ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ১০ ১৪৩১

সালিশে দুই নারীর ওপর নির্যাতন

৯ বছরেও মেলেনি বিচার (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:১৩ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৩:৪৮ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০১৯ সোমবার

বহুল আলোচিত রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর কাশিবাড়ি গ্রামের সেই হ্যাপি বেগম ও শাহিদা বেগমের কাহিনী এখনও শেষ হয়নি। অপবাদ দিয়ে সালিশের নামে হাজার হাজার মানুষের সামনে হাত-পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করার সেই নিষ্ঠুর ঘটনার দীর্ঘ নয় বছরেও বিচার হয়নি। নয় বছর ধরে মাসের পর মাস আদালতে আসছে আর ফিরে যাচ্ছে নির্যাতিতা নারী হ্যাপি বেগম। শুধু তাই নয় দীর্ঘ নয় বছর ধরে ঘটনার মূল হোতা ইউপি চেয়ারম্যান আয়নাল ও তার লোকজন এক ঘরে করে রেখেছে হ্যাপি বেগমসহ পুরো পরিবারকে।

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এত বছরেও বিচার শেষ না হওয়া অবহেলারই নামান্তর। একইসঙ্গে একঘরে করে রাখার সাথে জড়িতদের ফৌজদারী মামলায় শাস্তি দাবি করেন তারা।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৬ জুন তারিখে রংপুরের বদরগজ্ঞ উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আয়নাল হক রাজারামপুর গ্রামের দুই নারী হ্যাপি বেগম ও শাহিদা বেগমকে নষ্টা মেয়ে অপবাদ দিয়ে স্থানীয় একটি লিচু বাগানে সালিশ ডাকে। সেখানে মাইকিং করে হাজার হাজার লোক জড়ো করে সালিশের নামে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে দুই নারীকে চেয়ারম্যান আয়নাল হকের নির্দেশে হাত-পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করে। বিশেষ করে হ্যাপি বেগমকে লাঠি দিয়ে চোরের মতো পায়ের তলায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে অকথ্য নির্যাতন করা হয়। হ্যাপি বেগম দুবার জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আবার তাদের শরীরে পানি ঢেলে জ্ঞান ফিরিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। তার চুল কেটে দেয়া হয়। এই নির্যাতনের দৃশ্যের ভিডিও চিত্রসহ ছবি দৈনিক সংবাদসহ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। এ দৃশ্য দেখে দেশে-বিদেশে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। পরে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বাদী হয়ে বদরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে।

পরে র‌্যাব মামলার প্রধান আসামি ইউপি চেয়ারম্যান আয়নালকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে। মামলার অন্যান্য আসামি কারাগারে আটক থাকার পর সবাই জামিনে বেরিয়ে আসে। চাঞ্চল্যকর এই মামলাটিতে আয়নাল চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে ৫৭ জনের নামে পুলিশ চার্জশিট দাখিল করে। বর্তমানে মামলাটি রংপুর নারী শিশু নির্যাতন দমন আদালত ২ এ বিচারাধীন আছে। দীর্ঘ ৯ বছরেও মামলার বাদী হ্যাপি বেগমের আংশিক সাক্ষ্য গ্রহণ করা ছাড়া মামলার বিচার হচ্ছে না। বরং প্রধান আসামি আয়নাল দীর্ঘ দিন ধরে আদালতে হাজির হয় না। এদিকে অব্যাহত হুমকির পরেও মামলা তুলে না নেয়ায় দীর্ঘ নয় বছর ধরে এক ঘরে করে রাখা হয়েছে হ্যাপি বেগমের পুরো পরিবারকে। তাদের বাড়িতে আশপাশের কাউকে যেতে দেয়া হয় না, কেউ তাদের কাজে নেয় না-ফলে অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর দিন কাটছে তাদের। হ্যাপি বেগমের আর্তনাদ বিচার পাবার আকুতি করেও বিচার পাচ্ছে না সে।

এ বিষয়ে হ্যাপি বেগম জানান, দীর্ঘ নয় বছর ধরে আমি সাক্ষী নিয়ে আসি আর ঘুরে যাই। আমার মামলার বিচার হয় না।

তিনি আরও জানান, মামলার প্রধান আসামি আয়নাল হক দীর্ঘ দিন ধরে আদালতে হাজির হয় না, তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরেও বদরগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। এ ছাড়াও মামলার বেশিরভাগ আসামি তারিখে আদালতে হাজিরার দিন আসে না। আবেদন করে সময়ের। এভাবেই নয় বছর কেটে গেলেও মামলার বিচার শুরুই হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠক এমএ বাশার অ্যাডভোকেট জানান, হ্যাপি বেগমের মামলার বিচারের বাণী যেন নীরবে নিভৃতে কাঁদে-তা না হলে দীর্ঘ নয় বছরেও বহুল আলোচিত এই মামলার বিচার শুরু হলো না। নয় মাস নয়, কেন নয় বছর তাহলে হ্যাপি বেগমের মতো অসহায় নির্যাতিত নারীরা ন্যায় বিচার থেকে এভাবে বঞ্চিত হবে?

তিনি দ্রুত মামলার বিচার শেষ করার দাবি জানান।

বর্তমানে সব আসামীই এখন জামিনে রয়েছেন।সাক্ষীদের হুমকি দেয়ায় তারাও আদালতে আসতে পারছে না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, এত বছরেও বিচার শেষ না হওয়া দুখজনক।

একঘরে করে রাখার আইনী ভিত্তি নেই, জড়িতদের ফৌজদারী মামলার শাস্তি দাবি করেন তারা।

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে এ ধরনের মামলা দ্রুত বিচার শেষ করার তাগিদ তাদের।

আরও উল্লেখ্য যে, এই সংবাদ একুশে টেলিভিশনে প্রচার হলে দেশে বিদেশে শুরু হয় তোলপাড়।

এসএ/