ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

ছবি যেনো শুধু ছবি নয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪০ এএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৯ রবিবার

চিকন একটি গলি। গলির মুখে ঢুকতেই একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি। গলির মধ্যে কিছু মানুষের কর্মব্যস্ততা। দুদিকে সারি সারি দালানকোঠা। বিভিন্ন রঙের এই দালানগুলোর সামনে অসংখ্য তারের ছড়াছড়ি। নিচে ছোট ছোট দোকান।

দেখে স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে এটি কোনো ফটোগ্রাফারের নিখুঁত ফটোগ্রাফী। আবার অনেকে দ্বিধায় ভুগছেন এটি আসলে ফটোগ্রাফ নাকি পেইন্টিং। এমনই একটি ছবি অয়েল কালার-এ ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী।

ক’দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক থেকে শুরু করে টুইটার, ইউটিউব ও গণমাধ্যমে বেশ আলোচনার সৃষ্টি করেছে ছবিটি। শুধু দেশেই নয়, জায়গা পেয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও। ছবিটি নিয়ে চলছে নানান ধর্মী বিশ্লেষণ।

আলোচনার মূল কারণ এর আশ্চর্য ডিটেইলিং!

 তৈলচিত্রটির প্রতি মানুষের মুগ্ধতাই বেশি। অনেকেই বিমোহিত হয়ে চিত্রকর্মটিকে ‘লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা’র সঙ্গে তুলনা করছেন। প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন এর কারিগরকে। এটি যে পরিশ্রমী এবং দক্ষ হাতের অনবদ্য কাজ তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

এদিকে, চিত্রটির মুগ্ধতায় ভার্চুয়াল দুনিয়া সরব হলেও অনেকে বিশ্বাস করতে না পেরে সমালোচনা করছেন। তাদের অনেকে তুলনা টেনে বলছেন, হাতের লেখা অপূর্ব আশ্চর্য সুন্দর হতেই পারে, সেই লেখা কবিতা হয়ে যাবে এমন তো নয়। তবে সমালোচকদের সংখ্যা নিতান্তই কম।

পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারকে উপজীব্য করে এই সুনিপুন চিত্রটি এঁকেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী হেলাল শাহ। চিত্রকর্মটি অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগ আয়োজিত বার্ষিক চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর তেলচিত্র বিভাগে ‘মিডিয়া বেস্ট অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছে।

চলতি মাসের ৭-১২ তারিখ পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যেই ছবিটি আঁকেন হেলাল শাহ। রং তুলি আর ক্যানভাসের সেই গল্প তুলে ধরেছেন গণমাধ্যমের সামনে।  

গত অক্টোবরের শুরুর দিকে ছবিটি আঁকা শুরু করেন হেলাল শাহ্। চারুকলার ছাত্র হিসেবে আঁকাআঁকি তার নিয়মিত কাজ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বার্ষিক প্রদর্শনীর জন্য তিনি এই ছবি আঁকার কাজে হাত দেন।

এর আগে তিনি শাঁখারী বাজারে গিয়ে স্থান নির্বাচন করেন। সেখানে সারাদিন অবস্থান করে যে দৃশ্যটি তিনি ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে চান তার ছবি তুলে আনেন। কোন সময়ের দৃশ্য বাছাই করা হবে নির্ভর করে সেখানে প্রতিফলিত আলোর উপর।

ছবি তোলার পর দৃশ্যটি ক্যানভাসে স্কেচ করেন। তারপর রং তুলিতে আঁকতে শুরু করেন। ৫ ফুট আনুভূমিক ও ৪ ফুট উল্লম্ব ক্যানভাসে তেল রং ব্যবহার করে চিত্রকর্মটি সম্পন্ন করেন তিনি।

পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারকে নির্বাচন করা প্রসঙ্গে হেলাল শাহ বলেন, ‘বিভিন্ন কাজে শাঁখারী বাজার এলাকায় প্রায়ই যেতে হয়। সেই থেকেই জায়গাটি নির্বাচন করেছি। ছবির দৃশ্য নির্বাচন করা হয় কয়েকটি বিষয়ের উপর লক্ষ্য রেখে- আলোছায়া, রং এবং বস্তুর কম্পোজিশন। আমি জায়গাটি নির্বাচন করেছি এখানকার আলো দেখে।’

এবারই প্রথম নয়, গত বছরও বার্ষিক প্রদর্শনীতে তিনি পেয়েছিলেন ‘মিডিয়া বেস্ট অ্যাওয়ার্ড’। গত বছর তার চিত্রকর্মের বিষয়বস্তু ছিল লঞ্চঘাট। সেটিও আঁকা হয়েছিল তেলরঙে।

এবারের পুরস্কার প্রাপ্তি প্রসঙ্গে হেলাল বলেন, ‘একান্ত ভালো লাগা থেকেই ছবি আঁকি। ছবিটি নিখুঁত করে তোলার জন্য আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তবে সবাই যেভাবে বলছে এতখানি আমি আশা করিনি।’

চারুকলা বিভাগের অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল বলেন, ‘এটি প্রশংসা পাওয়ার মতই একটি কাজ। সে বেশ সময় নিয়ে কাজটি করেছে। তার কাজ সবসময়ই নিখুঁত হয়।’

এআই/