বাংলাদেশ-ভারতের ঐতিহাসিক ‘গোলাপী টেস্ট’ সমাচার
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:০২ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার
কলকাতার ইডেন গার্ডেনে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গোলাপী বলের ঐতিহাসিক দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচ। যে ম্যাচকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে শুরু হয়েছে সাজ সাজ রব। গোলাপী আলোতে ঢেকে ফেলা হয়েছে ইডেনের আশপাশের বিভিন্ন পার্ক ও স্থাপনা।
২০১৫ সালে প্রথম দিন-রাতের টেস্ট খেলা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে, অ্যাডিলেডে। চার বছর পর এক নম্বর টেস্ট দল ভারতের বিপক্ষে দিন-রাতের এ টেস্ট খেলতে নামছে নয় নম্বর টেস্ট খেলুড়ে দল বাংলাদেশ।
এর আগে ২০১২ সালেই দিন-রাতের টেস্টের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। কিন্তু টেস্টে প্রথম গোলাপী বল মাঠে নামাতে সময় লেগে যায় তিন বছর।
এদিকে, ভারত-বাংলাদেশ ঐতিহাসিক দিবা-রাত্রির টেস্ট ম্যাচ উপলক্ষে গোলাপী আলোয় সেজেছে কলকাতার ইডেন গার্ডেনস।
ক্রিকেটের ইতিহাসে ১২তম গোলাপী বলের ক্রিকেট খেলতে শুক্রবারই মাঠে নামছে ভারত ও বাংলাদেশ। এই ম্যাচ ঘিরে বেশ কিছু তথ্য জেনে নিন:
- কলকাতার ইডেন গার্ডেনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম দিন-রাতের টেস্ট আয়োজন করতে চলেছে ভারত।
- ম্যাচে টস হবে গোল্ড কয়েনে। খেলা শুরু হবে দুপুর ১টা থেকে, শেষ হবে রাত ৮টায় (ভারতীয় সময়)।
- ম্যাচে প্রথম বিরতি হবে দুপুর ৩টায়, দ্বিতীয় সেশন শুরু হবে ৩টা ৪০ মিনিটে। দ্বিতীয় বিরতি দেয়া হবে বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে এবং ফাইনাল সেশন শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়।
- ম্যাচটি খেলা হবে গোলাপী এসজি বলে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এসজিকে ৭২টি বল বানানোর অর্ডার দিয়েছিল এ ম্যাচের জন্য।
- ম্যাচের দিন সেনাবাহিনীর প্যারাট্রুপার উড়ে এসে ঠিক টসের আগে দুই অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও মুমিনুল হকের হাতে তুলে দেবে গোলাপী বল।
- ইডেনের বাইরে জায়ান্ট গোলাপী বেলুন লাগানো হয়েছে যা থাকবে ম্যাচের শেষ পর্যন্ত।
- শহীদ মিনারের আলোর রঙও গোলাপি করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কলকাতার বেশ কিছু পার্ককেও গোলাপী আলোতে সাজানো হয়েছে।
- ভারত-বাংলাদেশ প্রথম দিন-রাতের টেস্টের দুই অফিশিয়াল ম্যাসকট পিঙ্কু ও টিঙ্কু।
- শহরজুড়ে বিলবোর্ড, ছয়টি এলইডি বোর্ড, ব্র্যান্ডেড বাস গত সোমবার থেকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
- প্রথম তিন দিনের ৬৫ হাজার করে টিকিট ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে।
সমালোচনা:
এদিকে, ইডেনে ঐতিহাসিক এই গোলাপি বলের টেস্ট খেলতে নামার আগে আলোড়ন তুলেছে কিছু প্রশ্ন। যেসব প্রশ্ন নিয়ে প্রকাশ্যে না হলেও ভেতরে ভেতরে বইছে সমালোচনার ঝড়।
আলোচ্য বিষয়টি হচ্ছে- কোনও প্রকার প্রস্তুতি ছাড়াই হুট করে গোলাপি টেস্টে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ব্যাপকভাবে না হলেও মোটামুটি অভ্যস্ত হয়েই নামছে স্বাগতিক ভারত দল। এ নিয়ে সামনে এসেছে অস্ট্রেলিয়ায় গোলাপি বলে টেস্ট খেলার প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া নিয়ে বিরাট কোহলি বক্তব্য।
সে সময় অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাব পেয়ে কোহলি বলেন, ‘বিমানে ওঠার দুই দিন আগে হুট করে একটা দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলতে বললে তো আমরা খেলব না’। কিন্তু এবার বাংলাদেশের বাস্তবতাও ঠিক একইরকম।
অনেকটা আচমকাই দিন-রাতের টেস্ট খেলতে প্রস্তাব দেয় ভারত। সেবার অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবে ভারত প্রত্যাখান করলেও এবার ভারতের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সম্মতির কথা জানায় দল দেশ ছাড়ার আগের সন্ধ্যায়!
