পেঁয়াজের ঝাঁজে পুড়ছে দেশ, কাঁপছে ফেসবুকও!
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৩৩ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার
বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি অস্থির হয়ে পড়েছে পেঁয়াজ বাজার। পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দেশের বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে দেশি পিয়াজের সংকট আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে না আসায় দাম বেড়েই চলেছে। যদিও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, শিগগিরই মিশর থেকে পেঁয়াজ এলে দাম ৮০ টাকায় নেমে আসবে।
বিক্রেতারা জানান, দেশি পেঁয়াজের মজুত প্রায় শেষ। বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজও নেই। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলে’ পরিবহনে বিঘ্ন ঘটায় সরবরাহও কমে গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মিয়ানমারের পেঁয়াজ পাইকারি ১৪০ ও খুচরা ১৭০ টাকা, মিশরীয় পেঁয়াজ পাইকারি ১২০ ও খুচরা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী সেখানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭৮ টাকায়। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। উর্দু পয়েন্ট পাকিস্তানের প্রতিবেদন অনুযায়ী সেখানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, দেশি পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহেও ছিল ১১৫ থেকে ১২৫ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা।
গত বৃহস্পতিবার দেশি ৯০, মিয়ানমারের ৮৫ এবং চীন, মিশর ও তুরস্কের পেঁয়াজ ৬০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। শুক্রবার সব আড়ত নির্ধারিত দামে বিক্রি শুরু করে। কিন্তু শনিবার থেকে মজুদদাররা আড়তে পেঁয়াজ দেওয়া কমিয়ে দেয়।
আড়তদাররা অভিযোগ করে বলেন, নির্ধারিত দামে বিক্রি না করলে পেঁয়াজ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয় মজুদদাররা। এ কারণে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, পেঁয়াজের এই ঝাঁজে পুড়ছে ফেসবুকও। সম্প্রতি একটি মুদির দোকানে দেখা যায়, পেঁয়াজের বস্তার ওপরে পলিথিনে প্যাকেট করা চারটি পেঁয়াজ। প্যাকেটের গায়ে লেখা একহালি দেশি পেঁয়াজ ১০ টাকা। যা রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে!
পেঁয়াজের ঝাঁজ এখন ঘুরছে ফেসবুকের পোস্টে পোস্টে। নানা রকম রসাত্মক পোস্টে যেন ভাসছে ফেসবুক।
সেখানে কেউ লিখেছেন- পেঁয়াজ খাবেন, নাকি আপেল? আবার অন্য আরেকজন লিখেছেন- পেঁয়াজ দিয়ে ডিম ভাজা খাবেন, নাকি ডিম দিয়ে পেঁয়াজ ভাজা? কেউবা আবার-মুরগির কেজি ১২৫ টাকা; পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকা লিখে তিরস্কার করছেন।
লুৎফর রহমান হিমেল নামে একজন লিখেছেন, ক্যাসিনোর সিন্ডিকেটের চেয়েও পেঁয়াজ সিন্ডিকেট বোধয় বেশি শক্তিশালী। পেঁয়াজসহ সকল কৃষিপণ্য নিয়ে এই কারসাজি বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাই।
ফয়সাল তিতুমীর লিখেছেন, গেছিলাম সমুদ্রের জল-হাওয়া খাইতে…আরো অনেক কিছুই খাইছি কিন্তু পেঁয়াজ কিনে খাইতে হয় নাই! ঢাকায় ফেরার পর স্ত্রী হাতে ধরায়া দিছে বাজারের ব্যাগ! আর লিস্টে পেঁয়াজ দেখে মন চাইতাছে আবার কক্সবাজার যাইগা! খরচ তো একই!!!
এদিকে পেঁয়াজ নিয়ে বেশ কয়েকটি গ্রুপ পেজও খোলা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- পেঁয়াজ ব্যবসায়ী, পেঁয়াজ ব্যবসায়ী (অসভ্য), পেঁয়াজ কেন কাঁদায় ইত্যাদি।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নামক পেজের এক পোস্টে বলা হয়েছে- বেলা শুনছো❓ আমি পিয়াজের ব্যবসা শুরু করছি? এখন আর আমাদের বিয়ে কেউ আটকাতে পারবে না?
শুধু তাই নয়, এরই মধ্যে পেঁয়াজ নিয়ে তৈরি হয়েছে বেশ কিছু ট্রল ভিডিও। এরমধ্যে ধুম-৩ অবলম্বনে পেঁয়াজ যখন সোনার হরিণ, পেঁয়াজ কম খাও, দেশ বাঁচাও, পেঁয়াজ যুদ্ধ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
তবে সব ছাপিয়ে হালি দরে পেয়াজ বিক্রির একটি পোস্ট জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বেশ। অবশ্য ইতিমধ্যেই সিল্কের শাড়ির সঙ্গে এক কেজি পেঁয়াজ উপহার দিচ্ছে একটি ই-কমার্স সাইট। এ ঘটনাটা কিন্তু সত্যি সত্যি।
এনএস/