টেস্ট খেলার ইচ্ছাই নেই ক্রিকেটারদের!
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৩৪ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৯ রবিবার
তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে মাহমুদুল্লাহ এভাবেই আউট হন দু`বার
"কোনও সন্দেহ নেই দলের কাঠামোগত বদল আনতে হবে। না হলে ফল একই হতে থাকবে। নির্বাচকদের সঙ্গে বসে সামনে এগোনোর পথ খুঁজে বের করতে হবে।" এ কথাগুলো বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর।
বাংলাদেশের টেস্ট দলের কাঠামোগত পরিবর্তন আনাটা অতীব জরুরী বলেই মানছেন টাইগারদের নতুন কোচ। সেই লক্ষ্যে একদম নতুন দল গঠনেরই ইঙ্গিত দিলেন ডোমিঙ্গো।
তিনি মনে করছেন, যদি নতুন আঙ্গিকে নতুন ক্রিকেটারদের নিয়ে দল গঠন করা যায়। তাহলে এখন যেমনটা ফলাফল আসছে তার চেয়ে খুব বেশি খারাপ হবে না।
কোচ বলেন, "আমাকে চিহ্নিত করতে হবে কোন কোন খেলোয়াড় দলকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবে। যদি আমাদের নতুন মুখ নিয়ে এগোতে হয়, কিছুটা সময় ভুগতে হয়, আমার মনে হয় বর্তমানে যা হচ্ছে সেটির চেয়ে খারাপ কিছু হবে না।" ঠিক কী ধরণের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন সেটা একটু দেখার চেষ্টা করেছি।
মাজহারুল ইসলাম মিঠুন নামের বাংলাদেশের একজন টেলিভিশন সাংবাদিক বিবিসিকে জানান, "বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘাটতি হচ্ছে- মনোবলের অভাব। টেস্ট ক্রিকেটে যে মানসিকতা নিয়ে খেলতে নামা প্রয়োজন সেই একাগ্রতা দেখা যায়নি।"
মাঠে খেলার মধ্যে জয়ের জন্য খেলা, আর হার মেনে নিয়ে খেলার একটা ব্যাপার থাকে। মি: মিঠুন মনে করেন বাংলাদেশ লড়াইই করেনি। তিনি বলেন, "শুরু থেকেই মনে হয়েছে, একটা ব্যাকফুটে পড়ে থাকা দল খেলতে নেমেছে। যাদের আদতে টেস্ট খেলার ইচ্ছাই নেই।"
মাঠে একটা দলের সাথে একটা দলের শক্তিমত্তার পার্থক্য থাকাটা ধ্রুব কিন্তু সেটার জন্য যদি হেরে যাওয়ার মানসিকতা নিয়ে নামা হয় সেটা ক্রিকেটের জন্য মঙ্গলজনক নয় মনে করেন তিনি। এমনকি বাংলাদেশের ক্রিকেট দলকে অনেকটাই দিকনির্দেশনাহীন বলে মনে করছেন মাজহারুল ইসলাম মিঠুন।
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য যদি কেউ শুনে থাকেন, সেখানে স্পষ্টতই একটা বোঝাপড়ার অভাব দেখা যায়। দলের পরিকল্পনা, দলের লক্ষ্য সম্পর্কে খুব কমই ধারণা দিতে পেরেছেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক।
রাসেল ডোমিঙ্গোর সংবাদ সম্মেলনের সূত্র ধরে ঠিক কী ধরণের পরিবর্তন চান তিনি? এমন প্রশ্নের জবাবে মি. মিঠুন বলেন, "কারা টেস্ট খেলতে চায় বা কারা খেলতে চায় না, টেস্ট নিয়ে কারা ভাবেন। এই ধরণের ক্রিকেটার প্রয়োজন বলছেন ডোমিঙ্গো। হয়তো টেস্ট খেলার অনাগ্রহ দেখিয়েছেন ক্রিকেটাররা।"
ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেটের কাঠামো ও ক্রিকেটারদের প্রবণতার পরিবর্তন করতে চান ডোমিঙ্গো। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের যে সংস্কৃতি এখানে যারা কোচ হিসেবে আসেন, তাদের পরামর্শ বা দিকনির্দেশনা তেমন আমলে নেয়া হয় না ক্রিকেট বোর্ডে।
মাজহারুল ইসলাম মিঠুন বলেন, "বোর্ডের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে, এখন বিষয়গুলো অন্যভাবে দেখা হবে, ডোমিঙ্গো কী বলছেন সেটা ব্যাপার না। এই কাজগুলো আজ হোক কাল হোক করতে হবেই।"
তিনি বলেন, "এখানে মধ্য প্রদেশের এক ক্রিকেট কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ভারতের এই এক নম্বর হওয়ার রহস্য টের পেলাম, দল নির্বাচনে স্বচ্ছতা, প্রত্যেক ব্যক্তির জবাবদিহিতা ও যথাযথ উইকেট তৈরি।"
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্নভাবে ফাস্ট বোলিং, বাউন্সি ও স্পিনবান্ধব সব রকমের উইকেট তৈরি করা হয়েছে যাতে রঞ্জি ট্রফি খেলার সময়ই বিভিন্ন দেশের বৈচিত্র্যময় উইকেটে খেলার ধরণগুলো রপ্ত করতে পারেন ব্যাটসম্যানরা ও বোলাররা।
