ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

এক নজরে সাদেক হোসেন খোকা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৪১ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৩:৪২ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০১৯ সোমবার

অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের শেষ মেয়র ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা মারা গেছেন। নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় আজ সোমবার দুপুরে তিনি ইন্তেকাল করেন। 

কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন ছিলেন এ মুক্তিযোদ্ধা। তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতি হলে তাকে বাঁচানোর আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।  

বিএনপির এ নেতা ১৯৫২ সালের ১২ মে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

এক সময়ের বাম ঘরানার রাজনীতিবিদ যোগ দেন বিএনপিতে। তখন এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়। নয়াবাজার নবাব ইউসুফ মার্কেটে বিএনপির কার্যালয় থেকে এ আন্দোলন শুরু করে ৭ দলীয় জোট। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঐ জোটের নেতৃত্বে ছিলেন। খোকাকে সেই আন্দোলনে ঢাকা মহানগর সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক করা হয়। 

১৯৯০ সালে ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় পুরান ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা করা হয়েছিল। খোকা তখন এর প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ঐ ঘটনার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়সহ পুরান ঢাকাবাসীর আস্থা অর্জন করেন।

১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসন প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার দল সরকার গঠন করলে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন।  ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচনে ঢাকার ৮টি আসনের মধ্যে ৭টিতে পরাজিত হন বিএনপির প্রার্থীরা। খোকাই বিএনপি থেকে ঢাকায় একমাত্র নির্বাচিত হন। সে সময় সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলনে একক নেতৃত্ব দিয়ে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ও দাপুটে নেতা হয়ে উঠেন। 

২০০১ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি সরাসরি নির্বাচনে জয় লাভের মাধ্যমে ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকার মেয়রে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ১০ বছর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শাসনামলে ঢাকা মহানগরের মেয়র ছিলেন তিনি।

খোকা পুরান ঢাকার গোপীবাগে পৈতৃক বাড়িতে থেকেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শুধু রাজনীতিতে নন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরেই ১৯৭২ সালে ব্রাদার্স ইউনিয়নের দায়িত্ব নিয়ে ক্লাবকে তিন বছরের মধ্যে তৃতীয় থেকে প্রথম বিভাগে উন্নীত করেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা খোকা ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ও ফরাশগঞ্জ ক্লাবের গভর্নিংবডির চেয়ারম্যান ছিলেন।

দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনির ক্যানসারে ভুগছিলেন খোকা। তাঁর শারীরিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি হয়েছিল। তিনি চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের ১৪মে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক যান। তারপর থেকে সেখানেই ছিলেন তিনি। 

সম্প্রতি খোকার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ম্যানহাটনের স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। গত ক’দিন ধরে খোকা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন বলে জানান তার পরিবার পরিজনরা।

একাধিক মামলায় সাদেক হোসেন খোকার সাজা হয়েছে। এরপর থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই ছিলেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি ছিল।

এমএস/