ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

আজ অন্নদাশঙ্কর রায়ের মৃত্যুবার্ষিকী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:১৬ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০১৯ সোমবার

অন্নদাশঙ্কর রায়। একজন স্বনামধন্য বাঙালি কবি ও লেখক। আজ সোমবার তার মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০২ সালের আজকের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ব্রিটিশ ভারতের বর্তমান উড়িষ্যা জেলার ঢেঙ্কানলে এক কায়স্থ রায় পরিবারে ১৯০৪ সালের ১৫ মে অন্নদাশঙ্কর রায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন বিখ্যাত ছড়াকারও।

তার পিতা ছিলেন ঢেঙ্কানল রাজস্টেটের কর্মী নিমাইচরণ রায় এবং তার মাতা ছিলেন কটকের প্রসিদ্ধ পালিত বংশের কন্যা হেমনলিনী। ছোটবেলায় ঢেঙ্কানলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর সংবাদপত্রের সম্পাদনা শিখতে কলকাতা বসুমতী পত্রিকার সম্পাদক হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষের কাছে যান।

তিনি শর্টহ্যান্ড, টাইপরাইটিং এবং প্রুফরিডিং-ও শেখেন। কিন্তু এই কাজ তার ভালো লাগেনি। এরপর তিনি কটকের র‌্যাভেনশ কলেজ থেকে আই.এ পরীক্ষা দেন এবং তাতে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বি.এ পরীক্ষাতেও তিনি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম স্থানাধিকারী হন। এরপর ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে এম.এ পড়তে পড়তে আই.সি.এস পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয়বারে পূর্ববর্তী রেকর্ড ভেঙে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে এ গৌরব লাভ করেন। সেই বছরেই তিনি সরকারি খরচে আই.সি.এস হতে ইংল্যান্ড যান। সেখানে তিনি দুই বছর ছিলেন। এই সময়ে তার ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী পথে প্রবাসে বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়।

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন কন্যা অ্যালিস ভার্জিনিয়া অনফোর্ডকে বিয়ে করে তিনি তার নাম দেন লীলা রায়। লীলা রায় বহু বই বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। অন্নদাশঙ্করের অনেক লেখা লীলাময় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম নদীয়া জেলার ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজে যোগ দেন। এই পদে থেকে বিভিন্ন জেলায় কাজ করে কুমিল্লা জেলায় জজ হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সরকারি কাজে নিযুক্ত থেকে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিচার বিভাগের সেক্রেটারি হন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন।

অন্নদাশঙ্কর গদ্য ও পদ্য উভয় ক্ষেত্রেই ভুমিকা রেখেছেন। তার সাহিত্যকর্ম বাংলাদেশে বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

তার উপন্যাসগুলো হলো-সত্যাসত্য (৬টি উপন্যাস), যার যেথা দেশ, অজ্ঞাতবাস, কলঙ্কবতী, দুঃখমোচন, মর্ত্যের স্বর্গ এবং অপসারন। এছাড়াও আরও রয়েছে- আগুন নিয়ে খেলা, অসমাপিকা, পুতুল নিয়ে খেলা, না এবং কন্যা।

তার প্রবন্ধগুলো হলো- তারুন্য, আমরা, জীবনশিল্পী, একহারা, জীয়নকাঠি, দেশিকালপাত্র, প্রত্যয়, নতুন করে বাঁচা ও আধুনিকতা।

আত্মজীবনীর মধ্যে রয়েছে- বিনুর বই, পথে প্রবাসে এবং জাপানে।

তার রচিত ছোটগল্পগুলো হলো- প্রকৃতির পরিহাস, দু কান কাটা, হাসন শখী, মন পাহন, যৌবন জ্বালা, কামিনি কাঞ্চন, রুপের দায় এবং গল্প।

সাহিত্যকর্মের জন্য অন্নদাশঙ্কর রায় বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে জগত্তারিণী পুরস্কারে ভূষিত করে। তাকে দেশিকোত্তম সম্মান প্রদান করে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডিলিট) উপাধি প্রদান করে।

অন্নদাশঙ্কর রায় প্রাপ্ত অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে- আনন্দ পুরস্কার (দুইবার-১৯৮৩, ১৯৯৪), বিদ্যাসাগর পুরস্কার, শিরোমণি পুরস্কার (১৯৯৫), রবীন্দ্র পুরস্কার, নজরুল পুরস্কার, বাংলাদেশের জেবুন্নিসা পুরস্কার।

একে//