ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

দুর্দান্ত শুরু করেও যেসব কারণে হারল বাংলাদেশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:২৫ পিএম, ৮ নভেম্বর ২০১৯ শুক্রবার

রাজকোটে ভারতের কাছে হারের পর হতাশ মাহমুদুল্লাহ

রাজকোটে ভারতের কাছে হারের পর হতাশ মাহমুদুল্লাহ

টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ঐতিহাসিক জয়। আর একটা ম্যাচ জিতলেই ভারতের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো কোন সিরিজ পকেটে পুরে ফেলার হাতছানি। তবে রাজকোটে সে সুযোগ হারাল বাংলাদেশ। অথচ কী দুর্দান্ত শুরুটাই না করেছিলেন বাংলাদেশি ওপেনাররা। 

তারপরও কেন এমন হলো? কেন হারলো বাংলাদেশ? ঠিক কোন জায়গায় পিছিয়ে গেল তারা? আসুন দেখে নেয়া যাক, রাজকোটে বাংলাদেশের পরাজয়ের কয়েকটি কারণ।

১) ক্রিকেটে ছন্দে থাকার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। তা সে ব্যক্তিগতই হোক বা দলগত। ছন্দে থাকলে নিজের দিনে অনেক অঘটনই ঘটানো সম্ভব। তবে রাজকোটে সেই ছন্দই যেন দেখা গেল না বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে।

২) বাংলাদেশের ওপেনার জুটি লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম শুরুটা করেছিলেন বেশ ভালভাবে। তবে তার রেশ ধরে রাখতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। কোনও উইকেট না খুইয়েই পাওয়ার প্লে-তে লিটন-নাঈমের ব্যাট থেকে আসে ৫৪ রান। কিন্তু তার পরও বড় রানের ভিত গড়তে ব্যর্থ হন দু’জনেই। অন্তত এক জনকে এখানে থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করতেই হত।

৩) দিল্লিতে খলিল আহমেদের শেষ চার বলে টানা চার হাঁকিয়েছিলেন মুশফিক। রাজকোটেও খলিলের প্রথম তিন বল থেকে তিনটি চার তুলে নেন নাঈম। তবে সেই দাপট ধরে রাখতে পারেননি তিনি। ৩১ বলে মাত্র ৩৬ রান করেই ফেরেন এই তরুণ। তবে নাঈম যেহেতু সবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। তাই আরও দায়িত্ব নেয়া উচিত ছিল অভিজ্ঞ লিটনের।

৪) অন্যদিকে, নাঈমের মতোই দলকে বড় রানের পথে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন অন্য ওপেনার লিটন দাস। চারটি চার মারলেও ২১ বলে ২৯ রান করেন তিনি। দুইবার জীবন ফিরে পেয়েও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন লিটন। যুজবেন্দ্র চাহালের গুগলি লেগ সাইডে পাঠাতে গিয়ে রান আউট হয়ে ফিরে যান তিনি। ফলে শুরুতে চমক দেখালেও তা ধরে রাখতে পারেননি কোনও ওপেনারই।

৫) আইসিসির শাস্তির কোপে বাংলাদেশের এই দলটিতে নেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। নেই দেশ সেরা তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনও। তা সত্ত্বেও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটের ভারে প্রথম ম্যাচে জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে রাজকোটে প্রথম ম্যাচের মতো জ্বলে উঠতে পারেননি মি. ডিপেন্ডেবল। এ ম্যাচে মাত্র ৪ রান (৬ বলে) করেন মুশফিকুর। 

৬) মুশফিকের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরতাও বাংলাদেশের হারের একটা বড় কারণ। রাজকোটে দলের অন্য ব্যাটসম্যানেরাও তেমন কিছু করে উঠতে পারেননি। ওপেনারদের পরে মাহমুদুল্লাহ ও সৌম্য ছাড়া বাকিদের স্কোর দু’অঙ্কও পার হয়নি। শেষমেশ রান উঠেছে ১৫৩। যা ভারতের মতো শক্তিশালী টিমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট নয়।

৭) মুশফিক ছাড়াও মাহমুদুল্লাহর দিকেও তাকিয়ে ছিল টিম বাংলাদেশ। রাজকোটে শুরুটা ভাল করলেও ২১ বলে ৩০ রান করে ফিরে যান তিনি। মাহমুদুল্লাহর ব্যাট থেকে বড়সড় রান না আসাটাও বাংলাদেশের হারের একটা ফ্যাক্টর।

৮) টি-টোয়েন্টিতে অনেক সময় শেষ কয়েক ওভার বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ডেথ ওভারে চার-ছয়ের বন্যা তো দূরের কথা, ১৮.৩ ওভারে মাহমুদুল্লাহর আউটের পর বাংলাদেশ ইনিংশের শেষ ৯ বলে মাত্র ১১ রান আসে। এসময়ে মাত্র একটাই বাউন্ডারি পায় তারা। যা ভারতকে চাপে ফেলার জন্য যথেষ্ট ছিল না।

৯) ভারতের বিরুদ্ধে যে রানের পুঁজি নিয়ে বল করতে নামে বাংলাদেশ, তাতে প্রথম পাঁচ ওভারের মধ্যে উইকেট তুলে নিতেই হত। তবে রোহিত শর্মা বা শিখর ধাওয়ানের বিরুদ্ধে সে সুযোগ তৈরি করতে পারেননি মুস্তাফিজ-শফিউলরা।

১০) রাজকোটে মুস্তাফিজুর রহমান বা শফিউল ইসলামের ইকনমি রেট দেখুন! প্রথম জনের ৯.৫৪ ও পরের জনের ১১.৫০। সেইসঙ্গে ভারতের কোনও ব্যাটসম্যানকেই তারা প্যাভিলিয়নে ফেরাতে পারেননি। মুস্তাফিজুরের কোনও উইকেট না পাওয়ায় এ ম্যাচে সমস্যায় ফেলে বাংলাদেশকে।

১১) দিল্লিতে রোহিত শর্মার ব্যাটকে থামিয়ে দিতে পেরেছিলেন বাংলাদেশিরা। তবে রাজকোটে সে সুযোগ তৈরি করতে পারেননি তাদের কোনও বোলার। মুস্তাফিজুরের ব্যর্থতার ফলে এমনিতেই চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে রোহিত শর্মাকে সহজেই না ফেরাতে পারাটাও একটা ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে।

১২) পেসারদের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্পিনাররাও ভেল্কি দেখাতে ব্যর্থ হন। একমাত্র আমিনুল ইসলাম ছাড়া কেউই উইকেট পাননি। ভারতের দুই ওপেনারকেই একা আমিনুল তুলে নিলেও আফিফ হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেনের বল টলাতে পারেনি কোনও ভারতীয় ব্যাটসম্যানকেই।

১৩) রাজকোটে কোনও সময়ই ভারতকে চাপে ফেলতে পারেননি মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা। বিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি না করতে পারলে ম্যাচের দখল নিজেদের দিকে আনাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তবে সেই কাজটাই করতে পারেনি বাংলাদেশ।

মূলত এসব কারণেই শুধু রাজকোটে নয়, অনেক ম্যাচেই সম্ভাবনা তৈরী করেও হেরে যায় বাংলাদেশ। হতাশ হয় কোটি ক্রিকেটভক্ত। তবে আগামী ১০ নভেম্বর নাগপুরে সিরিজ জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামবে রিয়াদ বাহিনী। 

এনএস/