দুবলার চরে যাত্রার অপেক্ষায় কয়েক হাজার জেলে
মোংলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০১:০৯ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার
বঙ্গোপসাগর পাড়ের সুন্দরবনের দুবলার চরে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ মৌসুমকে সামনে রেখে জেলেরা সমুদ্র যাত্রার প্রস্ততি নিতে শুরু করেছেন।
আজ বুধবার পর্যন্ত ইলিশ আহরণ ও সুন্দরবনে সব ধরণের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ার পরই আগামীকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে হাজার হাজার জেলে দুবলায় যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হবেন।
ইতিমধ্যে জেলেরা দুবলায় যাওয়ার সব প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকাল থেকে মোংলার পশুর নদীর চিলা খাল এলাকায় অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে দলবদ্ধভাবে কেউ কেউ বুধবার রাতে আবার কেউ কেউ বৃহস্পতিবার ভোরে সমুদ্রে যাত্রা শুরু করবেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ অর্থাৎ ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা মাথায় নিয়েই জেলেরা জাল-নৌকা ও শুঁটকি তৈরির উপকরণাদি নিয়ে সাগর পাড়ের দুর্গম চরাঞ্চল ও গভীর সমুদ্রের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন।
বনবিভাগ জানায়, জেলেদের জন্য এবার দুবলার চরে অস্থায়ী সহস্রাধিক জেলে ঘর ও জেলে-মহাজনদের জন্য অর্ধশত ডিপো ঘর স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হবে। ২৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ নির্ধারণ করে ঘরের মাপও ঠিক করে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে বৃহৎ আকারের ঘর তৈরি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছেন বনবিভাগ।
বহু বছর ধরে অক্টোবর মাস থেকে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন সুন্দরবনের দুবলার চরে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের মৌসুম শুরু হয়ে আসলেও ৭ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশসহ সব ধরণের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় এবার ৩০ অক্টোবর রাত ও ৩১ অক্টোবর ভোর থেকেই শুরু হবে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের মৌসুম। আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত মোংলা, রামপাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী ও বরিশালসহ সুন্দরবন উপকূলের কয়েক হাজার জেলে মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির জন্য সাগর পাড়ে অস্থায়ী বসতি গড়ে তুলবেন।
এছাড়া বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলে ও মৎস্যজীবীরাও আসবেন এ চরে। ইতিমধ্যে উপকূলের হাজার হাজার জেলে ও মৎস্যজীবীরা দুবলার চর এলাকায় মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির কাজে যোগ দিতে প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়ার অপক্ষোয়।
সাগরগামী মৎস্যজীবীদের বৃহৎ সংগঠন ‘দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপ’র সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি ও অজানা আতংক মাথায় নিয়েই উপকূলীয় অঞ্চলের মৌসুমী জেলেরা সাগর কূলের জেলে পল্লী দুবলায় যাবেন। তাই এসব জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
জেলে ও মহাজন সূত্রে জানা গেছে, সমুদ্রে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে এ বছরও সুন্দরবনের দুবলার চর, মেহেরআলীর চর, আলোরকোল, অফিসকিল্লা, মাঝেরকিলা, শেলার চর ও নারকেলবাড়িয়ার চরে সমবেত হবেন হাজার হাজার জেলে-মহাজন। সাগর পাড় এবং সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ৮টি চরের মৎস্য আহরণ, শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র নিয়েই এ দুবলা জেলে পল্লী। দুবলা জেলে পল্লীর জেলেরা নিজেদের থাকা, মাছ ধরার সরঞ্জাম রাখা ও শুঁটকি তৈরির জন্য অস্থায়ী ডিপো ঘর ও মাচা তৈরি করে থাকেন। জেলেরা সমুদ্র মোহনায় বেহুন্দীসহ বিভিন্ন প্রকার জাল দিয়ে মাছ ধরে তা বাছাই করে মাছ শুঁটকি করে থাকেন। পরে সেই শুঁটকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও বাজারজাতকরণ হয়ে থাকে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, শুরু হতে যাওয়া শুঁটকি মৌসুমে দুবলার চরে অবস্থানরত জেলেরা সুন্দরবনের গাছ দিয়ে ঘর তৈরি বা জ্বালানি হিসেবেও তা ব্যবহার করতে পারবেন না। সব কাঠ তাদেরকে সঙ্গেই নিয়ে যেতে হবে বলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত শুঁটকি মৌসুমেও সুন্দরবনের গাছ ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। যারা এ আইন অমান্য করবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি। এছাড়া জেলে ও মৎস্যজীবীরা পাস-পারমিট ছাড়া সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রবেশ করলে তাদের বিরুদ্ধেও সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে রাজস্ব আদায়ে যাতে কোনও ধরণের অনিয়ম না হয় সেজন্য আগেভাগেই নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।
একে//