ভারতের জাতীয় দল থেকে কেউ বাদ পড়লে, বা নতুন করে দলে ঢুকলে সংবাদ সম্মেলনে বেশ স্বচ্ছ ও সাবলীল উপায়ে জানিয়ে দেয়া হয় যে ঠিক কী কারণে এই সংযুক্তি বা অব্যহতি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে যখন দল ঘোষণা করা হয় তখন শিভাম দুবেকে নেয় ভারত। তৎক্ষণাত জানিয়েও দেয়া হয়েছিল যে বোলিং এর পাশাপাশি দ্রুত রান নেয়ার দক্ষতার কারণেই শিভাম দুবেকে নেয়া হয়েছিল।
২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের করুন নায়ার একটি ত্রিশতক হাঁকান। ভারতের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এক ইনিংসে তিনশ রান তোলেন তিনি। এর আগে ভিরেন্দর সেহওয়াগ এই কাজ করেন।
কিন্তু এই তিনশ করার ৪ ইনিংস পরেই তাকে দল থেকে বাদ দেয়া হয় ও আজিঙ্কা রাহানেকে দলে ফেরত আনা হয়। মূলত আজিঙ্কা রাহানের চোটের কারণেই দলে সুযোগ পেয়েছিলেন নায়ার।
নির্বাচকরা এখানে তার ওই এক ইনিংস দিয়ে ভাবেননি, লম্বা পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই আজিঙ্কা রাহানে দলে ফিরেছেন এবং নিয়মিত রান করেছেন। এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটের টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের পাঁচ নম্বরে আছেন রাহানে।
এক থেকে দশের মধ্যে আছেন চারজন ভারতীয় ক্রিকেটার- বিরাট কোহলি, চেতেশ্বর পুজারা, আজিঙ্কা রাহানে ও রোহিত শর্মা।
খুব দ্রুতই মায়াঙ্ক আগারওয়ালও এই তালিকায় জায়গা করে নেবেন। ২০১৮ সালে অভিষেক হওয়া আগারওয়াল এখন পর্যন্ত মাত্র ৮টি টেস্ট খেলে ৮৫৮ রান তুলেছেন। ৩টি শতক লেখা তার নামের পাশে, যার মধ্যে দুটিই দ্বিশতক।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলের মধ্যে আদতে খুব বেশি পার্থক্য নেই। মূলত নানা সময় ক্রিকেটারদের একটি বা দুটি ইনিংস দেখেই প্রভাবিত হওয়ার বিষয়টিও লক্ষ্য করা গেছে।
যেমন ইমরুল কায়েসের ক্ষেত্রে ভারত সফরে হয়েছে। জাতীয় লিগে সম্প্রতি ইমরুল কায়েস একটি দ্বিশতক হাকান। এরপরই তাকে দলে নেয়া হয়েছে তৎক্ষণাৎ।
অনেক সময়ই কোনও একটি নির্দিষ্ট সিরিজ বা সফরে খুব ভালো খেললে লম্বা সময়ের জন্য জাতীয় দলে টিকে যান ক্রিকেটাররা। যেমন মেহেদি হাসান মিরাজ, ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে 'ইউটিলিটি' ক্রিকেটারের ভূমিকা পালন করলেও টেস্ট ক্রিকেটে ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক সিরিজ ছাড়া তেমন ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি।
২০১০ সালে প্রথম শতক হাঁকানোর পর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তার দ্বিতীয় টেস্ট শতক হাঁকান আট বছর পর, ২০১৮ সালে। বোলিংয়েও ভূমিকা না রাখা ক্রিকেটার হিসেবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে দীর্ঘদিন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির পারফরম্যান্স বিবেচনা করে টেস্ট দলেও নিয়মিত জায়গা দেয়া হয়েছে।
নতুন ক্রিকেটারদের সাধারণত অনুকূল পরিবেশে অভিষেক করানো হয়। যাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারেন। যেমন ভারতের ওপেনার পৃথ্বীকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৮ সালে ঘরের মাটি রাজকোটে 'ব্রেক' দেয় ম্যানেজমেন্ট।
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার নাজমুল হোসেন শান্তকে অভিষেক করানো হয় নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। যেখানে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের জন্য স্বাভাবিক খেলা বেশ কঠিন।
সুতরাং টিম ম্যানেজমেন্ট এবং বিসিবিকে টেস্টকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে গভীরভাবে। দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তাহলে টেস্টেও জেগে উঠবে বাংলাদেশ, জয় পাবে নিয়মিতই।
এনএস/