ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

সিরাতুন্নবী (সাঃ)-এর গুরুত্ব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪৪ এএম, ৮ নভেম্বর ২০১৯ শুক্রবার

আসছে আগামী ১২ রবিউল পৃথিবীব্যাপী পালিত হবে সীরাতুন্নবী। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীর বুকে আগমন ও ধরনীর মায়া ত্যাগ করে মহান আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্যে চলে যান এই দিনে। তাইতো দিনটি গোটা বিশ্বের মুসলমানদের নিকট অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। 

রাসূল (সাঃ) এর জীবনী ঘিরে দুটি বিষয় আমরা পালন করে থাকি, ঈদে মিলাদুন্নবী ও সিরাতুন্নবী। মিলাদ ও সিরাত দুটি আরবি শব্দ। মিলাদ অর্থ জন্ম আর সিরাত শব্দের অর্থ জীবনচরিত। সুতরাং মিলাদুন্নবী (সা.) অর্থ নবীজির জন্ম আর সিরাতুন্নবী (সা.) এর অর্থ নবীজির জীবনচরিত। মূলত নবীজির শুভ বেলাদাত বা জন্মকে স্মরণ করে যে অনুষ্ঠান হয় তাকে মিলাদুন্নবী (সা.) মাহফিল বলা হয়। আর নবীজির জীবনচরিত আলোচনার জন্য যে অনুষ্ঠান তাকে সিরাতুন্নবী (সা.) মাহফিল বলা হয়।

প্রদত্ত আলোচনায় আমরা সিরাতুন্নবীর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করবো। সিরাতুন্নবী (সা.) শিরোনামে যে মাহফিল হয় সেখানে রাসূলে পাক (সা.) এর জন্মবৃত্তান্তকে বাদ দিয়ে জীবনচরিত আলোচিত হয় না বরং জন্ম থেকে শুরু করে পুরো জীবনীই আলোচনা করা হয়। যার গুরুত্ব ও শিক্ষা প্রতি মুসলামানের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

রাসূল (সাঃ) এমন একজন আদর্শিক মানুষ ছিলেন, যিনি শুধু মুসলমানদের নিকটই নয়, একজন বিশ্বস্ত মানুষ হিসেবে ভিন্ন ধর্মাবলম্বিরাও তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতো। কাফির, মুশরিক এমনকি জানের দুশমনরাও যার সত্যবাদির জন্য তাকে ‘আল আমিন’(বিশ্বস্ত) বলে ডাকতো। 

পৃথিবীর এই মহামানবের আগমনে কিসরা ও কাইজার গণচুম্বি প্রাসাদ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অন্ধকার দূর হয়ে আলোর পথে আসে তৎকালীন জাহেলি সমাজ। পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত তাকে বিশ্ববিবেক কখনো ভুলে যাবে না। 

১২ রবিউল আউয়াল রাসূল (সাঃ) পৃথিবীতে আসেন ও একই দিনে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন। তিনি আজ পৃথিবীতে নেই, সেটিই ভাববার বিষয়। তবে তাঁর আগমন ও প্রস্থান নিয়ে শোক পালন বড় কথা নয়, তার জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তাঁকে অনুসরণ করাই একজন প্রকৃত মুসলামানের কাজ। 

কোরআন ও সুন্নাহকে আকড়ে ধরে ইসলামকেই ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির পথ হিসেবে মানতে হবে। ঠিক যেভাবে তিনি করেছেন। 

আজ আমাদের মাঝে তিনি নেই। তাতে কি হয়েছে? নবীর সিরাত (৬৩ বছরের জীবনী) তো আছে? নবীর সিরাত সম্পর্কে আল্লাহপাক কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহর জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। (সূরা-আহযাব: ২১)

সূরা নূরের ৫৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যদি তোমরা রাসূলকে অনুসরণ কর, তবেই তোমরা সত্যপথের সন্ধান পাবে’।

জেনে রাখা দরকার যে, রাসূলের অনুসরণ ব্যতীত ইহ-পরকালে নাযাত পাওয়া নিতান্তই দূরূহ ব্যাপার। রাসূল্লাহর অনুসরণের মাঝেই সকল প্রকার সাফল্য নিহিত রয়েছে।

এ সর্ম্পকে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে কেউ আল্লাহর আনুগত্য করে এবং রাসূলের অনুসরণ করে, সে অবশ্যই মহাসাফল্য লাভ করবে’। (সূরা আহযাব : ৭১)

নবিজী বলেন, ‘আমার উম্মতের সকল লোকই জান্নাতী হবে, অস্বীকারকারী ব্যতীত। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! অস্বীকারকারী কে? উত্তরে তিনি বললেন, যে আমার অনুসরণ করবে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার নাফরমানী করবে সে অস্বীকারকারী’। (বুখারি শরীফ)

রাসূল অনুসরণের অর্থ হলো, তার আদর্শ গ্রহণ করা, ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় জীবন থেকে নিয়ে সর্বক্ষেত্রে রাসূলের আদর্শ মেনে চলা। আমাদের সমাজ আজ রাসূলের আদর্শ থেকে সরে এসেছে। আজ রবিউল আওয়াল মাস এলেই আমরা দিবস পালনের নামে বর্ণাঢ্য র‌্যালি-মিছিল নিয়ে ব্যস্ত থাকি! রবিউল আওয়ালের পর্যালোচনার ফুরসত কোথায়?

শেষ কথা, কুরআন ও হাদিসের আলোকে জানা গেল সিরাতুন্নবীর মাঝেই রয়েছে মিলাদুন্নবী। অতএব মিলাদুন্নবীর প্রতি গুরুত্ব না নয়, সিরাতুন্নবীই উম্মতের জন্য অনুসরণীয়।

আল্লাহপাক আমদেরকে মনগড়া আমল, বিদআতি কার্যক্রম থেকে হেফাজত করুন এবং ব্যক্তি জীবন থেকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় জীবনসহ সর্বক্ষেত্রে রাসুল (সাঃ) এর আদর্শ অনুসরণের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এআই/