ভবিষ্যতে স্তন ক্যান্সার হবে কি না তা জানিয়ে দেবে রক্ত পরীক্ষা!
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৪২ এএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৯ শনিবার
মেয়েরা যত রকম ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তার মধ্যে স্তন ক্যান্সারের হার বেশি। এই হার ইদানিংকালে আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এই রোগ নিয়ে মেয়েরা ভয়ে আছেন। তবে ভবিষ্যতে স্তন ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যাবে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে। অন্তত পাঁচ বছরের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের আশঙ্কা আছে কি না তাও বলে দেবে এই পরীক্ষা।
নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা জানিয়েছেন, রক্ত পরীক্ষাই নির্দিষ্ট করে জানিয়ে দেবে টিউমার কোষের দ্বারা উৎপাদিত পদার্থের প্রতি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক কতটুকু কাজ করবে, আর তা আদৌ ক্যান্সার ঠেকাতে পারবে কি না।
ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলো শরীরে অ্যান্টিজেন (প্রোটিন) তৈরি করে, যা শরীরকে তাদের বিরুদ্ধে কিছু অ্যান্টিবডি (অটোঅ্যান্টিবডি) তৈরি করতে প্ররোচিত করে। এই অ্যান্টিজেনগুলো শরীরে রক্তের মধ্যে সঞ্চালিত হতে থাকে।
গবেষকদের মতে, এই টিউমার অ্যাসোসিয়েটেড অ্যান্টিজেনগুলো (টিএএ) ক্যান্সারের শঙ্কা জানাতে পারে অনেকটাই। অ্যান্টিজেনগুলো যে প্যানেল তৈরি করে, সেগুলো কোনভাবে স্তন ক্যান্সারের সঙ্গে জড়িত কিনা তা রক্ত পরীক্ষায় জানা যাবে। আবার এই রক্ত পরীক্ষাই জানিয়ে দেবে, শরীর থেকে নেওয়া রক্তে কোন অটোঅ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে কি না। এই দুই সূচকের উপর নির্ভর করেই লক্ষণ দেখা দেওয়ার অনেক আগেই শরীরে স্তন ক্যান্সারের উপস্থিতি নির্ণয় করা সম্ভব বলে মত দিয়েছেন গবেষকরা।
পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ৯০ জন স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ও ৯০ জন সুস্থ মানুষের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন গবেষকরা। এই দুই প্রকার রক্তের নমুনা নিয়ে স্ক্রিনিং প্রযুক্তির (প্রোটিন মাইক্রোয়ারে) দ্বারস্থ হন গবেষকরা। তাতে দেখা যায়, স্তন ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত ৪০ টিএএ-র বিরুদ্ধে অটোঅ্যান্টিবডির উপস্থিতির জন্য ক্যান্সার আক্রান্তদের রক্তের নমুনাকে স্বল্প বিরতিতে বার বার পরীক্ষা করতে সক্ষম হচ্ছে এই স্ক্রিনিং প্রযুক্তি। আবার ক্যান্সার আক্রান্ত নয় এমন রক্তের নমুনাকে অত বার পরীক্ষা করার দরকারই পড়ছে না। এর মাধ্যমে প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশ নির্ভুল তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি গ্লাসগোয় আয়োজিত এক সমাবর্তনে স্কুল অব মেডিসিনের ছাত্র আলফাতানির মতে, এই পরীক্ষায় দেখা গেছে টিউমারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অ্যান্টিজেনগুলোর প্যানেলের বিরুদ্ধে শরীর অটোঅ্যান্টিবডিগুলোকে বিক্রিয়া করতে প্ররোচিত করে। এর মাধ্যমেই বোঝা যায় কার রক্তে কতটা অটোঅ্যান্টিবডি রয়েছে অবং কার রক্তে কতটা সফলভাবে তা অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এর ফলে ভবিষ্যতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবে কি না, তা অনেকটা নির্ভুলভাবে বোঝা যায়। যদিও এই পদ্ধতি নিয়ে আরও বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার আছে বলে মনে করেন তিনি।
তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেন কলকাতার খ্যাতনামা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সোমনাথ সরকার বলেন, এই পদ্ধতিতে স্তন ক্যান্সার ছাড়াও ফুসফুসের ক্যান্সার নিরূপণ করাও সহজ হবে। এ নিয়ে সারাবিশ্বে গবেষণা চলছে। এই মুহূর্তে এই ধরনের রক্ত পরীক্ষা কিছুটা ব্যয়সাধ্য হলেও অদূর ভবিষ্যতে যাতে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে আসে তার জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন গবেষকরা।
তিনি আরও বলেছেন, প্রায় ৮৫ শতাংশ নির্ভুল তথ্য এই পরীক্ষার মাধ্যমে মিলছে, তবে এর মাধ্যমে ১০০ শতাংশই নির্ভুল রিপোর্ট দেওয়া যায় কি না তার ব্যবস্থাও করছেন তাঁরা। অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে অটোঅ্যান্টিবডিগুলোর প্রতিক্রিয়া ঠিক কেমন তার উপর নির্ভর করেই এই পরীক্ষার মূল ভিত গড়ে উঠছে।
এএইচ/