ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেল দুর্ঘটনায় ৫ তদন্ত কমিটি গঠন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫০ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে রেল দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দুটিসহ পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । দুর্ঘটনার আট ঘন্টা পর লাইন সংস্কার শেষে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ভোর রাতে চট্টগাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্ত:নগর ট্রেন তুর্ণা নিশিতা এবং সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্ত:নগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৬জন। আহত হয়েছেন শতাধিক।

এ ঘটনায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, অর্থমন্ত্রী, আ হ ম মুস্তফা কামাল, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চ্যেধুরীসহ অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, রেল সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এছাড়াও রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১ লাখ করে টাকা এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা সাহায্যের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে দুর্ঘটনায় তূর্ণা নিশিথা এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকো মাস্টার তাছের উদ্দিন, সহকারী লোকো মাস্টার অপু দে এবং ওয়ার্কিং গার্ড আব্দুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে এ ঘটনায় রেল মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব (আইন ও ভূমি) মো. রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ মু. আবুল কালাম, যুগ্ম মহাপরিচালক (অপারেশন), রাশিদা সুলতানা গনি এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মীর আলমগীর হোসেনকে সদস্য করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটি আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন।

একই ভাবে বিভাগীয় প্রধান পর্যায়ের কর্মকর্তাগণের সমন্বয়ে চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (পূর্ব) মো: নাজমুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে, চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (পূর্ব) মো: মিজানুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী, (পূর্ব)মো: সুবক্তগীন এবং চিফ সিগন্যাল এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার (পূর্ব) অসীম কুমার তালুকদার ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি যথাসম্ভব দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন পেশ করবেন।

বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও-চট্টগ্রাম) নাসির উদ্দিনকে আহবায়ক করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সিগন্যাল এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহিদ আরেফিন তন্ময়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মো: হামিদুর রহমান, বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার/লোকো, ফয়েজ আহম্মদ খাঁন (চট্টগ্রাম), বিভাগীয় মেডিক্যাল অফিসার (চট্টগ্রাম) ফাতেমা বেগমকে সদস্য করে গঠিত ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি আগামী ২ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিবেন।

এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি রেলপথ পরিদর্শক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার নিজে পরিদর্শন করে মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন এবং জেলা প্রশাসক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পক্ষ থেকে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো.জাকের হোসেন চৌধুরী জানান, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আন্ত:নগর ট্রেন ঢাকাগামী তুর্ণা নিশিতা মঙ্গলবার ভোর রাত ২টা ৪৮মিনিটে শশীদল রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করে মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনের দিকে এগুতে থাকে। মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশের আগেই আউটারে থামার জন্য লালবাতি জ্বালিয়ে সংকেত দেয়া হয়। অপরদিকে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস কসবা রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ পথে তাকে মেইন লাইন ছেড়ে দিয়ে ১ নম্বর লাইনে আসার সংকেত দেই।

তিনি জানান, ওই ট্রেনের চালক ১ নম্বর লাইনে প্রবেশ করার সময় ছয়টি বগি প্রধান লাইনে থাকতেই অপর দিক থেকে আসা তুর্ণা নিশিতা ট্রেনের চালক সিগনাল (সংকেত) অমান্য করে দ্রুত গতিতে ট্রেন চালাতে শুরু করলে উদয়ন ট্রেনের মাঝামাঝি তিনটি বগির সাথে তূর্ণা নিশিতার ইঞ্জিনের সংঘর্ষ হয়। এতে উদয়ন ট্রেনের তিনটি বগি দুমড়ে মুচড়ে যায়।

নিহতদের পরিচয় জানতে স্থানীয় বায়েক শিক্ষা সদন উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি অস্থায়ী তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের সদস্যরা নিহতদের হাতের আঙুলের ছাপ নিয়ে তাদের পরিচয় শনাক্ত করছেন।

এখন পর্যন্ত নিহতের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে এরা হলেন- হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার মদনমোরাাদ এলাকার আইয়ূব হোসেনের ছেলে আল-আমিন (৩৫), আনোয়ারপুর এলাকার মো. হাসানের ছেলে আলী মো. ইউসূফ (৩৫), চুনারুঘাট উপজেলার পীরেরগাঁও এলাকার সুজন (২৪), চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজাগাঁও এলাকার মজিবুর রহমান (৫০), তার স্ত্রী কুলসুমা (৪২), মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার মুসলিম মিয়ার স্ত্রী জাহেদা বেগম (৪৮), হবিগঞ্জ সদরের ইয়াছিন আরাফাত (১২), নোয়াখালী জেলার বড় মসজিদ পাড়ার সুইপার কলোনীর শংকর হরিধন এর ছেলে রবি হরিধন (২৫), হবিগঞ্জের বানিংয়াচং উপজেলার সোহেল মিয়ার মেয়ে সোহা মনি (৩)।
এদের মধ্যে জাহেদা বেগম (৪৮) ইয়াছিন আরাফাত (১২),আল-আমিন (৩৫) এর লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কে.এম হুমায়ুন কবির বলেন, কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজন মারা গেছে। ২৯জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই-তিনজন ছাড়া বেশীর ভাগই গুরুতর আহত।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন শাহ আলম জানান, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের সদর, কসবা ও আখাউড়া হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১ লাখ করে টাকা এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। এ ছাড়া আহতদের সেবায় জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে থাকবে। বাসস

এসি