্চার হলেন ক্রিকেটাররা। ডাক দিলেন ধর্মঘটের।
মূলত ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রথা বিলুপ্তির কারণে পেশাদার ক্রিকেটারদের আয়-রোজগার অনেকটাই কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বারবার বলার পরেও এনসিএলে সেই ২৫-৩০ হাজার টাকা ম্যাচ ফি পেয়ে আসছেন ক্রিকেটাররা। যা বাড়ানো হচ্ছে না।
অন্যদিকে সবচেয়ে জমজমাট ঘরোয়া আসর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও গত কয়েক বছর ধরে পারিশ্রমিক কমে যাওয়ার ব্যাপারটিও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে ক্রিকেটারদের। আর সেই ক্ষোভ থেকেই টাইগারদের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটলো এবার।
তবে ক্রিকেটারদের এ আন্দোলনের মুখে তাদের এসব দাবি আমলে নিয়ে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছে বিসিবি। এ বিষয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সোমবার বিকেলে বলেন, ‘আমরা বিষয়টা মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবো।’
নিজাম উদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, ‘খেলোয়াড়রা বোর্ডেরই একটা অংশ। তাদের যে দাবি আছে সে বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
এনএস/