ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় নুসরাত হত্যা মামলার রায়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:০৩ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৬:০৫ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। চলতি বছরে আগুনের কুন্ডলিতে ঝলসে যাওয়া এক প্রতিবাদি নারী কণ্ঠস্বর। যে নিজের প্রতি হওয়া যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করেছেন। অপরাধীদের কাছে নত না হয়ে শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম করে সমাজে হওয়া অন্যায়কে প্রশ্ন করেছেন। তাকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা করে কিছু বিকারগ্রস্থ সমাজপতিরা। তার হত্যা মামলায় শেষ পর্যন্ত ১৬ জন আসামীর সকলকেই মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বিচারিক আদালত। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়েছে ফেনীর নুসরাত হত্যা মামলার রায়।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রধান শিরোনাম হয়, নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে মারার দায়ে প্রধান শিক্ষকসহ ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড। 

বিবিসি জানায়, বাংলাদেশে অতি দ্রুত সময়ে এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে সাধারণত যে কোন মামলার রায় পেতে কয়েক বছর লেগে যায়। এ ধরনের হত্যা মামলা যে দেশটিতে বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে, সেখানে নুসরাত হত্যার মামলার রায় খুব অল্পদিনের মধ্যে দেয়া হয়েছে। আইনজীবী হাফেজ আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে কেউ খুন করে যে পালিয়ে যেতে পারেন না, এটি প্রমাণিত। 

নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি। এএফপি জানিয়েছে, ১৯ বছর বয়সী এক ছাত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার দায়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের একটি আদালত ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছেন। 

গত এপ্রিলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনায়; তারই কিছু বান্ধবী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনায় নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় সেই সময় দেশজুড়ে প্রচণ্ড বিক্ষোভ দেখা দেয়।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ‘যৌন হয়রানির মামলায় কিশোরীকে হত্যায় অভিযুক্ত ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

খবর এসেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরাতে। তারা খবরটিকে তৃতীয়  শিরোনাম করেছে। তাদের শিরোনাম ‘বাংলাদেশে নুসরাত জাহান রাফি হত্যায় ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড’। আলজাজিরা লিখেছে, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি ইসলামিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনার পর এক মাদ্রাসাছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলার রায় প্রকাশ করেছেন আদালত। মাদ্রাসার অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকসহ ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছিলেন নুসরাত।

অধ্যক্ষের অনুগত ছাত্রছাত্রীরা অভিযোগ তুলে নিতে নুসরাতকে হুমকি দিলে; তা প্রত্যাখ্যান করেন এই মাদ্রাসাছাত্রী। পরে তাকে মাদ্রাসা ভবনের ছাদে নিয়ে হাত-পা বেঁধে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। রাফির বাবা রায় শোনার পর বলেন, তিনি ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা করেছিলেন।
যুক্তরাজ্যের ‘দ্য গার্ডিয়ান’ লেখেছে , ‘১৯ বছরের নারীকে পুড়িয়ে মারায় বাংলাদেশে ১৬ জনের দণ্ড’। ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এছাড়াও ফেনীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাতের ঘাতকদের ফাঁসির এই আদেশের খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অব ইন্ডিয়া, সিঙ্গাপুরের দৈনিক স্ট্রেইট টাইমস, কানাডার সংবাদমাধ্যম সিটিভি নিউজ,  যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস, ফক্স নিউজ ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিশ্বের অনেক গণমাধ্যম।

দণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি হলেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

এদিন রায় ঘোষণার জন্য সকাল ৯টার দিকে আসামিদের আদালতে নেয়া হয়। আদালত চত্বরে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের এ দিন ধার্য করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ।

গত ১০ এপ্রিল এ মামলা পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এ হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৯ জুন পিবিআই ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। ২৭ জুন হতে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোট ৬১ কার্যদিবসে ৮৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২৪ অক্টোবর রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজেল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করে তার মা। 

২৮ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট এএসএম এমরানের আদালতে নুসরাত তার উপর যৌন নিপীড়নের জবানবন্দি প্রদান করে। একই দিন সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে। পরে ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়।

এমএস/এসি