ইতিহাসের সাক্ষী হতে কলকাতায় বাংলাদেশিদের ভিড়
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৫৯ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০১৯ শুক্রবার
ইডেনের ইতিহাসে ভারত-বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচ। তার উপরে গোলাপি বলে খেলা। ময়দান চত্বরে তো বটেই, কলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায় মার্কারির নিয়ন আলোও যেন ঢাকা পড়েছে গোলাপি আভায়।
শহরের সব চেয়ে উঁচু তিনটি বহুতলের রং তো বদলেছেই, শহীদ মিনারের শরীর থেকে যেন গড়িয়ে পড়ছে গোলাপি রং। দেখা গেল, নতুন এই দৃশ্য মোবাইলে তুলে রাখতে শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসেছেন ম্যাচের আগের বিকালে।
এরই মধ্যে গোলাপি বল হাতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ-ভারত। বাংলাদেশ সময় দুপুরে দেড়টায় উঠেছে গোলাপি আলোর পর্দা। টাইগারদের এ ঐতিহাসিক ম্যাচে সাক্ষী হতে কলকাতায় হাজির হয়েছেন হাজারো বাঙালি।
দিনরাতের এ টেস্ট দেখতে কত দর্শক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসেছেন? কেউ বলছেন ছয় হাজার, কারও হিসাবে সংখ্যাটা দশ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়েছে, সংখ্যাটা বলা সম্ভব নয়। তাদের কাছে কোনও নির্দিষ্ট হিসাব নেই।
কিন্তু শহরে বাংলাদেশের থাকার হোটেলগুলো বলে পরিচিত সদর স্ট্রিট, মার্কো স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের পঁচিশটি হোটেল ও গেস্ট হাউসে ঢুঁ মেরে দেখা গেল, কোথাও কোনও হোটেল খালি নেই।
এমনিতেই সারা বছর চিকিৎসা বা নানা প্রয়োজনে কলকাতায় যান বাংলাদেশিরা। তাদের প্রায় সবারই জায়গা হয় সদর-মার্কো স্ট্রিট অঞ্চলে। সে রকমই একজন ফরিদপুরের মহম্মদ মানিক এসেছেন স্ত্রী-র চিকিৎসা করাতে।
গত দু’দিনের চেষ্টায় একদিনের একটা টিকিট জোগাড় করেছেন দ্বিগুণ টাকা দিয়ে। তিনি বলেন, স্ত্রী সুস্থ হয়ে উঠেছে। আবার কবে এ দেশে আসবো বলতে পারছি না। আমি ক্রিকেট ভালবাসি। সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাই না। এক হাজার টাকা দিয়ে একদিনের টিকিট কেটেছি। খেলা দেখে তারপর দেশে ফিরে যাবো।
এ রকম নানা কাজে কলকাতায় আসা বাংলাদেশিরা টিকিটের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
বন্ধু ও পরিবার নিয়ে শহরে পৌঁছে ঢাকার বস্ত্র ব্যবসায়ী ফারুক চৌধুরী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দমদম বিমানবন্দরে নেমে প্রচণ্ড বিপদে পড়েছেন। হাতে ম্যাচ দেখার টিকিট রয়েছে। অথচ ইডেনের কাছাকাছি অঞ্চলে কোনও হোটেলে বেশি ভাড়া দিয়েও জায়গা পাচ্ছেন না।
ধর্মতলার পাঁচ তারা হোটেল থেকে সদর স্ট্রিটের গেস্ট হাউস-কোথাও জায়গা পাননি তিনি। ময়দানের এক পরিচিত ব্যক্তিকে ধরেছেন, একটা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে। এ বাংলাদেশি বলেন, ঢাকায় বসে শুনেছি কলকাতা নাকি গোলাপি হয়ে গিয়েছে। সেই উত্তেজনার আঁচ নিতেই ইডেনের কাছে হোটেল খুঁজছি।
বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হকের শশুর আবু জুবায়েল রানা এসেছেন খেলা দেখতে। তিনি ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন গোলাপি আলোর মালায় সেজে ওঠা গ্র্যান্ড হোটেলের সামনের রাস্তা।
ম্যাচের আগের সন্ধ্যায় তিনি মোহরকুঞ্জ থেকে গঙ্গার পাড়ের গোলাপি আলোর আভা দেখেই ফিরবেন হোটেলে। তিনি বলছিলেন, গোলাপি বলের দিনরাতের টেস্ট তো কখনও দেখিনি। সেটা দেখতেই আসা।
বাংলাদেশের বাঁ-হাতি ওপেনার ইমরুল কায়েসের ভাই মোহাম্মদ আরিফ কায়েসকে পাওয়া গেল মার্কো স্ট্রিটের একটি হোটেলে। দুপুরের খাওয়া সেরে ভাইয়ের কাছে টিকিট আনতে যাবেন। মেহেরপুর থেকে এসেছেন তিনি। বন্ধু মানিক শীলকে নিয়ে বিকালে যাবেন বাংলাদেশের টিম হোটেলে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেক ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছি। কিন্তু গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্ট দেখিনি কখনও। দশ দিন আগে ভিসা পেয়েছি। আজই কলকাতায় এসেছি ট্রেনে-বাসে করে। আগে থেকে অগ্রিম দিয়ে হোটেলের ঘর বলে রেখেছিলাম বলে সমস্যা হয়নি।
মুহম্মদ আরিফ আগে কখনো ইডেন দেখেননি। তবে তার বন্ধু মানিক দু’বার ইডেনে খেলা দেখেছেন। আরিফ বলেন, গোলাপি বলে খেলা কী রকম, তা দেখতে চাই। পাশাপাশি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইডেনে ঘণ্টা বাজিয়ে খেলা শুরু করছেন, এটাও তো আমাদের কাছে গর্বের ব্যাপার।
দেশের জন্য গলা ফাটাতে শরীরে সবুজ-লাল পতকা জড়িয়ে দেশের জন্য গলা ফাটাবেন বলে ঠিক করেছেন দু’জনেই। দল জিতবে এটা না বললেও দু’জনেই বললেন, খেলাটা জমবে।
সূত্রঃ আনন্দবাজার
এআই/