আগুনে পুড়ে খোলা আকাশের নিচে ৩০ পরিবার
ব্রাক্ষণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৫:০৮ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৯ শনিবার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় বিল নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটছে ৩০টি পরিবারের। প্রতিপক্ষের লোকজনের দেয়া আগুনে পুড়েছে তাদের ঘর-বাড়ি। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে এখন সর্বশান্ত তারা।
ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার (০২ নভেম্বর) বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামে। ভুক্তভোগী পরিবাররা থানায় মামলা করলেও তা আমলে নেয়নি পুলিশ। পরে ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের দুর্দশার বিষয়টি বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহের নিগারকে লিখিতভাবে জানালেও নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হরষপুর ইউনিয়নের হুগলি বিল নিয়ে স্থানীয় বুল্লা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ফুল ইসলাম ও তার ছেলে বর্তমান ইউপি সদস্য কাউসার আহম্মেদের সঙ্গে একই ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের আবুল কাশেম মেম্বারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল।
প্রশাসন বিলের সীমানা নির্ধারণ না করে উল্টো বিল ইজারা দিলে সেই বিরোধ এক পর্যায়ে চরম আকার ধারণ করে। গত বছরের জুন মাসে স্থানীয় বড় উঠান মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে তিন বছরের জন্য জেলা প্রশাসন তথা জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি ইজারা দেয়।
মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি হীরা লাল দাস ১ লাখ ৫১ হাজার টাকায় ইজারাটি কিনে ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে বুল্লা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ফুল ইসলাম ও তার ছেলে কাউসার আহম্মেদের কাছে বিক্রি করে দেন। তারা বিলের পাশাপাশি গ্রামের কৃষকদের ব্যক্তিগত জমি থেকে মাছ আহরণ শুরু করলে উত্তেজনা দেখা দেয়।
এ নিয়ে ২ নভেম্বর উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। পরদিন ফুল ইসলাম ও কাউসার আহম্মেদের নেতৃত্বে কামালপুর গ্রামে আবুল কাশেমের সমর্থকদের ৩০টি ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ ঘটনার পর থেকে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারগুলো। ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্তরা ইউএনওর কাছে একটি লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু এতে ইউএনও এর পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
কামালপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্তের শিকার ফলেজা খাতুন বলেন, আমরা অসহায় অবস্থায় আছি, বই খাতা পুড়িয়ে ফেলায় ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা করতে পারছে না।
জোসনা বেগম নামে আরেক ক্ষতিগ্রস্ত নারী জানান, তার স্বামী নেই। অন্যের বাড়িতে কাজ করে দুই মেয়েকে নিয়ে কষ্টে দিন কাটে তার। আগুনে তার দুটি ঘরই পুড়ে গেছে। এখন ছাই ছাড়া কিছুই নেই ঘরে। গত ১৪ দিন ধরে আমি ও আমার ২ সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।
হরষপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য সিরাজুল ইসলাম জানান, আগুনে গ্রামের দু’জন এসএসসি পরীক্ষার্থী, চারজন পিইসি পরীক্ষার্থী, চারজন জেএসসি পরীক্ষার্থীসহ তৃতীয় থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীর বইখাতা ও স্কুলের পোশাক পুড়ে গেছে। এ কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল কবির বলেন, আগুনে ঘরবাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগে একটু বাড়িয়ে লেখা হয়েছে সেজন্য মামলা নেওয়া হয়নি, একটু চাপে থাকুক সব ঠিক হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শনিবার (১৬ নভেম্বর) জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন, শিক্ষার্থীদের বই পুড়ে গেছে এবং সামনে তাদের পরীক্ষার কথা শুনে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সেখানে পাঠানো হয়। তারা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বই দিয়ে এসেছেন।
বিল নিয়ে দুটি মামলা চলমান রয়েছে। স্থানীয়রা বসে বিষয়টি সমাধান করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এআই/আরকে