পুলিশি তৎপরতায় রক্ষা পেল অপহৃত যুবক, আটক ২
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৭:১৭ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০৭:৩৯ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০১৯ শনিবার
আটক নুরন্নবী ওরফে মানিক মাস্টার ও বাওয়াইয়ের গ্রামের আব্দুল খালেক
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেল বাবুল মিজি (৩৫) নামে এক যুবক। ঢাকায় তার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বেড়াতে নিয়ে আসে আনিছুর রহমান নামে স্থানীয় এক যুবক। রৌমারীতে তাকে ৪ দিন আটকে রেখে তার স্ত্রীর কাছে জীবনহানির ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করে। সেইসঙ্গে তারা আটকে রাখে বাবুল মিজির পালসার মোটর বাইকও।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় নুরন্নবী ওরফে মানিক মাস্টার (৩৫) ও আব্দুল খালেক (৪৮) নামে দু'জনকে গ্রেপ্তার করেছে রৌমারী থানা পুলিশ। পুলিশি তৎপরতায় অপহৃত যুবককে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। শনিবার (৯ নভেম্বর) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর জেলার হাইমচর থানার বিংগুলিয়া গ্রামের বাদশা মিয়ার পুত্র বাবুল মিজি ঢাকার ডেমরার কোনাবাড়ীতে বোন জামাই দুলাল হোসেনের বাসায় থেকে গাজীপুরে কাজ করেন। এই কাজের সূত্র ধরে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইজলামারী গ্রামের মৃত: আছর উদ্দিনের পুত্র আনিছুর রহমানের সাথে পরিচয় ঘটে। তারা ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয়েও আলাপ-আলোচনা করে। সেই সূত্র ধরে চলতি মাসের ২ নভেম্বর বাবুল মিজি তার দুলাভাই দুলাল মিয়ার নিজস্ব লাল-কালো রংয়ের পালসার মোটর বাইক নিয়ে আনিছুর রহমানসহ সন্ধ্যা ৬টায় রৌমারীতে বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এরপর থেকে তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
পরে ৪ নভেম্বর রৌমারী থেকে আনিছুরের অপর সহযোগি নুরন্নবী ওরফে মানিক মাস্টার বাবুল মিজির মোবাইল ফোনে তার স্ত্রী মিনু বেগমকে বিকেল ৩টার দিকে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করে। এসময় বাবুল মিজিকে চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মেরে তাকে আটকের কথা জানানো হয়। তাকে সুস্থভাবে ফিরে পেতে চাইলে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। কথামতো বাবুলের স্ত্রী মিনু বেগম তাদের দেয়া বিকাশ নম্বরে কয়েক দফায় ৭০ হাজার টাকা পাঠান।
এরপরও কথাবার্তায় সন্দেহ হলে পরদিন ৫ নভেম্বর বাবুল মিজির দুলাভাই দুলাল হোসেন রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবরে চাঁদপুর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন। এজাহারে আনিছুর রহমানসহ ৬ জনের নাম দিয়ে অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
অপর আসামিরা হলেন- রৌমারী সদরের পোড়ার চরের বক্তার আলীর পুত্র নুরন্নবী ওরফে মানিক মাস্টার (৩৫), বাওয়াইয়ের গ্রামের মৃত: শের আলীর পুত্র আব্দুল খালেক (৪৮), ইজলামারী হলহলি গ্রামের হাজী এবারত হোসেনের পুত্র আব্দুল মান্নান (৩৭), ভিটাবাড়ীর রায়হান (২৪), মন্ডলপাড়ার বেলাল হোসেন (২৩)সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫জন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিষয়টি ৬ নভেম্বর অবগত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে রৌমারী পুলিশ স্টেশনকে আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেন। দুপুরেই তৎপরতা শুরু করে রৌমারী থানা পুলিশ। পুলিশের অভিযানের খবর আঁচ করতে পেরে অপহরণকারীরা বাবুল মিজিকে ওইদিন বিকেল ৬টায় রৌমারীর কর্ত্তিমারী বাজারে নিয়ে গিয়ে একটি বাসে তুলে দেয়।
রাতেই অভিযান চালিয়ে পুলিশ আনিছুর রহমানকে ধরতে না পারলেও তার অপর দুই সহযোগী রৌমারী সদরের পোড়ার চরের নুরন্নবী ওরফে মানিক মাস্টার ও বাওয়াইয়ের গ্রামের আব্দুল খালেককে গ্রেপ্তার করে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ আবু মো: দিলওয়ার হাসান ইনাম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশনায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। ইতোমধ্যে দুইজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকীদের ধরতে পুলিশি তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। বিকাশে পাঠানো ৭০ হাজার টাকার মধ্যে ৪০ হাজার টাকা অপহরণকারীরা তুলে নেয়। বাকী ৩০ হাজার টাকা বিকাশের দোকানে এখনও রয়েছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জানান, চাঁদপুরের অধিবাসী এক যুবককে ঢাকা থেকে রৌমারীতে অর্থ লেনদেনের কারণে নিয়ে এসে আটকে রাখার অভিযোগ পাই। চাঁদপুর থেকে অপর এক ব্যক্তি বিষয়টি আমাকে জানান। এরপরই রৌমারী পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেই। ইতোমধ্যে দুজন আটক হয়েছে। মূল আসামি ও মোটর বাইকটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। আশা করি দ্রুত এর সমাধান হবে।
এনএস/