ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ভর্তিচ্ছুদের জন্য প্রস্তুত নোবিপ্রবি, থাকা-খাওয়ার বিশাল ব্যবস্থা

নোবিপ্রবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ০৮:২৫ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৮:৪১ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

ভর্তিচ্ছুদের থাকা-খাওয়ার বিশাল আয়োজন

ভর্তিচ্ছুদের থাকা-খাওয়ার বিশাল আয়োজন

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) আগামী ১ ও ২ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী ভর্তি পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য থাকছে বিনামূল্যে থাকা ও খাওয়ার বিশাল আয়োজন।

এ বছর ২৮টি বিষয় ও ২টি ইনস্টিটিউটের অধীনে ১ হাজার ১৩৫০ আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ৬৮ হাজার ৭৪৩টি। অর্থাৎ প্রতি আসনের জন্য লড়বে ৫১ জন ভর্তি ইচ্ছু শিক্ষার্থী।

প্রথমদিন ১ নভেম্বর (শুক্রবার) এ এবং বি ইউনিটের পরীক্ষা যথাক্রমে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এবং বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

দ্বিতীয় দিন ২ নভেম্বর (শনিবার) সি, ডি, ই এবং এফ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সি ইউনিট এবং সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ডি ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

একইদিন বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একইসঙ্গে ই এবং এফ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কেন্দ্রসহ মোট ৬৯টি পরীক্ষা কেন্দ্রে এ পরীক্ষাসমূহ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা নোয়াখালীতে আসতে শুরু করেছেন।

তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে থাকার জন্য পর্যাপ্ত ভালো কোনও হোটেলের ব্যবস্থা নেই। তাই এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বাসটার্মিনাল, রেলস্টেশন ও সড়কে রাত কাটিয়েছেন। তবে এবার ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের আর কষ্ট করতে হচ্ছে না। কারণ বিনামূল্যে তাদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে নোয়াখালীবাসী।

গত বছর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় দেখা গেছে, নোয়াখালী পৌর মেয়র ও বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। 

কিন্তু এ বছর নোয়াখালী জেলা প্রশাসন, নোয়াখালী পৌরসভা, নোয়াখালী উপজেলা পরিষদ, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও স্থানীয়রা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্য থাকা খাওয়ার সকল আয়োজন করেছে। একইসঙ্গে যানজট নিরসন, যাতায়াত ও নিরাপত্তার বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন বলেন, এবারের ভর্তি পরীক্ষাকে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম স্তরে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন বিতরণ ও পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার কাজ করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দ্বিতীয় স্তরে স্থানীয় সাংসদ সদস্য, মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সকল জনপ্রতিনিধিগণ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের থাকা ও খাওয়ার সুব্যবস্থা করবেন। তৃতীয় স্তরে জেলা পুলিশ সুপার ও গোয়েন্দা সংস্থার সংস্থার সহযোগিতায় বাস থামে এমন সব জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করা হবে। সবাই যেন নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। কোথাও কোন অসুবিধা হলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যাতায়াতের জন্য নোয়াখালী-৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব একরামুল করিম চৌধুরী ১০০টি বাসের ব্যবস্থা করেছেন। আশা করি তাদের যাতায়াতে কোন সমস্যা হবে না।

নোয়াখালী পৌরসভার পৌরসভার মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেল বলেন, আগামী ১ ও ২ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষা হলেও মূলত ৩১ অক্টোবর রাত থেকেই নোয়াখালীতে আসবে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। পৌরসভার পক্ষ থেকে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য বিনামূল্যে আবাসন, পরিবহন ও নিরাপত্তাসহ রাতের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, পরিবহনের জন্য ২০০টি মোটরসাইকেল, ৪০০ জন স্বেচ্ছাসেবক ও তিনটি মেডিকেল টিম ৩১ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবে। 

তিনি আরও বলেন, টিয়া রঙের টি-শার্ট পরা ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক পরীক্ষার্থীদের সহযোগিতায় থাকবেন। খোলা হবে ছয়টি বুথ। প্রতিটি বুথে থাকবে ৩০ জন করে স্বেচ্ছাসেবক। শহরের স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ, আবাসিক হোটেল ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে রাখা হবে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে থাকবে ২০০টি মোটরসাইকেল।

নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেন, পরীক্ষার্থীদের কোনও প্রকার যেন অসুবিধা না হয় সেজন্য ৩০ অক্টোবর রাত থেকে তিন শতাধিক পুলিশ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকেও মাঠে কাজ করছে পুলিশ।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য নিরাপত্তা, আবাসন, যোগাযোগ ও খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। এজন্য ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আতিথেয়তা পাবেন।

নোবিপ্রবি পরিবারের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতা, স্থানীয় পুলিশ ও গোয়েন্দা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, ছাত্রনেতা, সাংবাদিকসহ নোয়াখালীবাসী এবারের এই ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করছে। 

সব মহলের এমন অকৃত্রিম আন্তরিকতার জন্য নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম সকলের প্রতি কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ জানান।

উপাচার্য বলেন, ভর্তি পরীক্ষা শতভাগ সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন কমিটি-উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সংশ্লিষ্ট সদস্যরা ভর্তি পরীক্ষাকে সুন্দরভাবে পরিচালনার নিমিত্তে রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

এনএস/