হতাশার মাঝেও আশার নাম মোহাম্মদ নাঈম
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:০৬ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার
মোহাম্মদ নাঈম ইন অ্যাকশন
ভারতের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। তবে এই হতাশার মাঝেও একমাত্র আশার আলো হয়ে দেখা দিলেন বাংলাদেশ দলের উদীয়মান ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তিন ম্যাচে একটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ১৪৩ রান নিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ সংগ্রহাক হয়েছেন তরুণ এই ওপেনার।
মূলত এই সিরিজের মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষেক ঘটেছে ২০ বছর বয়সি এ টাইগার ক্রিকেটারের। অভিষেকেই সিরিজের সর্বোচ্চ রান করার বিষয়টি নিজেই ভাবতে পারেননি নাঈম। বিশেষ করে, যে সিরিজে অংশ নিয়েছিলেন রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, শিখর ধাওয়ানসহ সতীর্থ মুশফিকুর-মাহমুদুল্লাহর মত তারকারা। দেশের ভবিষ্যৎ ক্রিকেটের অপার সম্ভাবনা যে মেধাবী এই ক্রিকেটারের মধ্যে লুকিয়ে আছে সেটা বাংলাদেশীদেরও সেভাবে জানা ছিল না।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ২৮ বলে ২৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন নাঈম শেখ। দ্বিতীয় ম্যাচেও ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়ে করেন ৩৩ বলে ৩৬ রান। আর সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচে ৪৮ বলে ৮১ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে তো সিরিজ জয়ের স্বপ্নই দেখাতে শুরু করেছিলেন বাঁহাতি এ ওপেনার।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ান স্বাগতিক পেসার হ্যাটট্রিকম্যান দীপক চাহার। যিনি ৭ বলে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গড়েছেন নতুন এক রেকর্ড। তবুও ইতোমধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছেন নাঈম শেখ।
ধারাবাহিক ব্যাটিং দিয়ে নাঈমের পারফর্মেন্সের ধারাবাহিক উন্নতির এই গ্রাফই বলে দিচ্ছে, এতদিন এই বিষয়টিরই ঘাটতি ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং বিভাগে। আর এটিই বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টকে তৃপ্ত করছে।
সাকিব, তামিমসহ শীর্ষ কয়েকজন খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতির কারণে এই সিরিজে বাংলাদেশ বেশ কয়েকজন তরুণ খেলোয়াড়কে নিয়মিত খেলার সুযোগ দিয়েছিল। এদেরই একজন হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন নাঈম। আর সুযোগ পেয়ে নিজেদের দক্ষতা দেখিয়েছেন লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ও অলরাউন্ডার আফিফ হোসেনও। তবে নাঈমের মধ্যে ছিল ধারাবাহিকতা। যেটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন।
মূলত নাঈমের ব্যাটিংটাই মুগ্ধ করেছে সবাইকে। যা দেখে অনেক সাবেকরাই বলেছেন, ‘বাহ দারুণ’। ম্যাচ চলাকালে ধারাভাষ্য দেয়ার সময় সুনিল গাভাস্কার ও আতাহার আলী খানদের মত সাবেক তারকাদের মুখ থেকেও নাঈমের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা ঝরে পড়তে থাকে। বলেন, ‘বাহ! কি দারুণ শট।’
সিরিজের শেষ ম্যাচে স্বাগতিকদের দাপুটে বোলিংয়ের সামনেই ৪৮ বলের মোকাবেলায় খেলেছেন ৮১ রানের অসাধারণ এক ইনিংস।
নাঈমের এমন ইনিংস প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মামুদুল্লাহ রিয়াদ বলেন, ‘তার ইনিংসটি ছিল মনোমুগ্ধকর। কিন্তু তার ওই অসাধারণ ইনিংসের পরও ম্যাচ জয় করতে না পারাটা খুবই হতাশার। এমন একটি ইনিংসকে কাজে লাগাতে না পারার ব্যর্থতার দায় আমাদের।’
বয়স ভিত্তিক ম্যাচে খেলানোর সুযোগ দিয়ে ম্যানেজমেন্ট যত্ন সহকারে যেসব ক্রিকেটার তৈরী করছে তাদেরই একজন নাঈম শেখ। তবে অন্যদের পথে না হেঁটে নাঈম এর প্রতিদান দেয়াদের একজন হতে চলেছেন।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘নাঈম শেখের রান করার ধরনটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ইতিবাচক। গত দুই বছর ধরে তাকে গড়ে তোলা হচ্ছে। সে হাই পারফর্মেন্সে স্কোয়াডেও ছিল। মেধাবী ক্রিকেটারদের নিয়ে যেটি গড়ে তোলা হয়েছে। তবে সবাই পারফর্মার হতে পারেনি। নাঈম নিজেকে ভাল পারফর্মার হিসেবে গড়ে তুলতে পারছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দুই ম্যাচে সে বড় স্কোর গড়তে পারেনি। কিন্তু শেষ ম্যাচে সে বড় স্কোর করেছে। যার মাধ্যমে সে প্রমাণ করেছে যে, বড় ইনিংস খেলার যোগ্য সে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত রান সংগ্রহ করতে পারাটা বেশ কঠিন। তবে খুব বেশী ঘাম না ঝরিয়েই সে সেটি করতে সক্ষম হয়েছে।’
বাশার বলেন, কঠোর পরিশ্রমই নাঈমকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভাল করতে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, ‘সে যখন হাই পারফর্মেন্স ইউনিটে ছিল, তখন তার কৌশল খুব একটা ভাল ছিল না। কিন্তু সে ওই বাঁধাকে টপকাতে সক্ষম হয়েছে কেবল মাত্র কঠোর পরিশ্রম দিয়ে। যে কারণে আমরা তাকে আস্থায় রাখতে পারছি।’
এদিকে, হাইপারফরম্যান্স ইউনিটের অন্যতম সেরা আবিষ্কার মনে হচ্ছে নাঈমকে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে দুটি ফিফটি ছিল তার। ওই পারফরম্যান্সই তাকে নিয়ে আসে ভারত সফরে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে। তার ওপর রাখা আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন দারুণভাবে।
তবে হাবিবুল গুরুত্ব দিতে চান তার অধ্যবসায়ের দিকটিতেই, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো খবর নাঈমের রান করাটা। সে আমাদের হাই পারফরম্যান্সের খেলোয়াড়। দুই বছর ধরে ওকে তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিভাবান অনেকেই থাকে। কিন্তু পারফরমার সবাই হয় না। নাঈম একজন সত্যিকারের পারফরমার। সে রান করে দেখিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রান করতে বিশেষ ক্ষমতার দরকার হয় সেটা ওর আছে। যদিও মন্তব্যটা একটু তাড়াতাড়িই হয়ে যাচ্ছে। তবে এটা বলতে পারি সে নিজের ব্যাটিংয়ে অনেক পরিবর্তন এনেছে।’
বাশার আরও বলেন, ‘শুরুর দিকে প্রচুর শট খেলত। আড়াআড়ি শটই বেশি খেলত। কিন্তু নিজেকে সে এখন অনেক শুধরেছে। এ বছর ওর কাছ থেকে অনেক নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিং দেখলাম। বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচে সে এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিং করে।’
এনএস/