শাহীনের জন্য শুভ কামনা
শওগাত আলী সাগর
প্রকাশিত : ০১:৫৫ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০২:১৭ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০১৯ সোমবার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের লড়াইটা ছিলো দ্বিমুখী। না, দ্বিমুখী বললে বোধ হয় ঠিক বলা হবে না। বলতে হবে ত্রিমুখী। এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে ছিলাম। কিন্তু ক্যাম্পাসের ভেতর আমাদের লড়াই করতে হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। এর বাইরে আঞ্চলিকতার বিরুদ্ধেও আমাদের লড়তে হয়েছে। তিনটি ফ্রন্টের লড়াইয়েই আমাদের বন্ধু শাহীন নেতৃত্বে চলে এসেছিলো।
শাহীন মানে মঞ্জুরুল আলম শাহীন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নবীন বরণে পার্টির নতুন শিক্ষার্থীদের মধ্যে শাহীন এবং আমি দুজনেই মঞ্চে উঠে ছিলাম। পরে অবশ্য আমাদের দুজনের পথ ভিন্ন হয়ে গিয়েছিলো। শাহীন সক্রিয় থাকলো দলীয় রাজনীতিতে। আমি দলে সক্রিয় না থেকে লেখালেখি, সাংবাদিকতায় মনোনিবেশ করলাম। আমাদের লড়াইটা কিন্তু একই রইলো, ভিন্ন ফ্রন্টে অভিন্ন লড়াই। শাহীন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট হলো, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হলো, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হলো।
সেই সময়টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেয়া যে কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো- সেটা বর্তমানে বসে অনুধাবন করা কঠিন। শাহীন সেই ঝুঁকিটা নিয়েছিলো। ঝুঁকিটা নিয়েছিলো বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে, শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পরও শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ হতো। তবে সেই যোগাযোগটা হতো ঝগড়া করার জন্য। কোনো লেখা পড়ে পছন্দ না হলে, সরকারের সমালোচনা করেছি বলে মনে হলে- বন্ধু শাহীন অনুযোগে ফেটে পড়তো। বলতো- ‘শেখ হাসিনা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তোমদের উচিৎ শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেয়া, তার পাশে থাকা।
মাঝে মধ্যে ঠাট্টা করে বলতাম- ‘এই যে দলের জন্য বন্ধুর সঙ্গেও অভিমান করো, তাতে তোমার কি লাভ! দল ক্ষমতায় তোমাকে দেখে তো সেটা মনে হয় না।’
শাহীন হে হে হে করে হাসতো। বলতো- ‘সাগর, আপার দিকে তাকাও, তখন আর অন্য কিছু ভাবতে ইচ্ছে করবে না। আমারও করে না। শুধু মনে হয়- আপার পেছনে আছি। থাকতে পারছি। এর চেয়ে বেশি আর কি চাওয়ার আছে!’
গত ক’দিন ধরে ফেসবুকে শাহীনকে নিয়ে বেশ লেখালেখি হচ্ছে। অনেকগুলো লেখাই আমি পড়েছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন- এমন অনেকেই শাহীনকে নিয়ে লিখেছেন। আবার ছাত্রলীগ করতেন না এমন অনেকেও লিখেছেন। কোনো রাজনীতিতেই ছিলো না – এমন কাউকে কাউকেও কলম ধরতে দেখে বিস্মিত হয়েছি। সবার লেখার বক্তব্য একটাই- মঞ্জুরুল আলম শাহীনকে যেনো যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন- সেটা তো যুবলীগের নিজস্ব ব্যাপার। শেখ হাসিনার আশির্বাদ না থাকলে কেউ কি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পারবে! তা হলে ফেসবুকে এইসব লিখে লাভ কি? কাউকে কাউকে জিজ্ঞেসও করেছি। তারা বলেছেন- ‘কিছু না, দলের জন্য, আদর্শের জন্য, এমন নিবেদিত একজনের জন্য শুভ কামনা জানানো আর কি!’।
অনেকেই এভাবে জবাব দিয়েছেন। জবাবটা আমারও পছন্দ হয়েছে।
শুনেছি শাহীন সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছে। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাকে করা হবে কী না- সেটি দলের সম্মেলনই ঠিক করবে। সাংগঠনিক দক্ষতা, রাজনীতির অভিজ্ঞতা, দলের প্রতি, নেতৃত্বের প্রতি, শেখ হাসিনার প্রতি তার যে আস্থা- তাতে তাকে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা না করার তো কোনো কারণই দেখি না।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে আঁকড়ে পরে থাকা, শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে রাজনীতিতে পরে থাকা, আমাদের বন্ধু মঞ্জুরুল আলম শাহীনের জন্য শুভ কামনা রইলো।
লেখক : প্রবাসী সাংবাদিক
এসএ/