মানিকগঞ্জে আইনজীবীকে স্বামীর অমানুষিক নির্যাতন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৩০ এএম, ৬ নভেম্বর ২০১৯ বুধবার | আপডেট: ০৯:৩১ এএম, ৬ নভেম্বর ২০১৯ বুধবার
মানিকগঞ্জ জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী কামরুন্নাহার সেতুর ওপর অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী শাওন মিয়ার বিরুদ্ধে। বিয়ের এক মাসের মধ্যে স্বামীর ১৫ দিনের বন্দিদশা থেকে ফিরে এসে তার ওপর চালানো নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন ওই আইনজীবী।
তিনি বলেন, ও আমাকে প্রতিদিন মারধর করতো। পাটার পুতা দিয়ে আঘাত করতো, যাতে কেউ মারধরের আওয়াজ না পায়। আমার সারা শরীর থেঁতলে গেছে ওই আঘাতে। আঘাতের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আত্মহত্যার। কিন্তু সেই সুযোগও পাইনি। আমি সেখান থেকে জীবিত ফিরে আসতে পারবো সেই আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।
গত সোমবার রাতে ওই আইনজীবী সদর থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর গ্রামে শাওন মিয়া ও আইনজীবী কামরুন্নাহার সেতু গত ৯ সেপ্টেম্বর গোপনে বিয়ে করেন। এরপর ১৭ অক্টোবর মানিকগঞ্জ আদালত থেকে সেতুকে নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে নবীনগর কহিনুর গেটে নিয়ে যায় শাওন। সেখানকার তুনু হাজির ছয়তলা বাড়ির চারতলার একটি কক্ষে নিয়ে রাখেন তাকে। প্রথম দু'দিন সেতুর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে সে। তৃতীয় দিন সেতুর মানিকগঞ্জ ডাকঘরে থাকা কয়েকটি হিসাব থেকে তাকে টাকা উঠিয়ে দিতে বলে। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তিন দফায় ১৬ লাখ টাকা তুলে দিতে বাধ্য করে শাওন। এর দু’দিন পর আরও টাকা দাবি করে। আর টাকা নেই জানালে তার নামে থাকা জমি লিখে দিতে বলে। এতে রাজি না হওয়ায় শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। কেড়ে নেওয়া হয় মোবাইল ফোন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স। এভাবে চলতে থাকে নির্যাতন।
সেতু জানান, গত ২ নভেম্বর রাতে তাকে বেদম মারধর করা হয়। হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। খুন করার জন্য রান্নাঘর থেকে বঁটি আনতে গেলে তিনি চিৎকার শুরু করেন। তা শুনে বাড়ির মালিক এসে তাকে তাদের ঘরে নিয়ে যান। পরের দিন বাবাবাড়িতে দিয়ে আসার কথা বলে শাওন অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। চিকিৎসার নামে একটি হাসপাতালে নিয়ে ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে শাওন। ওই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দিলে সেখান থেকে পালিয়ে যায় শাওন।
এই আইনজীবী আরও জানান, তার বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের ঢাকুলী গ্রামে। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর তিনি উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে মোরশেদকে নিয়ে তিনি তার বাবার বাড়ি থাকেন। স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের সুযোগে শাওনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
সদর থানার ওসি (তদন্ত) হানিফ সরকার বলেন, নির্যাতনের শিকার ওই আইনজীবী আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত শাওনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
একে//