সেবার কোহলিদের ভাবনাটা ছিল পরিষ্কার। গোলাপি বলে টেস্ট খেলার আগে অবশ্যই প্রস্তুতি ম্যাচ থাকা উচিত। অনুশীলনের যথেষ্ট সময়ও থাকতে হবে। ভারত অধিনায়ক তুলে ধরেছিলেন সেই যুক্তিগুলো। এবার বাংলাদেশেরও নেই কোনও প্রস্তুতি ম্যাচ। অনুশীলনের সুযোগ তো মাত্র কয়েকদিন। তবু গোলাপি বলের চ্যালেঞ্জে নেমে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শুক্রবার শুরু হচ্ছে বহু আলোচিত সেই টেস্ট।
গত বছর অস্ট্রেলিয়া সফরে অ্যাডিলেড টেস্ট গোলাপি বলে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিল ভারত। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার পেছনে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা গোলাপি বলের স্বাদ পেতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত এটা হচ্ছে। তবে হঠাৎ করে একটা সফরের আগ মুহূর্তে সূচিতে একটা গোলাপি বলের টেস্ট যুক্ত হতে পারে না।
এর আগে নিউজিল্যান্ডও ২০১৯ সালের সফরে বাংলাদেশকে একটি দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি বিসিবি। কারণ হিসেবে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেছিলেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে দিবা-রাত্রির প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে প্রস্তুতি নেয়ার পরই কেবল গোলাপি বলে খেলবে বাংলাদেশ।
এরপর যদিও দীর্ঘসময় পার হলেও বাংলাদেশে ঘরোয়া ক্রিকেটে এখনও বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে দিবা-রাত্রির কোনও ম্যাচই হয়নি। এরপরও ভারতে খেলতে রাজি হয়ে গেছে বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে কোহলি ফিরে গেলেন সেই সময়ে। তুলনা করলেন এখনকার বাস্তবতা, ‘সে সময়ে আমরা গোলাপি বলে কোনও অনুশীলনই করিনি। প্রথম শ্রেণির কোনও ম্যাচও খেলিনি। গোলাপি বলে টেস্টের অভিজ্ঞতা আমরা প্রথম নিতে চেয়েছিলাম নিজেদের কন্ডিশনে। বল কিভাবে আচরণ করে, এগুলো যাতে বুঝতে পারা যায়। কিন্তু এটি হুট করে হতে পারে না।’
চলমান এ ভারত সফরের জন্য বাংলাদেশ দল বিমানে ওঠে গত ৩০ অক্টোবর। আর এর আগের দিন বিসিবি জানায়, সফরে থাকছে দিবা-রাত্রির একটি টেস্ট। অথচ গত ২৬ অক্টোবরেই গণমাধ্যমে খবর আসে যে দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলতে রাজি কোহলিরা। আর ২৭ তারিখে বিসিবি জানায়, ভারত সফরে দিবা-রাত্রির একটি ম্যাচের প্রস্তাব এসেছে, যা নিয়ে ভাবছেন তারা।
অর্থাৎ কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই ভারতে খেলতে যায় বাংলাদেশ। এ নিয়ে কোহলি বলেন, বিমানের ওঠার স্রেফ দুই দিন আগে, এক সপ্তাহের মধ্যে গোলাপি বলে একটি টেস্ট খেলার কথা বললে তো হবে না। সেদিক থেকে অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাব আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়নি।
ভারত অধিনায়ক আরও বলেন, দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলার জন্য কিছুটা প্রস্তুতি প্রয়োজন। অভ্যস্ত হয়ে গেলে খেলতে কোনও অসুবিধা নেই। আরও ভালোভাবে খেলা যায়। আগে থেকে পরিকল্পনা করা যায়। তখন ওটা আমাদের কাছে তাৎক্ষণিক একটা প্রস্তাব মনে হয়েছিল। আমার মনে হয়, কোনও পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে যথেষ্ট সময় দেয়া প্রয়োজন। এরপর আমরা যে কোনও কিছু করতে প্রস্তুত।
তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে নামার আগে নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে কোহলি জানান, বাংলাদেশের এবারের সফরে একটি দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই ভাবছিলেন তারা। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। তিনিসহ দলের বেশ কয়েকজন সিরিজ শুরুর আগেই গোলাপি বলে অনুশীলন শুরু করেছিল।
সুতরাং প্রস্তুত ভারতের সামনে প্রায় অপ্রস্তুত একটি দল নিয়ে নামতে যাচ্ছেন মুমিনুল হক। ভারতের ১০ খেলোয়াড়ের আছে গোলাপী বলে খেলার অভিজ্ঞতা। চেতেশ্বর পুজারার আছে ডাবল সেঞ্চুরি, কুলদীপ যাদবের আছে ম্যাচে ১০ উইকেট। এবারের আগে টানা তিন আসরে দুলীপ ট্রফিতে দিবা-রাত্রির প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছে ভারত। অথচ, বাংলাদেশের এই দলের কারোর নেই গোলাপি বলে ম্যাচ তো দূরে থাক, বল সম্পর্কেও নেই ন্যূনতম অভিজ্ঞতা!
এদিকে, প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ সফরে ভারতে যাওয়া বাংলাদেশ দল পায়নি কোনও প্রস্তুতি ম্যাচ। এ প্রসঙ্গে কোহলি মনে করেন, লাল ও গোলাপি বলে টেস্ট থাকলে দুই বলেই অন্তত একটি করে প্রস্তুতি ম্যাচ থাকা উচিত। এমনকি, দুই টেস্টের মাঝে যথেষ্ট বিরতি থাকার দিকেও গুরুত্ব দেন ভারত অধিনায়ক।
এনএস/