মৌলভীবাজারে কমলার আশানুরূপ ফলন হয়েছে
বিকুল চক্রবর্তী, মৌলভীবাজার থেকে
প্রকাশিত : ০১:০৫ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০১৯ সোমবার
এ বছর মৌলভীবাজারে কমলার আশানুরূপ ফলন হয়েছে। আর হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ৬ টন। তবে পোকার আক্রমণে পাকার আগেই গাছ থেকে ঝড়ে পড়ছে কমলা। এতে কমলা চাষিরা বাম্পার ফলনের পরও আশানুরূপ লাভ নিয়ে শঙ্কিত।
মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের কমলা বাগানের গাছে গাছে থোকা থোকা কমলা ঝুলে আছে। ইতিমধ্যে ফল বিক্রিও শুরু করেছেন কৃষকরা। তবে গান্ধি পোকা ও প্রজাপতির মতো এক ধরনের পোকার আক্রমণে পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই গাছ থেকে ঝড়ে পড়ছে ফল। কাজে আসছে না কৃষি বিভাগের পরামর্শও জানান, জুড়ি গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের সফল কমলা চাষি মোরশেদ মিয়া।
সরজমিনে জুড়ির গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের কমলা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝোপা ঝোপা কমলা। কোনও গাছে কাঁচা কোনও কোনও গাছে পাকা শুরু হয়েছে। কৃষকরা হালকা পাকা কমলা পাড়ছেন। গাছের নিচে পোকা মারার জন্য বিভিন্ন ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে।
এ সময় হালকা পাকাবস্থায় কমলা পাড়ার কারণ জানতে চাইলে কৃষক মোরশেদ মিয়া, মানিক মিয়া ও জয়নুল মিয়া জানান, কমলা পাকা শুরু হলেই এক ধরনের পোকা কমলায় বসে রস খেয়ে নেয় এবং যেখানে বসে ওই জায়গায় পঁচন ধরে। তাই তারা হালকা পাকা কমলা পারছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তারা বিভিন্ন ফাঁদ ব্যবহার করছেন কিন্তু তা তাদের কাজে আসছে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক লুৎফুল বারি জানান, ছোট বড় মিলিয়ে মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে ১৪৬টি কমলা বাগান, যার আয়তন ১৭৮ হেক্টর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় জুড়ি উপজেলায়।
তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে কমলার রোগ ও পোকামাকর দমনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। সুষম উৎপাদন পদ্ধতি তাদের জানিয়ে দিয়েছেন, যারা তা পালন করেছেন তাদের ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি কেজি কমলা তারা ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছে।
এদিকে, মৌসুমের শুরুতে গাছে সেচ না দিতে পারায় বেশ কিছু গাছে ফলের আকার ছোট হয়েছে। অন্যদিকে, রাস্তাঘাটের সমস্যায় ফল পরিবহনে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় বলে জানান, অপর কমলা বাগানের মালিক মানিক মিয়া ও অজু মিয়া।
তারা জানান, কয়েক বছর পূর্বে তাদের বাগানে চোরেরও উপদ্রব ছিল। তবে বর্তমান জুড়ি থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বিশেষ টহলের ব্যবস্থা করায় তা কমেছে।
এ ব্যাপারে জুড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, সিলেটি কমলার একটি সুনাম রয়েছে। এ জেলার অন্যান্য জায়গায় কমলার আবাদ ক্রমশ কমছে। বর্তমানে জুড়ি উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ ধরে রেখেছেন। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কমলা বাগান দেখতে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় দিনে ও চাষিরা যেন নিরাপদে চাষাবাদ করতে পারেন তাই রাতেও টহল জোরদার রেখেছেন।
কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, কমলার ফলন মৌসুমের শুরুতে যখন গাছে ফুল আসে তখন সেচের অভাবে পানি দিতে পারেননি। আগামী মৌসুমের আগে সরকারিভাবে সেচ মেশিন, সার ও পোকাদমনের কার্যকরি পদ্ধতি দিলে উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হবেন বলে জানান।
মালামাল পরিবহনে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, পোকাদমনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও সেচ ব্যবস্থাসহ কমলা উৎপাদনের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে জানান জুড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বনিক। বলেন, এ উপজেলায় ছোটবড় মিলিয়ে শতাধিক কমলা বাগান রয়েছে। যার বেশিভাগই বন বিভাগের জমিতে ভিলেজাররা করেছেন। এই মাটি স্থানীয় উন্নত জাত নাগপুরি ও খাসি কমলা চাষের উপযোগী। এই এলাকার কমলা অনান্য জায়গার চেয়ে একটু মিষ্টি বেশি হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, জুড়ির কমলা খুব দ্রুত পাকে এবং এক ধরনের পোকার আক্রমণে অল্প সময়ে ঝড়ে যায়। এ বিষয়টি গবেষকদের মাধ্যমে প্রতিকারের পথ বের করার জন্য তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনবেন বলে জানান তিনি। তাছাড়া বনবিভাগ, কৃষি বিভাগ, কৃষক, জনপ্রতিনিধি সবার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে জুড়ি ঐতিহ্যবাহি এ কমলা চাষ ধরে রাখার প্রয়াস তিনি অব্যাহত রেখেছেন।
জুড়ি উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রনি সিংহ জানান, গোয়াল বাড়িতে প্রায় ৬৫টি কমলা বাগান আছে। এখানে তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে দল গঠনের মাধ্যমে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে তারা পোকা দমনে ফেরেমেন ফাঁদ কীটনাষক ছিটানো নিয়ম জানিয়ে দিয়েছেন। পানির সংকট রয়েছে বলেও তিনি জানান। তবে বর্তমানে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ (কারেন্ট) আসায় সেচ ব্যবস্থা সুবিধা হবে বলে তিন উল্লেখ করেন।
সিলেটের ঐতিহ্য সিলেটি কমলা উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাস্তবতার নিরিখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, এমনটাই চাওয়া এ এলাকার কমলা চাষিদের।
একে//