ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

জাবি সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে লাঞ্ছনার অভিযোগ 

জাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ০৮:০২ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৮:০৫ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার

দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ধর্মঘট পালনের সময় আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয় এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ক্যামেলিয়া শারমিন চূড়ার ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার সকালে আন্দোলনকারীদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পালনের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘ধর্মঘট পালনে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলাভবনের গেটে অবস্থান নেয়। এ সময় সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবালের নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের ওপর হামলা করেন এবং জয়কে ও চূড়াকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।’

হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষনিক বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর ব্যানারে সকাল সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবন থেকে মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি বিভিন্ন অনুষদ ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে 'উপাচার্য অপসারণ মঞ্চে' গিয়ে শেষ হয়।

এদিকে আন্দোলনকারীদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা ও টানা-হেঁচড়া করে আহত করার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টররের কাছে পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ করেছে দুই শিক্ষার্থী। লিখিত অভিযোগে নজির আমিন চৌধুরী জয় বলেন,‘পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পালনকালে প্রক্টরিয়াল বডির অন্যতম সদস্য শৈবাল নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে আমাকে টানা-হেঁচড়া করলে এক পর্যয়ে আমি মাটিতে পড়ে যাই। প্রক্টরিয়াল বডির একজন সদস্যের কাছ থেকে এ ধরণের আচরণ ও কর্মকাণ্ড কাম্য নয় এবং এ ধরণের কাজের ফলে নৈতিকভাবে প্রক্টরিয়াল বডিতে কাজ করা উচিত নয় বলে মনে করি। এ ধরণের অশিষ্ট কাজের যথাযথ বিচার প্রত্যাশা করি।’

লিখিত অভিযোগে চূড়া বলেন,‘কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় শৈবাল কিছু শিক্ষার্থীকে উস্কিয়ে দিয়ে তাদের সহায়তায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেন এবং আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। জামা টেনে-হিঁচড়ে অবস্থানচ্যুত করা হয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাকে লাঞ্ছনার উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।’

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো নিজে আহত হওয়ার দাবি করে বলেন,‘আমি তাদের ওপর কোনো হামলা করিনি। ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি জয়কে জামার কলার নয়, ঘাড় ধরে গেট থেকে সরিয়ে এনেছিলাম। এসময় নীচে থেকে কেউ একজন আমার তলপেটে ৮-১০টি লাথি মারে। এতে আমি গুরুতর আহত হয়। পরে সেখান থেকে দূরে সরে আমি দেখি আমার ইউরিন লাইনে আঘাত লেগেছে। এখন আমি সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছি।’

এ বিষয়ে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘আমি হাসপাতালে, আমাদের একজন সহকর্মী আহত হয়েছে। এ কারণে কোনো ধরণের অভিযোগ পাইনি।’

এদিকে বিকাল চারটা পর্যন্ত সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন শেষে সংবাদ সম্মেলনে করে পরবর্তী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন অধ্যাপক রায়হান রাইন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘উপাচার্য অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে। এছাড়া আগামীকাল ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলবে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী শুক্রবার ও শনিবার উইকেন্ড প্রোগ্রামও ধর্মঘটের আওতায় থাকবে। তবে জরুরী সেবা সমুহ এর মধ্যে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও চিকিৎসা সেবা ধর্মঘটের আওতা মুক্ত থাকবে। এছাড়া শিক্ষক সমিতির নেতাদের অনুরোধের কারণে আগামীকাল একাউন্ট সেকশন দুই ঘন্টার জন্য খোলা থাকবে। যাতে করে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের বেতন তুলতে পারেন।’

উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধা না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এবং সহকারী প্রক্টরের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বিকাল তিনটায় মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

সমাবেশে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘আন্দোলনের নামে চিহ্নিত শিবির কর্মীরা ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করছে। আমরা চাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না করা হোক। এসময় বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টরের ওপর হামলার নিন্দা জানান তিনি।’

প্রসঙ্গত, দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্য অপসারণের দাবিতে গত সোমবার থেকে টানা তৃতীয় দিনের মত সবার্ত্মক ধর্মঘট পালন করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ফলে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম।

কেআই/আরকে