ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ওয়ার্নার-স্মিথদের মতই প্রত্যাবর্তন করবেন সাকিব!

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ১০:২৭ পিএম, ১ নভেম্বর ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ১১:১৪ পিএম, ১ নভেম্বর ২০১৯ শুক্রবার

স্মিথ, ওয়ার্নার ও সাকিব

স্মিথ, ওয়ার্নার ও সাকিব

গত অ্যাশেজ সিরিজে ফলাফলের চেয়েও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন দুই অজি ব্যাটসম্যান স্টিভেন স্মিথ আর ডেভিড ওয়ার্নার। যেখানে ১২ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরে একদিকে রানের বন্যা বাইয়ে দিচ্ছিলেন স্মিথ। অন্যদিকে ওয়ার্নারকে দেখে মনে হচ্ছিল ‘ব্যাটিং বুঝি ভুলেই গেছেন!’ কেননা, সিরিজটির দশ ইনিংসে ব্যাট হাতে মাত্র ৯৫ রান করতে সক্ষম হন অজি ওপেনার।

ওয়ার্নারের ওই ৯৫ রানের মধ্যে এক ইনিংসেই করেছিলেন ৬১। অর্থাৎ বাকি নয় ইনিংস মিলিয়ে তার রান ৩৪! যার মধ্যে টানা তিন ইনিংসেই গোল্ডেন ডাক মারেন তিনি। রীতিমতো অদ্ভূতুড়ে বিষয়! পরিসংখ্যান বলছে, অ্যাশেজ ইতিহাসে আর কখনওই এতো কম রান করেননি কোন অজি ওপেনার। সেই ওয়ার্নার পরের সিরিজেই ফিরে এলেন দুর্দান্ত, রাজসিকভাবে।

সম্প্রতি ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কী দুর্দান্ত ব্যাটিংটাই না করলেন ডেভিড ওয়ার্নার। তিন ম্যাচের একটিতেও অজি মারকুটে ওপেনারকে আউট করতে পারেননি লঙ্কান বোলাররা। বাঁহাতি এ ওপেনারের তিনটি ইনিংস ছিল যথাক্রমে ১০০*, ৬০* ও ৫৭*। অর্থাৎ তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি এ সিরিজে ওয়ার্নারের ব্যাটিং গড় ২১১, ভাবা যায়!

অস্ট্রেলিয়ান তারকার এমনই বিস্ময়কর ও বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সামনে প্রথম দুটি ম্যাচে তো দাঁড়াতেই পারেনি শ্রীলঙ্কা। আর শুক্রবার (১ নভেম্বর) মেলবোর্নেও ঘটল ঘটনা আগের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি। প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রানের সংগ্রহ পায় লাসিথ মালিঙ্গার শ্রীলঙ্কা। যার মধ্যে ৪৫ বলে সর্বোচ্চ ৫৭ রান আসে কুশল পেরেরার ব্যাট থেকে।

পরে জবাব দিতে নেমে ওয়ার্নারের অপরাজিত ৫৭ রানের সুবাদে ১৭.৪ ওভারেই সাত উইকেটের জয় নিশ্চিত করে ফেলে অজিরা। স্বাগতিকদের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ।

যার ফলে টি-টোয়েন্টি এ সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কাকে। এর আগে হওয়া ট্যুর ম্যাচটিও হেরেছিল লঙ্কানরা।

আসলে, কথা হচ্ছিল- নিষেধাজ্ঞা থেকে রাজসিকভাবে ফেরা ওয়ার্নার আর স্মিথকে নিয়েই। এদের আগেও নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন পাকিস্তানের মোহাম্মেদ আমির। ফেরার পর থেকে বীর দর্পেই খেলে চলেছেন পাক এই পেসার। 

আমিরের নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা বেশি হলেও কঠোর পরিশ্রম আর সাধনা দিয়েই ক্রিকেটে ফিরেছেন তিনি। তবে ওয়ার্নার আর স্মিথের নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ছিল ১২ মাস অর্থাৎ এক বছর। তেমনি সম্প্রতি আইসিসির নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও। 

বয়স (তরুণ) বিবেচনায় আমিরের কথাটা পাশে সরিয়ে রাখলেও ওয়ার্নার-স্মিথ এই বয়সেও (৩৩+) যেভাবে তাদের সে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দুর্দান্ত ও রাজসিকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন, ঠিক তেমনিভাবেই বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলা টাইগার তারকা সাকিবেরও প্রত্যাবর্তন হবে বলেই মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। 

সাকিবের সতীর্থ ক্রিকেটার থেকে শুরু করে বাংলাদেশের কোটি ক্রিকেটভক্তের মনের আশাটা তেমনই। এদিক থেকে অবশ্য আরেকধাপ এগিয়ে খোদ সাকিবপত্নী উম্মে আহমদ শিশির। 

শিশির তো বলেই দিয়েছেন, ‘কিংবদন্তিরা কখনোই রাতারাতি কিংবদন্তি হয়ে যান না। তাদের অনেক কিছুর মধ্য দিয়েই যেতে হয়। কঠিন সময় আসবেই এবং তারা জানে কীভাবে শক্ত থেকে এসবের মোকাবেলা করতে হয়। আমরা জানি সাকিব আল হাসান কতটা শক্ত মনের মানুষ।’

শাকিবের সহধর্মিনী আরও লেখেন, ‘এটা (আইসিসির নিষেধাজ্ঞা) বলা যায় নতুন শুরুর সূচনা। সে নিশ্চিতভাবেই আগের চেয়ে আরও শক্তভাবে ফিরে আসবে। ইনজুরির কারণে এর আগেও অনেকবার ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। আমরা সবাই দেখেছি বিশ্বকাপে সে কী দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করেছে। এটা শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। আপনাদের সবার সমর্থন ও ভালোবাসায় আমরা আপ্লুত। সকলের এই ঐক্যটা জাতি হিসেবে খুব দরকার আমাদের।’ 

সুতরাং, উদ্বেগের কিছুই নেই। ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথদের মত জীবন্ত কিংবদন্তী হয়েই ফিরে আসবেন বাংলাদেশের প্রাণ, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।

এনএস/