পেঁয়াজের দাম কমবে, যদি...
আজাদুল ইসলাম আদনান
প্রকাশিত : ০২:৫০ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০১৯ শনিবার
কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না পেঁয়াজের দাম। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের পর থেকেই গত চার মাসে কয়েক দফা লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়েছে নিন্ত্য প্রয়োজনীয় এ তরকারীর উপাদানটি। শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশেই সংকট তৈরি হয়েছে পেঁয়াজের। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনো আশ্বাসেই মিলছে না স্বস্তি।
সরকার কর্তৃক পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানছেন না ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। পেঁয়াজের এ ঝাঁজ না কমার পেছনে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি, ইনফুটে সমস্যা ও দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে না আসাকে কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা।
আর ব্যবসায়ীদের নিজেদের মাঝে সিন্ডিকেট ও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাড়ানো হচ্ছে দাম। ফলে পেঁয়াজের বাজার এখন চরম অস্থিরতায়।
ফলে সহসাই ক্রেতার নাগালে আসছে না পেঁয়াজের দাম। তাহলে এ অবস্থার অবসান হবে কবে? এ প্রশ্ন এখন সবার।
আজ শনিবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে তেমন একটা নেই। থাকলেও দাম রাখা হচ্ছে অনেক বেশি। দেশিয় পেঁয়াজের সঙ্গে মিয়ানমার থেকে আনা পেঁয়াজের প্রতি ঝুঁকছেন ক্রেতারা।
দেশিয় পেঁয়াজ আমদানি করা না হলেও দাম রাখা হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা। আর বার্মা থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ নেয়া হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা। তবে মিশর থেকে আনা পেঁয়াজের দাম অন্যান্য পেঁয়াজ থেকে একটু কম (৮০-৮৫ টাকা) হলেও, ক্রেতাদের তেমন একটা আগ্রহ নেই এ পেঁয়াজে।
কারওয়ান বাজারের আড়ৎদার সেলিম মল্লিক একুশে টিভি অনলাইনকে জানান, দাম বেশি হওয়ায় বাজারে দেশিয় পেঁয়াজের চাহিদা কম। মিয়ানমার থেকে আনা পেঁয়াজ ইনপুটারের নিকট কেনা থেকে শুরু করে আনা পর্যন্ত ৯০ টাকার মত পড়ে যায়। ফলে এ পেঁয়াজ আমরা ১০০ টাকা বিক্রি করে থাকি।
তিনি বলেন, সরকার বলছে ৮০-৮৫ টাকা বিক্রি করতে। কিন্তু আমদানিকারকরা দাম না কমালে আমরা কিভাবে কম দামে বিক্রি করবো? এমন হলে ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। পেঁয়াজ আমদানি বেশি হলে এমনিভাবেই দাম কমবে। ব্যবসায়ীদের মাঝে সিন্ডিকেট নেই বলে দাবি করেন তিনি।
কারওয়ান বাজারের আরেক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, খুব শিগগরই পেয়াজের বাজার কমবে। ইনপুটাররা দাম কম রাখলে ও দেশিয় পেঁয়াজ বাজারে আসলে স্বাভাবিকভাবেই পেঁয়াজের দাম কমবে।
তিনি বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও আমদানি নেই। এর প্রভাব পড়ছে দেশিয় পেঁয়াজের ওপর। মিশর থেকে আনা পেঁয়াজের প্রতি ক্রেতাদের তেমন একটা আগ্রহ নেই বলেও জানান এ ব্যবসায়ী।
মাহফুজুর রহমান নামে এক ক্রেতা জানান, দু’মাস পর বাজারে পেঁয়াজ কিনতে এসে বড় বিপদে পড়েছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে পেঁয়াজ খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল (বাজার তদারকি) একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ইতিমধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। রাজধানীর শ্যামবাজারে সরকারিভাবে আমাদানিকৃত পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেউ যাতে সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সে চেষ্টা চলছে। প্রতিদিন অভিযান চলছে। শিগগিরিই পেঁয়াজের দাম ক্রেতাদের নাগালে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে, সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে রাজধানীর শ্যামবাজার বণিক সমিতি। শুক্রবার দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আজও পাইকারী ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি করছেন। এছাড়া মিশর, তুরস্ক ও চীনের পেঁয়াজের কেজি প্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে সহসাই পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার নিচে আসছে না বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বেসরকারি ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’র (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়ের শামিল। পেঁয়াজের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরিতে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কথা সরকারও জানে। এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রণালয় আগেও সে কথাই বলেছে। কিন্তু সিন্ডিকেটের কাছে যেন অসহায় হয়ে পড়েছে সরকার। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারছে না পেঁয়াজের দাম।
তিনি বলেন, মিয়ানমার-মিশরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর যৌক্তিতা থাকলেও দেশিয় পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। কেননা, বাজারে যে পেঁয়াজ আমরা এখনো পাচ্ছি, সেগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংকট তৈরির আগেই ব্যবসায়ীরা কিনেছিলেন। এতে স্পষ্ট যে, আমাদানিকারকদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও সিন্ডিকেট তৈরি করে অস্থির করেছে পেঁয়াজের বাজার।
তবে রাজধানীতে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের আসলে তেমন একটা কিছু করার নেই। পেঁয়াজের এ অস্থিরতার জন্য মূলত ইনপুটার ও মোকামরাই দায়ী। তারা যদি দাম কম না রাখে তাহলে ব্যবসায়ীরা কম দামে তো ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করতে পারবে না। ফলে, সংকটটা মূলত এখানেই বলে জানান তিনি।
এআই/